একজন মানুষের জীবনে যত কিছু আছে, যত কিছু তার দ্বারা অর্জন করা সম্ভব, তার মধ্যে যদি প্রথম স্থান বলা হয়, সেটা হচ্ছে প্রজ্ঞা। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে এই প্রজ্ঞা। আপনার সোনার প্রাসাদ ‘ছাই’ হয়ে যেতে পারে। আপনার বাবা-দাদা আপনার জন্যে যে সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন তা নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি প্রজ্ঞা থাকে, তাহলে ‘ছাই’কেই আপনি সোনায় রূপান্তরিত করতে পারবেন। ছাই থেকেই আপনি সোনা বের করে নিয়ে আসতে পারবেন। যদি প্রজ্ঞা থাকে তাহলে জীবনের যে-কোনো বিপর্যয়, যে-কোনো দুর্ভোগ থেকে আপনি বেরিয়ে আসতে পারবেন। যদি প্রজ্ঞা থাকে তাহলে আপনি আপনার হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
কিন্তু যদি প্রজ্ঞা না থাকে তাহলে ‘ছাই’ ‘ছাই’ থেকে যাবে। আপনার সোনাদানা অন্যরা ভোগ করবে। আপনার অর্থবিত্ত অন্যের হাতে চলে যাবে। কীভাবে চলে যাবে, চলে যাওয়ার পরে আপনি টের পাবেন। চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি বুঝতেই পারবেন না যে চলে যাচ্ছে।
যদি প্রজ্ঞা না থাকে তাহলে আপনি বাইরের চাকচিক্য দ্বারা প্রভাবিত হবেন। ভেতরটাকে কখনো বুঝতে পারবেন না, ভেতরটাকে কখনো দেখতে পারবেন না। আপনি মেকাপটাকেই আসল মানুষ মনে করবেন। মেকাপ করা মানুষ এবং আসল মানুষের মধ্যে কিন্তু তফাত আছে। সিনেমাতে যখন মেকাপ করা হয়, আসলে তিনি সুন্দরী না অসুন্দরী এটা সিনেমার মেকাপ দিয়ে বোঝা যাবে না!
আমাদের এক পরিচিতজন এক মহিলাকে বিয়ে করে ফেললেন। দেখেই… মানে প্রথম দেখতে গিয়েছেন তিনি দেখেই বিয়ের সিদ্ধান্ত। আর কোনো খোঁজখবর কিচ্ছু না। বললেন যে এত সুন্দরী! যেদিন বিয়ে হলো সেদিনও মুগ্ধ সৌন্দর্য দেখে। কিন্তু যখন বাসরঘরে যাওয়ার সময় হলো, যখন মেকাপটা তুলে ফেলা হলো উনি চিনতেই পারছেন না কাকে বিয়ে করেছেন এবং সামনে কাকে দেখছেন! পরদিন সকালবেলা তার প্রথম সিদ্ধান্ত ডিভোর্স!
উনি যদি প্রাজ্ঞ হতেন, তাহলে শুধু দেখে মুগ্ধ হতেন না। কারণ যখন কাউকে দেখানো হয়, তখন তাকে সাজিয়ে গুজিয়ে দেখানো হয়। যে জিনিসগুলো দেখালে ক্ষতি হতে পারে, সে জিনিসগুলোকে খুব সুকৌশলে এড়ানো হয়।
পরে জানা গেল, দেখানোর দিন তাকে মেকাপ করার জন্যে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছিল শুধু চেহারাটুকুর। বিয়ের দিনও তাই। এর মাঝেখানে তাদের আর কোনো দেখা হয় নাই। আজকাল তো অনেক দেখা, অনেক কথা অনেক কিছু হয়। এর মাঝখান থেকে মেয়ে পক্ষ আর তাকে কোনোভাবেই… তাকে দেখার কোনো সুযোগ ছিল না।
আসলে আপনার যদি প্রজ্ঞা থাকে, তাহলে আপনি শুধু মেকাপ করা রূপ না, মেকাপ ছাড়া রূপটাকেও বুঝতে পারবেন। যদি আপনার প্রজ্ঞা থাকে, তাহলে গ্ল্যামার দ্বারা চাকচিক্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আপনি ভুল করবেন না। আসল ভেতরের সন্ধানটাকে আপনি নিতে পারবেন।
প্রজ্ঞা এমন এক শক্তি, এমন এক জ্ঞান যা সত্যিকার অর্থেই একজন মানুষের পুনর্জন্ম ঘটায়। সেই পুনর্জাগরণ অন্যরাও টের পায় না যতক্ষণ না তা প্রকাশিত হয়, বিকাশমান হয়।
[প্রজ্ঞা জালালি, ০৩ জুলাই, ২০১৯]