ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, কবে শুরু হবে নেই তার কোনো লক্ষণ/আলামত-
শিক্ষার্থীদের হতোদ্যম হয়ে লেখাপড়ার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলাটা-ই কিন্তু স্বাভাবিক!
একটি চলন্ত গাড়ি যখন পুরোপুরি থেমে যায় তখন কিন্তু এটাকে ঝট করে আগের গতিতে ফেরানো যায় না, সময় লাগে।
তেমনি ইন-পারসন ক্লাস থেকে দশ মাসাধিক বঞ্চিত আছে যে ছেলেমেয়েরা ক্লাস শুরু হওয়ামাত্র তারা আগের মতো গতিতে পড়ালেখা করবে, পরীক্ষা দেবে- এই প্রত্যাশা অযৌক্তিক।
অতএব, আপনার সন্তানকে শুরুতেই বেশি চাপ দেবেন না, পড়ালেখা নিয়ে বেশি কঠোর হবেন না। তাকে শিক্ষণ প্রক্রিয়ার সাথে মানিয়ে নিতে সময় দিন।
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে যে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে, সেখানেও এই বিষয়টিকে বিবেচনায় আনা হয়েছে।
ক্লাস শুরুর ১/২ সপ্তাহ একাডেমিক পড়ালেখার বদলে খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রথম দুই মাসের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা না নেয়ার কথা বলা হয়েছে এতে।
আর এর সবগুলো করা সহজ হবে ক্লাস যখন পুরোপুরি চালু হবে।
কারণ আর দশটা সমবয়সীর সাথে একত্রে ক্লাস মেলামেশা কথোপকথন আর খেলাধুলা-
আপনার সন্তানের জন্যে এগুলোই হলো স্বাভাবিক!
একই কথা প্রযোজ্য দৈনন্দিন রুটিনের ক্ষেত্রেও
শুরুতেই কঠোর না হয়ে সন্তানকে সময় দিতে হবে অভ্যস্ত হতে
আর রুটিনে ফেরাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে পরিবারকে
পরিবারে থেকেই সন্তান নিয়মতান্ত্রিক জীবনে যেন অভ্যস্ত থাকে বাবা মাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে
তবে এর জন্যে স্কুল খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই!
জীবনের ছন্দ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে এখনই সন্তানকে দৈনন্দিন কাজের একটি রুটিন করে দিন
রাতে ঠিক সময়ে ঘুমানো, সকালে সময়মত ওঠা, সময়মতো খাবার গ্রহণ, ধর্মীয় প্রার্থনা, বাড়ির কাজে সাহায্য করা- আপাতত এগুলোই রাখুন কার্যতালিকায়।
পড়াশুনার জন্যও একটা সময় বেঁধে দিতে হবে। আর সন্তানের স্কুল টাইম মাথায় রাখুন
স্কুলে খোলা থাকলে যে সময় ঘুম থেকে উঠতে হতো, স্কুল থেকে ফিরে সে সময় খাবার গ্রহণ করতো- এসব মাথায় রেখে এখন থেকে প্রাত্যহিক কর্মপরিকল্পনা সাজান
এতে স্কুল খোলের আগেই ধীরে ধীরে সন্তান অভ্যস্ত হয়ে উঠবে এবং নতুন স্কুল জীবনের সাথেও মানিয়ে নেওয়া তার পক্ষে সহজ হবে
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থী সহায়তা সংস্থা Northwest Evaluation Association এর সমীক্ষায় দেখা গেছে-
গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় দেশটির থার্ড গ্রেডের শিক্ষার্থীরা পড়ায় ২০% এবং গণিতে ২৭% অর্জন খুইয়ে ফেলে যা সে এর আগে করেছিল। নবম গ্রেডের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে ৩৯% ও ৫০%।
যুক্তরাষ্ট্রে একে বলে ‘সামার স্লাইড’।
গ্রীষ্মকালীন ছুটির মাত্র কয়েক সপ্তাহেই যদি শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় এরকম বিরূপ প্রভাব পড়ে তাহলে মহামারির অজুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই দীর্ঘ বন্ধ কতটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করেছে!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর দে হিসাব করে দেখিয়েছেন, দৈনিক গড়ে চার শ্রেণিঘণ্টা হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাস্তরে অধ্যয়নরত প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর প্রতিদিন প্রায় ১৮ কোটি শ্রেণিঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে।
তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কেবল শিক্ষাঘন্টার হিসাবে বোঝানো সম্ভব নয়। এর প্রভাব আরো দূরপ্রসারি।
আমাদের দেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া পরস্পর এমনভাবে সংযুক্ত, যে এক পর্যায়ে ঘাটতির প্রভাব পড়ে অন্য স্তরে।
যেমন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যে ক্ষতি হচ্ছে সেটা প্রভাব ফেলবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়ায়। আর, মাধ্যমিকের ঘাটতির প্রভাব পড়বে উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উভয় পর্যায়েই।
এখন এর সমাধানকল্পে সরকারি নীতিমালা বা স্কুল কর্তৃপক্ষ যা করবেন তা অনুসরণের পাশাপাশি অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা যা করতে পারেন – পাঠ্যবইটি যেহেতু তাদের কাছেই আছে স্কুলে না যাওয়ার এই সময়গুলোতে তা নিজেদের মতো করেই আয়ত্ত করা, পড়া। একটা গল্পের বই বা একটা মুভি যেমন আমরা নিজেদের উদ্যোগেই পড়ি বা দেখি, সেভাবে এই নতুন শেখার বিষয়টিকেও ভাবতে হবে একটি প্রয়োজনীয় করণীয়।
একটানা এত লম্বা সময় ক্লাস না হওয়া স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে কখনো হয় নি
ফলে পড়ালেখার সেট ময়দান থেকে দূরে থাকার জীবনে তাদের অভ্যস্ত হতে যেমন বেগ পেতে হয়েছে তেমনি সেট হয়ে যাওয়ার পর আবার নতুন করে ক্লাস পড়ালেখা পরীক্ষা- সন্তানের জন্যে মানসিক চাপের কারণ হওয়াটাই স্বাভাবিক
নতুন এই শুরুটাকে স্বস্তিকর করতেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার গাইডলাইনে এগুলোকে নিরাপদ ও আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে
যেখানে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে মেডিটেশনের।
কাজেই আপনার সন্তানকে এখন থেকেই বাসায় নিয়মিত দুই বেলা মেডিটেশনে উদ্বুদ্ধ করুন।
সপরিবারে আসুন সাদাকায়নে।
আপনার সন্তান আগামীর সম্পদ। তার সম্ভাবনা বিকাশে এই মুহূর্তে মেডিটেশনের কোনো বিকল্প নেই