1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

বাঁচতে হলে মিলতে হবে

  • সময় সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১
  • ৯৩০ বার দেখা হয়েছে

বাঁচতে হলে মিলতে হবে

পৃথিবীটাকে বদলানো চাই। বদলানোর কাজে সবচেয়ে কার্যকর ও উপকারী অস্ত্র হচ্ছে জ্ঞান। জ্ঞানই পারে শক্তি জোগাতে, ক্ষমতা দিতে। আজ সেই জ্ঞান খুব বেশি দরকার, যে বলে দেবে একা কেউ বাঁচতে পারে না, বাঁচতে হলে মিলতে হবে। জ্ঞানের চর্চা বিলাসিতা নয়, সে হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয়। তার চর্চাই পারে মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে এবং মুক্তির জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে। জ্ঞানের এই চর্চা মানুষের সভ্যতা করেছে, সেখানেই তার গৌরব ও চরিতার্থতা। জ্ঞানের এই চর্চা অব্যাহত থাকা চাই।

করোনা পুঁজিবাদের ফসল ও প্রতিনিধি। ব্যক্তিকে সে একমাত্র সত্য করে তুলতে চায় সমষ্টিকে ভুলিয়ে দিয়ে। মানুষের সঙ্গে পুঁজিবাদের যে স্থায়ী শত্রুতা, তারই সর্বশেষ ও বিশ্বব্যাপী প্রকাশ ঘটেছে করোনার এই আক্রমণে। আগের দুই যুদ্ধের তুলনায় সে নিঃশব্দ, কিন্তু অনেক বেশি বিস্তৃত। এর আক্রমণে শুধু মানুষ না, বিশ্বব্যাপী মনুষ্যত্বই বিপন্ন হয়েছে। মানুষের সভ্যতার যত অর্জন সব কিছুকে নাকচ করে দিয়ে করোনা মানুষকে তার আদিম অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে।

আদিমকালের মানুষের ভেতরেও পারস্পরিক সহমর্মিতা এবং প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল; এই মহামারি সেই দুই গুণকেও মুছে ফেলে দিতে চায়। বলে তুমি ঘরে থাকো, গুহায় ঢোকো। তুমি তোমার সামাজিক সত্তাটাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেল, কারো দিকে কোনোদিকে তাকিয়ো না; অন্যরা প্রত্যেকেই তোমার শত্রু, তোমার জন্যে তারা বিপদ বহন করছে। আত্মীয় নেই, স্বজন নেই, প্রত্যেকেই তার নিজের তরে।

কিন্তু মানুষের সভ্যতা তো গুহাবাসী নয়, ছিল না কখনো, হবে না কখনো; হলে অনিবার্য তার মৃত্যু ঘটবে। সভ্যতা চায় মানুষ সামাজিক হোক, একত্র হোক, বিশ্বজুড়ে হাত ধরাধরি করে চলুক একে অপরের। সভ্যতার আকাঙ্ক্ষা রোগের আন্তর্জাতিকতা নয়, স্বাস্থ্যের আন্তর্জাতিকতা। এটা তো জানাই আছে যে রোগের সংক্রমণ খুবই সহজ, স্বাস্থ্যের বিস্তার অত্যন্ত দুরূহ। মানুষের সভ্যতা সহজের নয়, দুরূহের সাধনাই করে। করোনার কাজটা ঠিক উল্টো। করোনা হচ্ছে বিধ্বংসী, সভ্যতা সৃজনশীল। করোনা বিচ্ছিন্ন করে, সভ্যতা করে সংলগ্ন। পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, সভ্যতা ও করোনা পরস্পর বিরুদ্ধ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।

করোনা সামাজিক দূরত্ব তৈরি করছে। করোনাকে এবং তার উৎপত্তিস্থলকে বিনষ্ট করতে হলে সমষ্টিগত উদ্যোগ দরকার। এই উপলব্ধিটা আজ জেগে উঠছে প্রতিটি দেশে এবং সারা বিশ্বে। বলাই বাহুল্য, সেই উপলব্ধিটাই হচ্ছে মানবজাতির প্রধান ভরসা। মানুষে মানুষে এবং মানুষে প্রকৃতিতে মৈত্রী যদি এগোয়, তাহলেই সভ্যতা এগোবে, নইলে প্রলয় অনিবার্য।

বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাস মানুষের সৃষ্টি নয়, প্রকৃতি থেকে এসেছে। মানুষ একে সৃষ্টি করে নি ঠিকই; কিন্তু কিছু মানুষের পুঁজিবাদী তৎপরতাই তাকে তৈরি করে দিয়েছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের নিপীড়নের ফল হলো এই রোগ।

ভুললে চলবে না যে, করোনাভাইরাস একটি রোগ বটে। ১০০ বছর আগে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে প্রাণঘাতী ফ্লুর যে তাণ্ডব দেখা দিয়েছিল, এর তৎপরতা তার চেয়েও বেশি বিশ্বব্যস্ত। এই ভয়াবহ রোগ আরো বেশি ভয়ংকর একটি রোগ থেকে উত্কীর্ণ। সেই রোগের নাম পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদ মুনাফা চেনে, মনুষ্যত্ব চেনে না।

পুঁজিবাদ ভোগবিলাসিতাকে অতিমাত্রায় পছন্দ করে। প্রত্যাখ্যান করে সংবেদনশীলতাকে। তার নৃশংসতা প্রকাশ পায় প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতার। একদিকে সে সবকিছুকে পণ্যে পরিণত করে, অন্যদিকে সভ্য করার ভান করে চর্চা চালায় আদিম বর্বরতায়। আদিমকালেও মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্কের ভেতরে যে সংবেদনশীলতা ছিল, পুঁজিবাদ তাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চায়। একসময়ে তার ভূমিকা ছিল প্রগতিশীল। কিন্তু করোনাভাইরাস উপহার দিয়ে প্রমাণ করে দিল যে, পুঁজিবাদ নিজেই একটি ব্যাধি।

লেখক

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
শিক্ষাবিদ, লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com