ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন। গত ছয় মাসে তৈরি পোশাক খাতের শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে। বন্ধের আশঙ্কায় রয়েছে আরো কিছু কারখানা৷ তা সত্ত্বেও আশার কথা- সার্বিকভাবে রপ্তানি আয় বাড়ছে৷
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “বিভিন্ন কারণে জেলায় ৫১টি শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।” ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুর মিলিয়ে ৬৮টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ। এ ছাড়া আগামী মে মাস থেকে ছয়টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কেয়া গ্রুপ। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের।
বর্তমান সরকার খেলাপি ঋণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় অনেক কারখানা খেলাপি হয়ে পড়েছেন এবং এ কারণে কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে ৷ আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক কারখানার মালিক আত্মগোপনে থাকায় বেশ কিছু কারখানা রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া কিছু কারখানা উৎপাদন-ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না ।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন(বিকেএমইএ)-র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “বন্ধ তো কেবল শুরু। আরো কারখানা বন্ধ হবে। ব্যাংকগুলো আমাদের সঙ্গে যা করছে, তাতে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা কঠিন। পাশাপাশি বায়াররা আমাদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ করছেন। কাঁচামাল ফ্যাক্টরিতে আনার পর বায়াররা অর্ডার বাতিল করছেন। আবার ডেলিভারি নেওয়ার অনেকদিন পর পেমেন্ট দিচ্ছেন। এতে অনেক ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানা এমন সমস্যায় পড়ে যা থেকে তারা পুনরুদ্ধার করতে পারে না। আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেটা যদি হয়, তাহলে আমাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”
সার্বিকভাবে রপ্তানি আয় বাড়লেও পোশাকের ব্যবসায় ব্যবসায়ীদের মুনাফা বা আয় বাড়েনি। বায়ারদের লিডটাইম পূরণ করতে অনেক মালিককে সাম্প্রতিককালে বাধ্য হয়ে অর্ডারের পোশাক এয়ার ফ্রেইটের মাধ্যমে নিজস্ব খরচে পাঠাতে হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। খেলাপি ঋণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় অনেক কারখানা খেলাপি হয়ে পড়ছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গেও তাল মেলাতে পারছে না কিছু কারখানা।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কত কারখানা বন্ধ হয়েছে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে বর্তমানে যে চিত্র তা ভয়াবহ। সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া দরকার, সেগুলো নেওয়া হচ্ছে না। আমরা বলেছি, প্রতিষ্ঠানের মালিক যেই হোন না কেন অন্তত প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখার চেষ্টা করুন। সেটাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে দিন।
শ্রম অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। কারখানা বন্ধ ও বেকার শ্রমিকদের বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, “রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কোনো কারখানা শ্রমিকের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট না দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও তা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। চাকরি হারানো শ্রমিকদের একটি তালিকা করে তাদের দক্ষতা অনুযায়ী অন্য শিল্পে কর্মসংস্থানের উদ্যোগও নিতে পারে সরকার।”
সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই একের পর এক কারখানা বন্ধ হতে থাকে। গ্যাস সরবরাহজনিত সমস্যা, ব্যাংক থেকে সহায়তার অভাব ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। নিটওয়্যার, টেক্সটাইল ও অন্যান্য খাতের বন্ধ কারখানার সংখ্যা যদি হিসাব করা হয় তাহলে চাকরি হারানো শ্রমিকের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে।