যে বাবার ওপর নির্ভর করে, বাবা প্রতিষ্ঠিত করে দেবে আশা করে সে তো বাঘ না। সে বিড়ালও না। সে ইঁদুর। অবশ্য তার দোষ নেই। ছোটবেলা থেকে তাকে সঠিক জীবনদৃষ্টি দেয়া হয় নি। জীবন কী, এটা বুঝতে দেয়া হয় নি। তাকে যেভাবে লালন করা উচিত ছিল সেভাবে হয় নি।
আজকে আপনার ভাইয়ের অবস্থার জন্যে আপনার ভাই যতটা দায়ী, আপনার বাবা-মায়ের দায়িত্বও কোনো অংশে কম নয়। কারণ একজনকে বড় স্কুলে, বড় কলেজে বা বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেই মা-বাবার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।
অস্ট্রেলিয়া থেকে সে এমবিএ করেছে কিন্তু ন্যূনতম যে মানবীয় গুণ অর্জন করা উচিত ছিল, সেটুকু করে নি। কারণ ছেলে যা চেয়েছে তা-ই দেয়া হয়েছে। শুধু বাবা যখন বুঝেছে এই ফ্যাক্টরি ছেলেকে দিলে সে চালাতে পারবে না, তখন ফ্যাক্টরি দেয় নি। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আসলে সন্তানকে সঠিক জীবনদৃষ্টি দিতে হয় ছোটবেলা থেকেই। তাকে বোঝাতে হবে যে, তোমাকে এভাবে চলতে হবে। তাহলে তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। অর্থাৎ তাকে পরিশ্রমী ও কষ্টনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে হয়। একটা পাকা বাঁশ আর সোজা করা যায় না, কাঁচা থাকতেই সেটিকে যা করার করতে হয়। এখন তাকে মনোচিকিৎসকের কাছেই পাঠানো প্রয়োজন।
আসলে প্রত্যেকটা শিশু হচ্ছে সোনা। এখন এই সোনাকে যদি আপনি তুলে রাখেন, মখমলের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন, এটা কোনোদিন অলংকার হবে না। সোনাকে যদি অলংকার করতে হয়, তাহলে এটাকে আগুনে পোড়াতে হবে, পেটাতে হবে। পোড়াই এবং পেটাই যত সূক্ষ্ম হবে তত অলংকার সুন্দর হবে। আপনার সন্তান তখনই সফল মানুষ হবে যখন ছোট থাকতেই তাকে সঠিক জীবনদৃষ্টি ও পরিশ্রম করার সুযোগ দেবেন।
প্রত্যেক সফল মানুষ স্বাবলম্বী, সাহসী এবং পরিশ্রমী ছিলেন। রসুল (স)-এর জীবন দেখুন। মা-বাবা হারানো, কৈশোরে নিজ উদ্যোগে মেষ চরানো, নিজের দায়িত্ব নিজে পালন, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা-যাত্রা—সব মিলিয়ে কত পরিশ্রমের জীবন, কত সফল জীবন।
আসলে লেবু টিপে রস বের করতে হয়, সরিষা পিষে তেল বের করতে হয়, ধান মাড়াই করে চাল বের করতে হয়। যদি মনে করেন লেবুকে কষ্ট দেবো না, সরিষা পিষব না, ধানকে কষ্ট দেবো না, তাহলে লেবুর রস খেতে পারবেন না, সরিষার তেল কিংবা ভাতও খেতে পারবেন না। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষের সুপ্ত যোগ্যতা বিকশিত হয়।