পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিকিৎসা-ব্যয়
ফাস্টফুডের বিকাশের সাথে সমান তালে বাড়ছে স্থূলতা। আর যে-কোনো শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে স্থূলতার হার অনেক বেশি। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৬০-এর দশকে স্থূলতার যে হার ছিল সেটা এখন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। আর শিশুদের ক্ষেত্রে এ হার ১৯৭০-এর চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ শিশুদের মধ্যে স্থূলতার হার প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বাড়ছে আরো দ্রুত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে আমেরিকানরাই একমাত্র জাতি যারা এত দ্রুত এত মোটা হয়েছে। সিডিসি-র সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকার প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে লিঙ্গ বর্ণ বয়স শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে গণহারে সবার মধ্যে স্থূলতা বাড়ছে। ১৯৯১-এ ১৫% বা তার বেশি স্থূলতার হার ছিল মাত্র চারটি অঙ্গরাজ্যে। আর বর্তমানে এ সংখ্যা ৩৭টি অঙ্গরাজ্য ছাড়িয়ে গেছে।
স্থূলতার এমন হঠাৎ-বৃদ্ধির পেছনে কোনো জিনগত কারণ নেই। আমেরিকানদের জিন গত কয়েক দশকে রাতারাতি পাল্টেও যায় নি। পাল্টেছে তাদের খাওয়া এবং জীবনযাত্রার ধরন। কমেছে শারীরিক পরিশ্রম, বেড়েছে খাদ্যতালিকায় চর্বিজাত ও উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবারের পরিমাণ। আর এসব খাবার সব জায়গায় এমন সহজলভ্য ও সুলভ হয়েছে ফাস্টফুড-শিল্পের আগ্রাসী বিকাশের ফলে।
ফাস্টফুডের প্রায় অপরিহার্য অংশ কোমল পানীয়ের উত্থান দেখলেই এর বিকাশ বোঝা যায়। গত চার দশকে কোমল পানীয় গ্রহণের পরিমাণ ওখানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারগুণেরও বেশি। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর খাবার প্রচলনের একাধিক উদ্যোগ কয়েকবারই ব্যর্থ হয়েছে।
এর মূল কারণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকায় ফ্যাটের পরিমাণ কম। আর ছোটবেলা থেকেই ফ্যাটযুক্ত খাবারে রুচি ও আগ্রহ তৈরি হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে সেটি ত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়ে বৈকি।
সিডিসি-র ধারণা অনুযায়ী, স্থূলতা থেকে সৃষ্ট নানা শারীরিক সমস্যা মোকাবেলায় আমেরিকানরা প্রতিবছর ব্যয় করে প্রায় ২৪ হাজার কোটি ডলার। হৃদরোগ, কোলন (মলাশয়) ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, স্ট্রোক, এমনকি বন্ধ্যাত্বের সাথে মেদস্থূলতার সম্পর্ক রয়েছে।
১৯৯৯ সালে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, অতিরিক্ত ওজনধারীদের মধ্যে প্রি-ম্যাচিউর ডেথ বা অকালমৃত্যুর হার অনেক বেশি। স্বাভাবিক ওজনধারীদের তুলনায় সেটি হতে পারে দ্বিগুণ থেকে চারগুণ পর্যন্ত বেশি।
স্থূলতার ‘মহামারি’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দেশে। বিস্ময়কর ব্যাপার, সত্তরের দশকের গোড়ায় আমেরিকার চেইন ফাস্টফুড শপ ম্যাকডোনাল্ডস জাপানে তাদের শাখা চালু করে, তারপর জাপানিদের অবস্থাও হতে শুরু করে আমেরিকানদের মতোই।
পরবর্তী এক দশক না পেরোতেই জাপানে ফাস্টফুড খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণ-এ। সেইসাথে দ্বিগুণ হয়ে যায় শিশুদের স্থূলতার হারও। কারণ, ফাস্টফুড একবার খাওয়া শুরু করলে ছাড়া কঠিন। দিন দিন বাড়তেই থাকে এর আসক্তি। প্রমাণ খোদ আমেরিকানরাই। ফাস্টফুডের পেছনে ১৯৭০ সালে তাদের খরচ ছিল ছয়শ কোটি ডলার। ২০০১ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার কোটি ডলারে।