1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

বৌদ্ধ বিহার থেকে কসমো স্কুল, তারপর মেডিকেল কলেজ

  • সময় শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ বার দেখা হয়েছে

বৌদ্ধ বিহার থেকে কসমো স্কুল, তারপর মেডিকেল কলেজ

উজ্জ্বল কান্তি চাকমা

এমবিবিএস শিক্ষার্থী, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ
আমার বাড়ি রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলার বালিশ পাড়া গ্রামে। আমরা সাত ভাইবোন। আর আমি তাদের মধ্যে ষষ্ঠ। মা-বাবার বয়স হয়েছে। ভগবানের কৃপায় তারা এখনো আছেন। ছোটবেলায় আমি জুরাছড়ির একটা বিহারে লেখাপড়া করতাম। আমার পারিবারিক অবস্থা ভালো না বলেই বিহারে ভান্তেদের সেবাযত্ন করে আমার থাকা-খাওয়া ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা হতো। সেখানকার একটি প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ি।

একদিন আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক স্যার ডেকে বললেন, তুমি কোয়ান্টামে চলে যাও। তোমার কোনো খরচ দেয়া লাগবে না। ভালোমতো পড়ালেখা করতে পারবে। ঐখানে পড়ালেখার মান অনেক ভালো।

স্যার কোয়ান্টাম সম্পর্কে জেনেছিলেন সুমন্ত দাদার কাছে। সুমন্ত দাদা রাঙ্গামাটির একজন সাংবাদিক। আমাকে সুমন্ত দাদার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো। তিনিই আমাকে কোয়ান্টামে নিয়ে আসেন। প্রথমে গ্রামের স্কুল থেকে আমাকে ছাড়তে চায় নি, ভেবেছিল আমি পড়ালেখা একেবারেই ছেড়ে দিচ্ছি। পরে কোয়ান্টামে ভর্তির শর্তে স্কুল থেকে ছাড় পেয়েছি।

কোয়ান্টামে কী হয় বা সেখানে কী করে কিছুই জানতাম না। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল যে, ভালো কিছু করতেই হবে। একটু ভরসা পাচ্ছিলাম। কারণ আমাদের এলাকা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী নিশান চাকমা তখন কোয়ান্টামে অধ্যয়নরত। তারা একটু আপত্তি করলেও আমার কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে ভর্তি হওয়ার অনেক ইচ্ছা ছিল। অচেনা একটা জায়গায় পাঠাতে মা-বাবা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু আমাকে তো পড়ালেখা করতেই হবে। তাই মা-বাবার সংশয়কে উপেক্ষা করে আমি কোয়ান্টামে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

ভালো কিছু একটা হবে এই বিশ্বাস নিয়ে আমি সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে। প্রথমদিকে একটু খারাপ লাগত। তবে একমাসের মধ্যেই সবার সাথে একটা বন্ধুত্ব করে ফেলি। যে-কোনো বিষয়ে সহপাঠীরা অনেক সাহায্য করত। কিছু না বুঝলে বুঝিয়ে দিত। স্যার-ম্যাডামরা অনেক যত্ন সহকারে পড়াতেন।

এই স্কুলের নিয়মনীতি অনেক। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়ে যেত। অবশ্য কয়েক মাসের মধ্যেই সবকিছু মানিয়ে নিয়েছিলাম। কিছুদিন পর থেকে ভালো রেজাল্ট হওয়া শুরু হলো। এরপর এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। কলেজে প্রথম বর্ষে আমার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রতি আগ্রহ ছিল। কিন্তু একদিন বায়োলজি স্যার আমাকে অনেক উৎসাহ দিলেন। তারপর থেকে বায়োলজি ভালো লাগতে শুরু করল। তখন থেকেই আমি মেডিকেলের প্রতি একটা টান অনুভব করলাম। মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।

আমি কোয়ান্টামে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিলাম। এই সাত বছর নানা আনন্দে অতিবাহিত হয়েছে। এখন মনে হয় সাত বছর খুব দ্রুত চলে গেছে। নির্দিষ্ট একটা রুটিনের মধ্যে ছিলাম বলেই এমন মনে হয়।

বর্তমানে আমি রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে পড়ছি। কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের স্যার-ম্যাডামরা আন্তরিকতা ও আগ্রহের সাথে আমাকে যত্ন করে পড়িয়েছেন বলেই আজ আমি নিজেকে একজন মেডিকেলের শিক্ষার্থী বলতে পারছি। অ্যাডমিশনের প্রস্তুতির সময় আমি সিনিয়র কোয়ান্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লেংঙি ভাইয়ের কাছে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এছাড়াও লালসেপঠা ভাই এবং রনি ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমার সহপাঠীরাও সাহায্য করেছে। সবার আশীর্বাদেই আমি আমাদের এলাকা থেকে প্রথম মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছি।

আর মেডিটেশন বরাবরই অনেক উপকারী। আমাদের মধ্যে অনেক রাগ-ক্ষোভ জমে থাকে, যা সবসময় ক্ষতিকর। ‘রাগ-ক্ষোভ’ মেডিটেশন করে আমি অনেক রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এই নিয়ন্ত্রণ আমার ক্ষেত্রে অনেক কাজে লেগেছে। ‘কল্পনা’ মেডিটেশন আমার মনছবি পরিষ্কার করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। সর্বোপরি কোয়ান্টাম মেথড কোর্স আমার জীবনে নতুন এক পথ সৃষ্টি করেছে।

আমার স্বপ্ন—বড় হয়ে ভালো কিছু করব। মানুষকে ভালো কিছু উপহার দেবো। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে দেখা যায়, মানুষ ভালো চিকিৎসা পায় না। এসব ঘটনা আমাকে কষ্ট দেয়। আমি একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। কারণ ডাক্তারদেরকে মানুষ ভগবানের পরেই দেখে।

[ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘সব সম্ভব’ বই থেকে ]

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com