ব্যবসার খাতিরে তিন-চার জায়গা থেকে অল্প অল্প ঋণ নিয়েছি। এ অবস্থায় কি এক জায়গা থেকে বড় ঋণ নিয়ে ছোট ঋণ ঋণগুলো প্রথমে শোধ করে দেবো? কারণ অনেকগুলো জায়গায় দেনা না রেখে একটা জায়গায় দেনা রাখাই তো ভালো।
এই যে ঋণ রিশিডিউলিং করা-এটা নিয়ে আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন আছে। সেদিন পত্রিকায় একটা খবর দেখলাম। এতে বলা হচ্ছে যে, ২০০১ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকে যারা ঋণগ্রস্ত আছে তাদের অধিকাংশই রিশিডিউলিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত থেকেছে বা খাতায় খেলাপি থেকে গেছে। অর্থাৎ সবাই কয়েক দফায় ঋণী, এক দফায় নয়।
এমন দেখা গেছে যে, গ্রামীণ ব্যাংকের একজন সদস্য, আবার একই সাথে প্রশিকারও সদস্য। সে গ্রামীণ থেকে নিয়ে প্রশিকার ঋণ শোধ করে আবার প্রশিকা থেকে নিয়ে গ্রামীণের ঋণ শোধ করে। অন্যান্য অনেক এনজিও, যেমন ব্র্যাক-এর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
এই ঋণের টাকা নিয়ে তারা কী করে? অধিকাংশ গরিব মানুষ ঋণের টাকা দিয়ে ফুটানি করে। বেঁচে থাকার জন্যে ঋণ নেয় খুব কম মানুষ। একটা সময়ে এসে তথাকথিত ‘ধনী’ হয়ে ওঠা এই দরিদ্ররা ঋণের টাকায় টেলিভিশন কেনে, সাইকেল কেনে, আর বিয়ে-বাড়ি দাওয়াতে গিয়ে উপহার দেয় বেশ দামি কোনো কিছু।
মানে ‘জাতে উঠতে’ গিয়ে বেহিসেবী খরচ করে। ছেলে-মেয়ের বিয়েতে ধুমধাম করে। ভাবে-‘একটাই তো ছেলে/ মেয়ে, খরচ তো একটু হবেই। পরে কোনোভাবে ধার শোধ করবো।’ সেই ঋণ আর শোধ হয় না বা শোধ করার জন্যে আরেক জায়গা থেকে ঋণ নেয়।
যেহেতু সে ঋণ নিয়েই ঋণ পরিশোধ করছে, কাজেই তার মনে হয় সে খুব ভালো আছে। যেটা সে বোঝে না তা হলো ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে একসময় তার ভিটাবাড়ি নিলাম হয়ে যাচ্ছে।
ভিটাবাড়ির মালিক একসময় গ্রামীণ ব্যাংক না হয় আশা বা ব্র্যাক হচ্ছে। আর আপনি যেটা বললেন ঋণ রিশিডিউলিং করা-এটা আসলে একটা মানসিক ভ্রম ছাড়া আর কিছু না। ধরুন, এখন আপনার তিন জায়গায় ১০ লাখ টাকা করে ঋণ আছে, প্রতিমাসে তিন জায়গায় আপনাকে টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আপনি ভাবছেন, তিনজনকে টাকা দেয়ার চাইতে একজনকে দেয়া ভালো। কিন্তু কথা তো একই হলো।
এক জায়গা থেকে ৩০ লাখ টাকা আর তিন জায়গার ১০ লাখ টাকা করে মোট মাসিক কিস্তি তো একই আসে। বরং বেশি টাকা লোন নিলে সেইখানে আপনার আটকে পড়ার সুযোগ বেশি।
বেশি টাকা মানে আপনাকে জামানতও বেশি দিতে হবে-এটা তো সহজ হিসাব। কাজেই আমি বলবো, ঋণ যেগুলো আছে সেগুলো আগে পরিশোধ করুন। এই রিশিডিউলিংয়ের মধ্যে যাবেন না।