মনের জানালায় স্মৃতির হাওয়া

– শেখ শাহাদাৎ হোসেন
পর্ব – ৪
ভদ্রমহিলাকে মনে মনে যে চাচী বললাম, তার কারণ আছে। এর আগে গ্রামে মাত্র কয়েকবার এসেছি, তবে তেমন একটা থাকা হয়নি; ফলে অনেককেই চিনি না। আপন চাচাতো মিলে গ্রামে তিনজন ফুফু আছেন ( আমাদের বাড়ির ওপরের দু’জনসহ ) আর আছেন আমাদের ঘণবসতিপূর্ণ বাড়িটার লোকজন – যাঁরা কিছুটা মুখচেনা। সে জন্যে মা বলে দিয়েছিলেন, গ্রামে যাঁরা তাঁর (মায়ের) বয়সী, তাঁদেরকে চাচা-চাচী; আর বয়স্কদের যেন দাদা-দাদী বলে সম্বোধন করি। আমার মত এক আলাভোলা পোলার জন্যে এর চেয়ে সহজ কৌশল আর হয় না!
চাচী স্নিগ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, “ কাকে খুঁজছো বাবা? কোন বাড়িতে যাবে?” কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কথা বেরুলো না। আমার যা জারিজুরি তা শুধু ওই নিজেদের ঘরের মধ্যে, বাইরে একেবারে ভিজে বিড়াল। তবু কোন মতে বললাম, “আমার ভাইয়ের নাম শওকত”। শুনেই তিনি বললেন, “ তার মানে তুমি মান্নান ভাইয়ের ছেলে; সুন্দরবনে চাকরি করে?” আমি কোন মতে মাথাটা নাড়লাম। তিনি ফের কথা বলার আগেই বাঁশের বেড়ার ওপাশ থেকে প্যান্ট-ফ্রক পরা ফুটফুটে একটা মেয়ে “মা, মা” বলে ছুটে এল; কিন্তু পরক্ষণে আমাকে দেখে যেন ফুল-ব্রেক কষে থেমে গেল। এরপর মায়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, আঁচলের প্রান্ত হাতের আঙুলে জড়িয়ে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখতে লাগল আমাকে।
ওর মা বললেন, “ জেসু দেখো, তোমার ভাইয়ের মত আরেকটা ভাই” । বুঝতে পারলাম আমার বয়সী একটা ছেলে আছে সে বাড়িতে। শিশুটি আমার চেয়ে বয়সে বেশ ছোট হবে বুঝতে পারলাম। কিন্তু তাকে দেখে চমকে উঠলাম অন্য কারণে। তা হল, মাত্র দিন দশেক আগে সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও সাহেবের জন্য ইংরেজ আমলে নির্মিত জলবাহন “বন রাণী”-তে সওয়ার হয়ে বগী ফরেস্ট স্টেশন অফিসে এসেছিল এক ইংরেজ পরিবার। তাদের শিশু মেয়েটির নাম ছিল জেসিকা, সংক্ষেপে জেসি। আমার ধারণা ছিল, শুধু ইংরেজরাই খুব ফর্সা হয়। কিন্তু গ্রামে এসে ওই শিশুটিকে দেখে পূর্বেকার চিন্তা বদলে গেল। তবে চাচীর কথায় পরক্ষণে চিন্তার জাল ছিন্ন হয়ে গেল। তিনি বললেন “এসো বাবা, বাড়ির ভেতরে চলো। রোদে একেবারে ঘেমে নেয়ে গেছো দেখছি”।
( চলবে )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *