1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন

মমতা বা হৃদয়ই মানুষকে মানুষ বানিয়েছে!!

  • সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১
  • ১০৪৮ বার দেখা হয়েছে

নবীজী (স) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে সদাচারীরা এবং আর সবচেয়ে অপ্রিয় হচ্ছে বদমেজাজীরা। আমরা সবাই নিজেকে বিকশিত করতে, আত্মার সম্ভাবনাকে বের করে আনতে চাই। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক হলো দুর্ব্যবহার যা আমরা হরহামেশাই করে থাকি। আজকের আলোকায়নের আলোচনা থেকে আমরা জানবো কীভাবে দুর্ব্যবহার আমাদের আত্মজাগরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আর কী করলে আমরা সঠিক সুন্দর পথে জীবনকে পরিচালিত করতে পারবো।

একজন মানুষের সুখের পরিমাণ বাড়ে যখন তার আনন্দের কথা অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারে। দুঃখের প্রকোপ কমে যখন দুঃখের কথা অন্যের সাথে ভাগ করতে পারে। কিন্তু দুর্ব্যবহার এর পরিণতি হচ্ছে নিজেকে নিঃসঙ্গ করা।

একজন বদমেজাজী মানুষ সবসময়ই নিঃসঙ্গ। খিটখিটে, বদমেজাজী মা-বাবাকে তার ছেলে-মেয়েরাও পছন্দ করে না। পরিবারের সবার মাঝে থেকেও সে একা। রোগ ও অসুস্থতা যার সবসময়ের সঙ্গী। পরিবারের মধ্যে যাদের রাগ বেশি, মেজাজটা একটু চড়া, অল্পতেই পান থেকে চুন খসলে ক্ষেপে যান তাদের অসুস্থতা তুলনামূলক অনেক অনেক বেশি। উত্তেজিত অবস্থায় আমাদের মধ্যে নানা ধরনের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হয়। হার্ট রেট বাড়ে, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, রাগের ফলে আপনি কিছু সঙ্গী পাচ্ছেন, যে সঙ্গীগুলো সহজে আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইবে না। যেমন : মাইগ্রেন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ব্লাড প্রেশার, হাঁটু ব্যথা, অনিদ্রা, খিটখিটে মেজাজ, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ কিছু ক্রনিক রোগ। এমনকি হার্ট-অ্যাটাক হয়েও আপনার জীবন বিপণ্ণ হতে পারে। বদমেজাজী এবং রাগ-ক্ষোভপ্রবণ মানুষদের ক্ষেত্রে পরবর্তী জীবনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

আসলে যখনই আমরা দুর্ব্যবহার করছি আমরা আমাদের নিজেদের সীমাকে, অন্যের অধিকারকে লঙ্ঘন করছি। সীমালঙ্ঘন করে আসলে কেউ কোনো দিন শান্তিতে থাকতে পারে না। দুর্ব্যবহার করলে অপরপক্ষ আপনাকে কিছু বলুক আর না বলুক প্রকৃতিই আপনাকে শাস্তি দেবে। আর প্রকৃতির প্রতিদান অত্যন্ত নির্মম ও করুণ। আমরা অনেক সময় রেগে গিয়ে দুর্ব্যবহার করি। আসলে রেগে যাওয়াটা শক্তিমান হবার লক্ষণ নয়। জার্মান দার্শনিক নীটশে বলেছেন, সত্যিকারের যোদ্ধা সেই, যে জানে কখন অস্ত্র সংবরণ করতে হয়। আপনার যে শক্তি রয়েছে, সেই শক্তিকে সংহত করা, নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই হচ্ছে আপনার মহত্ত্ব।

দুর্ব্যবহার কাদের সাথে করি? যারা আমাদের কাছের মানুষ, যাদের সাথে ওঠা-বসা বেশি এবং আবেগীয় সম্পর্ক রয়েছে তাদের সাথে বেশি দুর্ব্যবহার করি। পরিবারের সদস্য যেমন : মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান। অনেক স্বামী আছেন তারা তাদের স্ত্রীর সাথে ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলেন না। ঠিক একই কথা কিন্তু সে সব স্ত্রীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা স্বামীর সাথে দুর্ব্যবহার করেন। অনেক সময় তাদের সাথেই দুর্ব্যবহার করি যার সাথে করলে আমি পার পেয়ে যাবো অর্থাৎ অধীনস্ত গৃহকর্মী, অফিসের পিয়ন, দারোয়ান, ড্রাইভার। দুর্ব্যবহার না করে তাদের সাথে প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশলী আচরণ করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

আমরা অনেক সময়ই বলি, দুর্ব্যবহার করেছি কী আর সাধে; অন্যায় করবে আর মুখ বুঝে সহ্য করবো? অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু প্রতিবাদ করে কেউ সমস্যার জট খুলতে পারেন নি বরং সমস্যা আরো জটিল হয়েছে। আপনাকে প্রতিকার করতে হবে। শক্তিমান হতে হবে। বুদ্ধি বা হিকমাকে ব্যবহার করতে হবে।

একবার নাসিরউদ্দিন হোজা হাম্মামে গেছেন গোসল করতে। তার সাদাসিধে পোশাক দেখে হাম্মামের দারোয়ান তাকে অবজ্ঞা করে একটা ভাঙা সাবান আর নোংরা তোয়ালে তুলে দিলো তার দিকে। হাম্মাম থেকে বেরিয়ে হোজা এক স্বর্ণমুদ্রা বকশিস দিলেন দারোয়ানকে। দারোয়ান তো অবাক। পরদিন হোজা আবার এলেন হাম্মামে। দারোয়ান এবার খুব সমাদর করে নতুন সাবান ও তোয়ালে এনে দিলো। তারপর বেশ করে তেল মাখলো হোজার গায়ে। হোজা গোসল সেরে বেরিয়ে দারোয়ানকে একটি তামার মুদ্রা ছুড়ে দিয়ে বললেন, গতকালের জন্যে এই বকশিস। আর আজকেরটা তো গতকালই দিয়েছি।

আর একবার এক লোকের পায়ে কুকুর কামড় দিয়েছে। ব্যথায় তিনি কষ্ট পাচ্ছেন। অশ্রু সিক্ত নয়ন তার। তাই দেখে তার ছোট্ট মেয়ে বাবাকে প্রশ্ন করলো, বাবা, ঐ কুকুরকে তুমি একটি কামড় দিতে পারলে না? অশ্রু সিক্ত নয়নে বাবা বললেন, কুকুরের কাজ কুকুরে করছে, কামড় দিয়েছে পায়ে, তাই বলে কী কুকুরকে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়?

আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে দুর্ব্যবহার করি কখনও বুঝে আবার কখনও না বুঝে। সব সময় শুধু কথা দিয়েই নয় বরং আপনার অঙ্গভঙ্গি, ভাব বিনিময়, আচরণের কারণে কেউ যদি মনে কষ্ট পায় তাহলে সেটাও দুর্ব্যবহার। একজনকে দেখে আপনি একটু এড়িয়ে গেলেন। অন্যান্য সময়ে সালাম দিতেন কিন্তু এখন পাশ এড়িয়ে চলছেন, মুখে কিছু বলছেন না কিন্তু ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হচ্ছেন, মলিন মুখে কথা বলছেন, হাসি বিনিময় থেকে বিরত থাকছেন, তার যে সম্মান পাবার কথা সে সম্মান তাকে দিচ্ছেন না, তার আনন্দের সংবাদে অভিনন্দন না জানানো, দুঃখে সমব্যথী না হওয়া।

কারো মতামতকে গুরুত্ব না দেয়া, কারো কথা মনোযোগ দিয়ে না শোনা, কেউ বলার আগেই নিজে বলতে শুরু করা। নিজেই সব বোঝেন অন্য কেউ বোঝেন না, এমন ভাব করা, কর্তৃত্বপরায়ণ, আদেশ করা, রূঢ় বা কর্কশ শব্দ ব্যবহার করা, অভিযুক্ত করে কথা বলা, যুক্তি বা বির্তক করা। অনেক সময় দুর্ব্যবহারের বিপরীতেও দুর্ব্যবহার করি আবার যুক্তি দেখাই সে এমন করেছে তাই আমি করেছি। আমার কি দোষ। কিন্তু আমরা যদি ভালো মানুষ হতে চাই তাহলে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হলেও তার সাথে দুর্ব্যবহার করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, কেউ গালি দিলে পাল্টা গালি দিও না। বরং তাকে আশীর্বাদ কর। তাহলেই তোমরা আশীর্বাদ পাবে। [১ পিতর ৩:৯] মমতা বা হৃদয়ই মানুষকে মানুষ বানিয়েছে।

হাদীসে আছে, স্রষ্টা নিজে কোমল এবং তিনি কোমল স্বভাব পছন্দ করেন। তিনি কোমল স্বভাবের মানুষদের যা দেবেন কঠোর স্বভাবের মানুষদের তা দেবেন না এবং যাকে নম্রতা দেয়া হয়েছে তাকে ইহলোকের ভালো অংশই দেয়া হয়েছে। মানুষের ওপর দুধরনের হক রয়েছে। স্রষ্টার হক এবং বান্দার হক। স্রষ্টা অপার করুণাময়। তিনি ইচ্ছে করলে তাঁর হক পুরোপুরি পালন না করলে বা কোথাও ভুল হলে তিনি এ থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। কিন্তু যে হকের এখতিয়ার স্রষ্টার কাছে নেই তা হচ্ছে বান্দার হক। এজন্যে কারো সাথে দুর্ব্যবহার করা কখনই আমাদের উচিত হবে না।

দেশের রাজা সৎ থাকলে যেমন পুরো রাজ্য সঠিক পথে থাকে ঠিক তেমনি জিহবা হলো দেহের রাজা। জিহবা নিয়ন্ত্রিত থাকলে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে। হযরত আবু সাঈদ (র.) হতে বর্ণিত রসুল (স) বলেন, যখন একজন মানুষ ঘুম থেকে ওঠে তখন তার সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবার কাছে নিবেদন করে বলে যে, আল্লাহকে ভয় করো। কারণ আমরা তোমার ওপর নির্ভরশীল। তুমি যদি সোজা থাকো আমরা সোজা থাকবো।

আর তুমি যদি আঁকা বাঁকা হয়ে যাও তাহলে আমরা বাঁকা হয়ে যাবো। কোনো কোনো শব্দের দ্যোতনাই এমন যে শুনলেই মন খারাপ হয়ে যায়। তাই বলার আগে কয়েক বার ভাবুন। মানুষকে তার আচরণ থেকে আলাদা করুন। তার ভালো দিকগুলোকে বড় করে দেখুন। আপনি যেভাবে মানুষের কাছে আচরণ প্রত্যাশা করেন সেই আচরণ করুন। কেউ খারাপ আচরণ করলে শিক্ষা নিন। আপনি যেন কারো সাথে এ রকম অন্তত পক্ষে না করেন। ক্ষমা করতে শিখুন।

যত ক্ষমা করতে পারবেন তত ভেতরে শান্তির সুবাতাস বইতে থাকবে। কারো ওপর রেগে গেলে গঠনমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ক্রোধ তো আসলে সাময়িক বোধ বা সাময়িক ব্যাপার। যদি তুমি কোনো ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত থাকো তাহলে তা অচিরেই ভুলে যাবে। যে কোনো গঠনমূলক কাজে ব্যস্ততার পক্ষে রাগ নিয়ে বসে থাকা সম্ভব নয়। যত নিয়মিত মেডিটেশন করবেন তত আপনার সহনশীলতা বাড়বে।

আপনার নিজের আচরণের প্রতি আগের চেয়ে বেশি সচেতন হবেন। মানুষকে তার অবস্থানে যেয়ে বুঝতে পারবেন। ভেতরের ভালো সত্তাটি বিকশিত হবে। ভেতর থেকে পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করুন। মানুষ যেন আপনার মৃত্যুর পর চোখের পানি ফেলে এবং অন্ততপক্ষে বলে, মানুষটি বড় ভালো ছিলো। বড় বড় গিফট মানুষ মনে রাখে না। বরং মনে রাখে তার আচরণ কেমন ছিলো

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com