আসলে রসুলুল্লাহর (স) জীবন নিয়ে, তার অর্জন নিয়ে চিন্তা করতে গেলে চিন্তাটা থেমে যায়। চিন্তা আর অগ্রসর হতে পারে না যখন এটাকে আমরা ব্যাখ্যা করতে যাই বিশ্লেষণ করতে যাই।
একজন মানুষ যার জন্মটা একটা মাইনাস। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পিতা নাই। মাতাও চলে গেলেন ছোট থাকতে থাকতে। সেখান থেকে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ।
মানে অনেকে তো বলে যে, শূন্য থেকে শুরু। যে-রকম আমরা বলি যে, কোয়ান্টাম শূন্য থেকে শুরু করেছে। উনি শূন্য থেকে না, উনি মাইনাস থেকে শুরু করেছেন এবং যন্ত্রণা নিয়ে শুরু করেছেন।
আমরা তো এখন বুঝি যে, শিশু যখন গর্ভে আসে তিন মাস পর থেকেই মায়ের সমস্ত চিন্তাভাবনা সবকিছু সে বুঝতে পারে। সবকিছুর প্রভাব তার ওপরে পড়ে। মানে যা-কিছু আচরণ সেটার প্রভাব পড়ে।
তো একজন নারী মাত্র বিয়ে হয়েছে এবং বিয়ের কয়েকদিনের মাথায় তার স্বামী চলে গেছেন ব্যবসা করতে।
সন্তান গর্ভে এসছে। স্বামী বিদেশে। স্বামীর খোঁজ নাই। এবং যখন খোঁজ পেলেন জীবিত না, স্বামী মৃত।
তো সেই যে মৃত স্বামীর জন্যে যে কান্না, তার যে দুঃখ তার প্রত্যেকটা কান্না প্রত্যেকটা আকুতি প্রত্যেকটা দুঃখের প্রভাব কি সন্তানের ওপর পড়ে নি? সে কি বোঝে নাই?
তো কষ্টটা শুরু হয়েছে কখন থেকে? ভ্রূণ থেকে।
হি ওয়াজ এ মাইনাস। কিন্তু শেষটা কী? অনন্ত।
আজকে এত বছর পরেও পাশ্চাত্যে তাকে নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি বই লেখা হচ্ছে গবেষণা হচ্ছে পারসন হিসেবে।
এবং প্রত্যেক বছর তারাই নতুন নতুন বই লিখছেন, নতুনভাবে মূল্যায়ন করছেন, নতুনভাবে দেখছেন।
আমাদের কথা বাদ দিলাম। আমরা তো তার ভক্তকূল।
গত ১৪০০ বছরে যত বই লেখা হয় নি, গত ২০ বছরে তার চেয়ে বেশি বই লেখা হয়েছে পাশ্চাত্যে রসুলুল্লাহর (স) ওপরে।
পাশ্চাত্য সবচেয়ে ক্রমবর্ধমান ধর্ম হিসেবে এখন চিহ্নিত করেছে তার ধর্মকে যে, এটা হচ্ছে র্যাপিড গ্রোয়িং রিলিজিয়ন।
যতগুলো রিলিজিয়ন রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে র্যাপিড গ্রোয়িং রিলিজিয়ন হচ্ছে তার ধর্ম। কেন? হোয়াই? সাকসেসটা কোথায়?
মাইনাস থেকে শুরু, দুঃখ থেকে শুরু, ভ্রূণ থেকে যার কষ্ট, ভ্রূণ থেকে যার যন্ত্রণা, তার অর্জনটা কী? তার জীবদ্দশায় তার অর্জন কী ছিল?
আমরা যদি দেখি যে, মক্কা থেকে পালাতে বাধ্য হলেন। রাতের অন্ধকারে একজন মানুষ পালিয়ে গেছেন।
পালিয়ে গিয়ে একটা ছোট্ট শহরে আশ্রয় পেলেন এবং শহরের সব মানুষ তার আপন নয়। তো তার মধ্যে বলা যেতে পারে তিনটা চারটা রাস্তার চারপাশে যে বসতি তারা তাকে সমর্থন করেছে।
আর কিছু মানুষ যারা তার আগে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে পেরেছিলেন তারা।
তার নামে হুলিয়া দেয়া হলো- জীবিত বা মৃত। পালানোর পথেও শান্তি নাই। সেখানে গিয়েও শান্তি নাই, জীবিত বা মৃত ধরে দিতে পারলে ১০০ উট না, উটনী।
উটের চেয়ে উটনীর দাম বেশি। উটের চেয়ে বেশি উটনী দৌড়াতে পারে, বেশি কষ্টসহিষ্ণু। সেজন্যে উটনীর দামও হচ্ছে বেশি।
১০০ উটনীর দাম এখনকার টাকায় কত?
যদি একটি উটনীর দাম পাঁচ লাখ টাকা হয় তো ১০০ উটনী পাঁচ কোটি টাকা। তো জীবিত বা মৃত তাকে ধরে দিতে পারলেই হলো। আবার বলা হলো- ধরেও দেয়া লাগবে না, শুধু খবর দিতে পারলেই হবে যে, হাঁ হি ইজ নো মোর।
সেই মানুষটি ১০ বছরে ইউরোপের সমান একটা রাজ্যের প্রধান হলেন। এবং তার অনুসারীরা তিনি যাদেরকে তৈরি করে গেলেন তারা তার মৃত্যুর ১৫ বছরের মধ্যে তখনকার পৃথিবীর দুইটা পরাশক্তি রোমান এম্প্যায়ার এবং পারসিয়ান এম্প্যায়ার শেষ করে দিলেন।
যারা ১৫০০ বছর ধরে পরস্পরে যুদ্ধ করেছে, কেউ কাউকে ধ্বংস করতে পারে নাই। তারা ১৫ বছরে তা করে দিলেন।
এবং তিনটা মহাদেশব্যাপী সাম্রাজ্য স্থাপন করলেন তারা। এবং শুধু সাম্রাজ্য স্থাপন করেন নাই, সেই এলাকার পুরো মানুষের চরিত্র বদলে দিলেন।
কারণ জায়গা দখল করা এক জিনিস, আর হৃদয় জয় করা মানুষের মন জয় করা আরেক জিনিস। দখলতো করাই যায়, কিন্তু দখলকারীকে কেউ স্বাগত জানায় না। কিন্তু সব জায়গায় তাদের স্বাগত জানানো হলো। এবং পুরো এলাকার পারিপার্শ্বিকতা ১৫০০ বছরের জন্যে চেঞ্জ হয়ে গেল।
[ঈদে মিলাদুন্নবী-র বিশেষ ওয়ার্কশপ, ১০ নভেম্বর ২০১৯]