মহাজাগতিক সফরে যাত্রা করেছেন মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্য মাহমুদ সাজ্জাদ। এ বছর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে এই অভিনেতা সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিছুদিন পর কোভিড–১৯ পরবর্তী জটিলতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সেখানেই ২৪ অক্টোবর ২০২১ রোববার বেলা সাড়ে তিনটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
২৫ অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদের মরদেহ সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান তার আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সদস্যরা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মাহমুদ সাজ্জাদকে নিয়ে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা করেন পরিবারের সদস্যরা। ময়মনসিংহে পৌঁছলে বাদ মাগরিব তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সদর উপজেলার গলগন্ডা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে মা–বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
মাহমুদ সাজ্জাদের জন্ম ১৯৪৯ সালের ৩ মে ময়মনসিংহে। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক। সেখান থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তার মা মরহুমা রাবেয়া খাতুন এবং বাবা মরহুম আবদুল ওয়াদুদ। স্ত্রী মমতাজ বেগম, দুই পুত্র উপল ও অঞ্জনকে নিয়ে ছিল তার পরিবার।
শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মাহমুদ সাজ্জাদ। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে পড়াশোনাকালীন নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় চলচ্চিত্র সংসদ ও মঞ্চনাটক দল ‘নাট্যচক্রের’ সঙ্গে যুক্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ নিতেন। সেইসাথে স্বাধীনতার আগে থেকেই তিনি বেতার নাটকে কণ্ঠশিল্পী ছিলেন।
মাহমুদ সাজ্জাদ নাট্যচক্র দলের হয়ে অভিনয় করেন ‘লেট দেয়ার বি লাইট’, ‘স্পার্টাকাস’, ‘জনক’সহ বেশ কিছু নাটকে। এ-ছাড়াও ‘ভদ্রলোক’, ‘প্রতীক্ষার প্রহর’, ‘হায়েনা’সহ একাধিক মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
নিয়মিত টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন মাহমুদ সাজ্জাদ। তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘সকাল সন্ধ্যা’। পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনেক নাটকে অভিনয় করেন তিনি।
চলচ্চিত্রে তার প্রথম কাজ ‘সংসার’ ছবিতে। এতে তার নায়িকা ছিলেন ববিতা। পরে ‘মুক্তি’ সিনেমায় শাবানার বিপরীতে অভিনয় করেন মাহমুদ সাজ্জাদ। এ-ছাড়া তিনি খান আতাউর রহমানের ‘ঝড়ের পাখি’, ‘আপন পর’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সর্বশেষ তাকে দেখা গিয়েছিল মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ ওয়েব ফিল্মে।
পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় মাহমুদ সাজ্জাদ। তার মেজো ভাই ম হামিদ বাংলাদেশের টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ও ছোট ভাই কে এম খালিদ সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।
অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদ কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের ৪২৯ ব্যাচে অংশগ্রহণ করেন। বঞ্চিতের কল্যাণে তিনি কোয়ান্টাম মাটির ব্যাংকে দান করতেন। তার মেজো ভাই নাট্যকার ও নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ ৩৯৬ ব্যাচের এবং ভাবী অভিনেত্রী, নাট্যকার, পরিচালক ও প্রযোজক ফাল্গুনী হামিদ ৪৩০ ব্যাচের কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট।
পরিবার-পরিজনসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন মরহুম মাহমুদ সাজ্জাদ। পরম করুণাময় তার সকল ভালো কাজ সৎকর্ম হিসেবে কবুল করুন। আমরা তার অনন্ত প্রশান্তি কামনা করছি।