1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন

মুক্ত আলোচনায় লেখক ও সমাজহিতৈষী বাদল সৈয়দ

  • সময় মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১
  • ৮৭০ বার দেখা হয়েছে

[বাদল সৈয়দ। প্রকৃত নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ। জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৮ মে, চট্টগ্রামে। বর্তমানে তিনি আয়কর বিভাগে চট্টগ্রাম অঞ্চল ৩-এর কর কমিশনার পদে দায়িত্বরত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব এবং ‘ট্যাক্সেশন সিস্টেম মর্ডানাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পে ফোকাল পারসন-সহ কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করেছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর পাশাপাশি যুক্ত রয়েছেন জাতিসংঘ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে।

সমাজহিতৈষা বাদল সৈয়দের ব্যক্তিচরিত্রের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনহীন রোগীদের সেবাযত্ন ও নানাভাবে মানুষের পাশে থাকা ছিল তার দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার অংশ। পেশাজীবনে আরো বিস্তৃত হয় এ সেবা-উদ্যোগগুলো। এ উদ্যোগগুলোর একটি ‘পে ইট ফরওয়ার্ড’, যার লক্ষ্য দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখা। তার প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক অনলাইন শপ ‘অনেস্ট’। এটি নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের কাছে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছে দেয়।

প্রবীণদের অবসরমুহূর্তগুলোকে আনন্দময় করে তুলতে সহধর্মিণী রাবেয়া হক চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় গড়ে তোলেন ‘প্যারেন্টস লাউঞ্জ’। একই ছাদের নিচে রয়েছে একটি উন্মুক্ত পাঠাগার, একটি ‘স্বল্পমূল্যের রেস্টুরেন্ট’। তার যাবতীয় সেবা-উদ্যোগের মূলমন্ত্র হলো ‘আসুন মায়া ছড়াই’।]

আমি যদি আমার মা-কে জড়িয়ে ধরি, আমার মেয়েকে আদর করি, তখন তো কেউ জিজ্ঞেস করে না—কেন মা-কে জড়িয়ে ধরলেন? কেন আপনার মেয়েকে আদর করেন? কারণ এটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনি মানুষের জন্যে মানুষ কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। আমি মানুষ হিসেবে ঠিক সেই দায়িত্বটিই পালন করছি। আমি বিশ্বাস করি—মানুষ হিসেবে জন্ম নেয়ার যে ঋণ, তা শোধ করার স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেয়া।

২ অক্টোবর ২০২১ অনুষ্ঠিত হয় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত মুক্ত আলোচনার শততম পর্ব। এ অনুষ্ঠানে ‘কেন মানুষের জন্যে সেবামূলক কাজ করেন?’—প্রশ্নের উত্তরে এ কথাগুলো বলেন লেখক ও সমাজহিতৈষী বাদল সৈয়দ।

আলাপচারিতার আঙ্গিকে সাজানো এ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা কার্যক্রম সূচনার পথিকৃৎ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ।

২০০৬ সালে প্রকাশিত বাদল সৈয়দের প্রথম বই ‘জন্মজয়’ বিপুল সংখ্যক পাঠককে আলোড়িত করে। এরপর তার দ্বিতীয় বই প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। এই দীর্ঘ বিরতির নেপথ্যের গল্পে লেখক বলেন, আমার প্রথম বইটি একজন সম্মানিত সাহিত্যিককে আমি পড়তে দেই এবং সাহিত্যের বিচারে এর মান সম্পর্কে জানতে চাই। বইটি পড়ে তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনার বইতে আবেগ আছে। মানুষ তাই পছন্দ করেছে। কিন্তু প্রকৃত সাহিত্যের বিচারে এটি কিছু হয় নি। আপনি যদি লেখালেখি করতে চান, তাহলে আপনাকে পড়তে হবে।’ আমি বললাম, আমি তো আগে থেকেই বেশ পড়াশোনা করি। তিনি বললেন, ‘ওভাবে না। লেখক হওয়ার চিন্তা নিয়ে সারা বিশ্বের সাহিত্য পড়তে হবে। ১০ বছর। তারপর আপনি লিখবেন।’ তাই দীর্ঘ ১০ বছর আমি একটি শব্দও লিখি নি। শুধুই পড়েছি—সারা বিশ্বের নানান বই।

ব্যক্তিসত্তা এবং লেখকসত্তার মধ্যে কখনো দ্বন্দ্ব তৈরি হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বাদল সৈয়দ বলেন, আমি মনে করি, দ্বন্দ্বটা মূলত তৈরি হয় তখনই, যখন একজন লেখক ভান করেন। অর্থাৎ লেখেন একটা, কিন্তু করেন আরেকটা। ভালোমন্দ মিলিয়ে সবার মতো আমিও একজন মানুষ।

জীবনের একটা পর্যায়ে আমার মধ্যেও ভান ছিল। তা থেকে বেরিয়ে এলাম যখন লেখালেখিকে আমি কমিটমেন্ট হিসেবে নিলাম। কমিটমেন্টটা কী? আমার লেখালেখির মধ্য দিয়ে আমি মানুষকে ভালো হতে বলছি। আমি যখন ‘সাধুসঙ্গ’ লিখছি, তখন অন্তরালে থেকে আমি পাঠককে বলছি—‘এরা ভালো মানুষ, এদের মতো হও।’ এখন আমি যদি ভালো না হই, তাহলে সেটা তো আসলে ভান করাই হলো। তাই আমি সেটাই লিখি, যা আমি বিশ্বাস করি। আমি যা পালন করি না, তা আমি কখনো লিখি না। এভাবেই আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি লেখকসত্তার সাথে ব্যক্তিসত্তার যেন কোনো দ্বন্দ্ব না হয়।

ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পরিচিত এক তরুণ একবার আমাকে বলল, সে সিভিল সার্ভিসে আসতে চায়। আমি তাকে বললাম, তোমার যে মেধা তাতে বিশ্বের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তুমি যদি গবেষক হও, তাহলে পৃথিবীকে অনেক কিছু দিতে পারবে। সে আমাকে প্রায় শত বৎসর আগের একটি ছবি দেখিয়ে বলল, দেখুন, এখানে অন্নদাশংকর রায়ের সাথে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের ছবি। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট বসেছেন মাঝে আর অন্নদাশংকর রায় বসেছেন এক কোণায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কী? সে বলতে পারল না। আমি তাকে বললাম, এরকম অনেক ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, যাদের নাম আমরা জানি না। কিন্তু অন্নদাশংকর রায়ের নাম এত বছর পরও জানি।

আরেকবার একজন বাবা এসে আমাকে বললেন, ‘তার ছেলে চারুকলায় পড়তে চায়। কিন্তু মানুষ বলে, ওখানে পড়লে ভালো চাকরি পাবে না, ছেলেরা চুল বড় রাখবে ইত্যাদি ইত্যাদি।’ আমি তাকে বললাম, ‘ছেলের যা ভালো লাগে সেটাই পড়তে দিন।’

সেই ছেলে এখন অনেক বড় শিল্পী। তার ছবি দেশে এবং ইউরোপের বিভিন্ন গ্যালারিতে বিক্রি হয়। তাই তরুণদের আমি বলি—যে কাজ ভালো লাগে, যে কাজে তুমি মনপ্রাণ ঢেলে দিতে পারবে, সে-ই কাজ করো।

তিনি আরো বলেন, সমাজে শুধু সফল মানুষ নয়, চাই ভালো মানুষ। একজন ডাকাত হয়তো তার কাজের ক্ষেত্রে অনেক সফল কিন্তু সে নিশ্চয়ই ভালো মানুষ নয়। আমাদের প্রয়োজন ভালো মানুষ।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য যে-কোনো ফোরামে কথা বলা আর আপনাদের সামনে কথা বলা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্যদেরকে ভালো কাজ করার কথা বলতে হয়। উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজন হয়। আর আপনারা ভালো কাজের সাথেই যুক্ত। আপনারা যে কাজ করছেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘পে ইট ফরোয়ার্ড’ যে কাজ করছে, সেটাকে অনেকে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো ভাবেন। কিন্তু আমি বলব—এই উদ্দীপনা ধরে রাখুন।

কারণ একা মানুষ একা খায়, একা ঘুমায়। একা মারা যায়। মারা গেলে তার জন্যে কেউ কাঁদে না। কিন্তু যূথবদ্ধ মানুষ যদি রেলস্টেশনেও থাকে, সে মারা গেলে তার পাশের মানুষগুলো অন্তত কাঁদে। তাই আপনারা যে কাজগুলো করছেন তা ছাড়বেন না। একটি ভালো কাজের জন্যেই হয়তো আপনি আমি মুক্তি পেয়ে যাব। কারণ মানুষের জন্যে কাজ করা ছাড়া মুক্তি পাওয়ার আর কোনো ভালো উপায় আমার জানা নেই। পবিত্র কোরআনে ২৭ বার বলা হয়েছে, মানুষের জন্যে ভালো কাজ করলে রয়েছে আল্লাহর পুরস্কার।

আপনাদের ও আমার বিশ্বাসের মিল আছে। আমাদের বিশ্বাসের এই সম্মিলন ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আমাদের সমাজে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com