বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২৫-২৯ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার জন্যে ডিপ্রেশনই দায়ী। আসলে এই হতাশা বিষণ্নতা যার ইংরেজি নাম ডিপ্রেশন। এ সম্পর্কে একজন বিশিষ্ট লেখক খুব সুন্দরভাবে বলেছেন, “কয়েক প্রজন্ম আগে মানুষ জানত না কাকে বলে ‘ডিপ্রেশন’। ডিপ্রেশন আধুনিকতার মানসিক গন্ধম ফল।
বাংলাভাষায় ‘ডিপ্রেশন’ বোঝানোর কোনো শব্দ নেই। কত বড় ঘুণপোকা জীবনের ভিত খেয়ে ফেলছে তা অনেক সময় বুঝতেও পারি না। ধরতেও পারি না যে অবসাদের মহামারি ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি লিখেছেন, অসন্তোষ অনিশ্চয়তা অজানা বিপদ বা ব্যর্থতার ভয় আধুনিক জীবনের ছায়াসঙ্গী। এটা একজনের বা অল্প কয়েকজনের ওপরে ছায়া ফেলে না। এর শিকার গোটা সমাজ।
বিজ্ঞাপিত জীবন শেখায় ভোগেই সুখ। এই পণ্যময় জীবন খালি পেতেই শেখায়। হারানো মানেই সর্বনাশ।
হারিয়ে ফেললে শোক সামলানোর ক্ষমতা কমে যাচ্ছে আমাদের। অথচ কিছু না হারিয়ে কে কবে কিছু পেয়েছে!
সাবেককালের রুহানি মানুষেরা সাধক মানুষেরা তো হারানোর মাধ্যমেই আরো প্রশান্ত জীবনের আদর্শ তুলে ধরতেন। তখন তো এত আত্মহত্যা ছিল না। জীবনে সুখই কাম্য দুঃখ মানেই খারাপ এটা ভুল বার্তা। দুঃখের ব্যবস্থাপনার জন্যে আধুনিক সময়ে যখন মনোরোগ চিকিৎসক আছে, অথচ পুরনো সময়ে আশ্রয় ছিল সমাজে।
কারণ ‘সমাজ’ নামক জিনিসটা জীবন্ত ছিল। আশ্রয় ছিল প্রকৃতিতে যেহেতু তার ভেতরেই মানুষ বাস করত। মাজার ছিল তীর্থ ছিল, ছিল পরিজন। আর ছিল দুঃখকে স্বাভাবিক ভাবার সংস্কৃতি।
সফল আমাদের হতেই হবে? চালাতে হবে অমানবিক প্রতিযোগিতা? ছুটতে ছুটতে পা হয়ে যাবে সিস্টেমের চাকা? পরিহাস, ভোগের বীরদেরও ক্লান্তি আসে। ভোগের দৌড়ে সফল ও ব্যর্থ, দুজনে একই সমস্যার দুই রকম শিকার।
সেই সমস্যার নাম বিচ্ছিন্নতা, অবসাদ, জীবনের অর্থ হারিয়ে ফেলা। এসব আত্মাকে শুকিয়ে ফেলে, খেয়ে ফেলে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার ইচ্ছাশক্তি। আত্মহত্যা নামের ভালুকের থাবার তলে চলে যায় তখন অনেকেই। পুঁজিবাদ থাকবে কিন্তু অবসাদ থাকবে না, তা হয় না!
বিচ্ছিন্ন জীবনের নাম আধুনিকতা হতে পারে না। প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাচ-কংক্রিট-প্লাস্টিক আর স্ক্রিনের দম্ভকে সভ্যতা বলা যায় না। বণিক সভ্যতার এই শূন্য মরুভূমিতে কীভাবে মানুষ বেঁচে থাকার প্রেরণা পাবে?”
আধুনিক যুগযন্ত্রণার মূল বিষয়টি বিশিষ্ট লেখক খুব সুন্দরভাবেই তুলে ধরেছেন।