আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনা যে কী পরিমাণ এটা করোনাকালে বুঝতে পেরেছি। অর্থাৎ আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কত অসচেতন! এবং আমাদের ভাবনাটা কত ভুল।
সাধারণ ভাবনাটা কেন ভুল?
কারণ এই অসুস্থতার আতঙ্ক যারা প্রচার করেছেন, তারা হচ্ছেন আতঙ্কের ব্যাপারী। এ আতঙ্কটা যত প্রচার করা যাবে তত তাদের ব্যবসা ভালো হবে।
করোনাকালে যাদের যা ব্যবসা করার তারা কি কম করেছেন কেউ? শত শত কোটি না, শত শত কোটি কোটি ডলার!
আমাদের দেশে যা হয়েছে এটা কিছুই না। এটা চীনা বাদাম ব্যবসার এ দু-চারটা বাদাম।
আসল ব্যবসা তো যারা করার করে ফেলেছে। গেটস সাহেবরা। বেজোস সাহেবরা।
কেন তারা করতে পেরেছে?
আমাদের অজ্ঞতার কারণে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের সঠিক তথ্য না জানার কারণে।
সঠিক তথ্য থেকে তারা বঞ্চিত ছিলেন। তারা ভুল তথ্যে প্রভাবিত হয়ে গেছেন। এটা কী রকম?
এক রাজা। খুব শক্তিশালী রাজা। শক্তিশালী মানে, স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজা আরকি। সে কারো সাতেও নাই, পাঁচেও নাই। নিজের রাজত্ব নিয়ে, প্রজাদের নিয়ে খুব সুখে শান্তিতে ছিল। তার সেনাপতি খুব দক্ষ সেনাপতি।
তো প্রতিবেশী এক জালেম রাজা, সে দেখল যে, এই রাজ্যটাকে যদি দখল করা যায় তো এখান থেকে কিছু শোষণ করা যাবে।
এবং সবারই তো গোয়েন্দা থাকে। গোয়েন্দারা এসে তাকে খবর দিল যে রাজ্য দখল করা খুব সহজ না, সেনাপতি খুব শক্তিশালী এবং দেশপ্রেমিক এবং রাজার প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত।
রাজা ভালো মানুষ। কিন্তু অধিকাংশ সময় ভালো মানুষরা আবার একটু কী হয়? সরল তো সরল।
তো গোয়েন্দারা তথ্য দিলো যে, সেনাপতিকে বিভ্রান্ত করা যাবে না, কিন্তু রাজাকে বিভ্রান্ত করা যাবে। কারণ আমরা যে ফাঁদ পেতেছি, যে কৌশল পেতেছি এই ফাঁদে সেনাপতি পা দেবে না। সেনাপতি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। কিন্তু রাজাকে বিভ্রান্ত করা যাবে।
তারা চর পাঠিয়ে দিল। আর চররা তো ‘তেলুয়া’ হয় খুব। তেল দিতে ওস্তাদ। চর সবসময় বুঝবেন যে সে তেলুয়া।
আপনারা মুনির চৌধুরীর রক্তাক্ত প্রান্তর পড়েছেন না? ওখানে গুপ্তচর ছিল আতা খাঁ।
তো শেষ পর্যন্ত নবাব জিজ্ঞেস করছে যে, আচ্ছা তুমি আমাদের শিবির থেকে মারাঠা শিবিরে যাও? না মারাঠা শিবির থেকে আমাদের শিবিরে আসো? অর্থাৎ কী পরিমাণ তেলুয়া ছিল আতা খাঁ!
তো চর পাঠিয়ে দিল।
চর রাজাকে বোঝাতে সক্ষম হলো যে, সেনাপতি আসলে আপনার প্রতি অনুগত না। সে যেইভাবে শত্রুদেশ আসছে, তার সাথে তার আঁতাত হয়ে গেছে। যে কারণে দেখেন না যুদ্ধ করতে যাচ্ছে না!
আর সেনাপতি বুঝতে পারছিলেন যে এটা আসলে একটা ফাঁদ। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সেনাপতি। এই ফাঁদে পা দিলেই তারা সেনাপতিকে হত্যা করবে, সৈন্যবাহিনী মিসমার হয়ে যাবে। আমাদের বরং অপেক্ষা করাটা ভালো।
রাজা বুঝে গেলেন। সেনাপতিকে বন্দি করে ফেললেন। এবং জেলে পাঠিয়ে দিলেন। তার ওপর অত্যাচারও হলো প্রচুর। এখন সেনাপতি নাই। রাজা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে যে, যাও ঝাঁপিয়ে পড়ো। এবং সেনাবাহিনী সব মারা গেল। এবং রাজ্য দখল হয়ে গেল।
কী বুঝলেন?
ভুল তথ্য। এটার পেছনে সঠিক তথ্য নেই! ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
তো এই যে ভুল তথ্য… এখন যুদ্ধের একটা উপকরণ হচ্ছে ‘রং ইনফরমেশন’।
আমরা কিন্তু প্রথম দিন প্রথম আলোচনায় বলেছিলাম যে, আমাদের জাতির যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এর প্রতিরোধ ক্ষমতা হচ্ছে অতুলনীয়। এর তুল্য কিছু নাই।
করোনা আসবে আমাদের দেশে। কিন্তু করোনায় কিছুই হবে না। সাধারণ জ্বর-সর্দির মতোই।
সাত মাস। করোনা এসছে, কতজন মারা গেছে? সাড়ে পাঁচ হাজার।
লক্ষ লক্ষ… ঐ সোনাভানের পুঁথির মতো অবস্থা। “লাখে লাখে ফৌজ মরে কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখি সাড়ে সাত হাজার”।
এটা হচ্ছে সোনাভানের পুঁথি। আরে পুঁথি কি? পুঁথির কাহিনী কী! হযরত আলী আর বীর হনুমান, অযোধ্যাতে দেখা হইল দুই পালোয়ান।
চিন্তা করেন! কোথাকার হনুমান, কোথাকার আলী। অযোধ্যায় নিয়ে এসে দুই জনের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দিল। ন্যাজাগুর্জ কেহ ধরে, কেহ রায় বাঁশ।
হনুমান বাঁশ নিয়ে আর আলী নেজাগুহ্য নিয়ে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে নামল। এর পরেতে আইল যোদ্ধা নামে আইন্দা-ছাইন্দা, ৮০ মণ তামাক নেয় নেংটির মধ্যে বাইন্ধা।
তো এই করোনার যে প্রচার, এবং আমরা আল্লাহ’র শুকরিয়া আদায় করি। আমরা সাত মাস আগে যে কথা বলেছিলাম, সারা পৃথিবীতে আমরা বলেছিলাম একমাত্র যে, না করোনা, সাধারণ জ্বর ভাইরাসের মতো, ফ্লুর মতো থাকবে। আসবে যাবে থাকবে। আমরাও থাকব।
“লাখে লাখে ফৌজ মরে কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দে… শুমার মানে গুণে, দেখি সাড়ে সাত হাজার”। ওখানে তো তবুও সাড়ে সাত হাজার ছিল, আমাদের তো সাড়ে পাঁচ হাজার আরকি।
তো মূল শক্তিটা কী? এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
এবং করোনায় আক্রান্ত বেশি হয়েছে কারা?
যারা ঘরবাড়ির মধ্যে নিজেদের বন্দি করে রেখেছিল। ঐ যে সেনাপতিকে বন্দি, যুদ্ধ করবে কীভাবে!
যে আসলে, জীবাণু-ভাইরাস আক্রমণ করলেই একজন অসুস্থ হয় না।
রোগতত্ত্ব গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে আইসিডিডিআরবি যৌথ গবেষণা চালিয়ে তারা বলেছেন যে, জুলাই মাসেই ঢাকায় ৪৫% মানুষের করোনা আক্রমণ হয়ে গেছে। বস্তির মানুষের মধ্যে এই হার ছিল ৭৪%।
বস্তির কয়জন মানুষ মারা গেছে!
তো সংক্রমণ হলেই মৃত্যু নয়। আড়াই কোটি মানুষের শহর ঢাকা। তার মধ্যে কতজন মারা গেছে! ঢাকাতে মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার।
বলবেন যে, মৃতের সংখ্যা কম দেখানো হচ্ছে। আসলে মৃতের সংখ্যা প্লাস-মাইনাস ৫/১০ জন কম বেশি হতে পারে। কারণ আমরা তো দাফন কার্যক্রমের সাথে জড়িত, লাশ যাবে কোথায় আমাদের হিসাবের বাইরে?
মৃত্যুর খবর অন্য যে কেউ পাওয়ার আগে আমরা পেয়ে যাই। কারণ মৃত ঘোষণার আগে আত্মীয়-স্বজনরা আমাদেরকে ফোন দেয়। মানে অফিসিয়ালি ঘোষণার আগে। কারণ তাদের আস্থা হচ্ছে আমাদের দাফন কার্যক্রমের ওপরে।
তো এখন কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ মানেই কিন্তু কী নয়? মৃত্যু নয়।
আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (সেনাপতি) যদি ঠিক থাকে, সিস্টেম যদি ঠিক থাকে, আপনি সুস্থ থাকবেন, আপনি ভালো থাকবেন।
[কোয়ান্টামম সাদাকায়ন, ১৬ অক্টোবর, ২০২০]