আলঝেইমার হান্টিংটন পার্কিনসন্স এবং মস্তিষ্কের বয়সজনিত রোগগুলোর যে ঝুঁকি এই ঝুঁকিটা কমে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এবং আগে ভুল ধারণা ছিল ডায়বেটিস যাদের আছে তারা রোজা রাখতে পারবে না। কিন্তু বাস্তব গবেষণা বলছে, যাদের ডায়াবেটিস তাদের রোজা রাখাটা আরো ভালো।
উচ্চরক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এবং আলসারের সমস্যাও কমে যায় রোজা রাখলে।
অর্থাৎ এখন থেকে ৩০/৪০ বছর আগে ডক্টররা যা বলতেন, রোজা না রাখার পক্ষে। দেখা গেল যে ঐ ঐ কারণ থাকলে রোজা আরো বেশি রাখা উচিৎ। এটা ডক্টরদের কথা।
আর আল্লাহর রসুল (স) তো বলেই গেছেন। তোমরা কেন রোজা রাখবে? যেন তোমরা সুস্থ থাকতে পারো। শারিরীকভাবে-মানসিকভাবে।
কারণ রোজা হচ্ছে দ্বিমুখী- দেহশুদ্ধি এবং অন্তর শুদ্ধি।
শুধু না খেয়ে থাকলে কিন্তু রোজা হয় না। না খেয়ে থাকাটা রোজার একটা অংশ।
সেকেন্ড পার্টটা কী? গীবত রাগ ক্ষোভ ঘৃণা ঈর্ষা এবং অন্যায় থেকে, যে অন্যায় মানুষের মনকে কলুষিত করে সে অন্যায়গুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
রোজা রাখলেন আর গীবত করলেন, ইউজলেস।
রোজা রাখলেন আপনাকে দেখে যদি আরেকজন বলে তার ‘রোজা লেগেছে’।
রোজা লাগা বোঝেন তো? বিকেলবেলা হলেই মেজাজ গরম! আর অন্যরা বলে যে অ্যাই! ওখানে যেও না, যেও না। উনি রোজাদার, রোজা লেগেছে। তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনার রোজা হয় নাই।
রোজা হবে সবসময় শান্ত। রোজার সময় যত গড়াতে থাকবে, মনটা তত শান্ত হতে থাকবে।
তো এজন্যে কী করতে হবে? এক হচ্ছে, খাওয়ার ব্যাপারে ফরমুলা।
আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি- আমরা যে জিনিসগুলো আমাদের সমাজের জন্যে প্রয়োজন সে কথাগুলো কিন্তু আমরা খুব নিঃসংকোচে বলি। নির্দ্বিধায় বলি এবং কোনো ভয়ভীতি ছাড়া বলি।
আসলে সব দেশেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোকে সব জায়গাতেই ব্যবসায়ীরা সবসময় চায় এটাকে ব্যবসা বানিয়ে ফেলতে। সবসময় যে-কোনো জিনিস।
যে-রকম আমাদের দেশে কিন্তু ইফতার পার্টির কোনোকিছু ছিল না!
এখন তো ইফতার পার্টি সবাই দিচ্ছে। নরেন্দ্র মোদিও ইফতার পার্টি দেন, ট্রাম্পও ইফতার পার্টি দেন। চিন্তা করেন।
তাহলে এটার সাথে ধর্মের সম্পর্কটা কী হলো! এটা তো আর ধর্মীয় ব্যাপার থাকল না, এটা তো রাজনৈতিক ব্যাপার হয়ে গেল বা সামাজিক ব্যাপার হয়ে গেল।
রসুলুল্লাহ (স) কি ইফতার পার্টি দিয়েছেন? ৫০ ধরনের আইটেম?
রসুলুল্লাহ (স) কী বলেছেন? খেজুর দিয়ে ইফতার করো।
ইফতার করতে হবে খেজুর দিয়ে। বলবেন যে কেন? কারণ খেজুরটা যখনই মুখে লালার সাথে মিশছে এটা ডাইরেক্ট সুক্রোজ হয়ে যাচ্ছে। এনার্জি। সুক্রোজ হচ্ছে গ্লুকোজের বাবা।
আমরা তো ইনস্ট্যান্ট এনার্জির জন্যে কী করি? গ্লুকোজ পানি খাই। গ্লুকোজের বাবার নাম হচ্ছে সুক্রোজ। মানে গ্লুকোজের চেয়েও এফেক্টিভ, কার্যকরী হচ্ছে সুক্রোজ, ডাইরেক্ট এনার্জি।
আরো যদি এটাকে এনার্জি পাওয়ার বাড়াতে চান তাহলে একটা খেজুর অনেকক্ষণ ধরে চোষেন। চকলেট যে-রকম চোষা হয়। বেশ কিছুক্ষণ চোষেন। এনার্জি লেভেলটা আরো বেড়ে যাবে।
আমরা এরকম এক্সপেরিমেন্ট করেছি যে ধরুন, দুটো-তিনটে খেজুর অনেকক্ষণ চোষা হলো। চোষার পরে পানি খাওয়া হলো। খাবারের পরিবর্তে পানি শুধু। সারাদিন চলে গেল, কোনো উইকনেস নাই, দুর্বলতা নাই।
খেজুর হচ্ছে ইনস্ট্যান্ট এনার্জি। খেজুর যখন চুষলেন, খেজুর যখন মুখের লালার সাথে মিশল, ইনস্ট্যান্ট সুক্রোজ হয়ে গেল- এনার্জি। তারপরে একটু পানি খেলেন। দেন নামাজ পড়েন। তারপরে রাতের খাবার খেয়ে নিন।
এবং এই যে ভাজাপোড়া- বাঙালির কোনো ঐতিহ্যের মধ্যেই এটা ছিল না, কোনোকালে না।
এটা হচ্ছে লক্ষ্ণৌ, নবাবী কারবার। লক্ষ্ণৌর ইসে থেকে ঢাকাইয়ারা আসল-এই চকবাজারের ইফতারি!
আরে! রোজার চেয়ে ইফতারির মানে কদর বেশি!
আমরা তখন তরুণ। আমাদের দেশে আসলে উর্দুওয়ালা যারা ছিল তারাই ইফতারির ব্যাপারে সবসময় অগ্রগামী ছিল। রোজা রাখুক না রাখুক ইফতার তাদের করতেই হবে।
একজন বলল যে, কেয়া! রোজা নেহি রাখহা তো ওসমে কেয়া হে? ইফতার নেকি করেঙ্গা তো ঈমান নেহি রাহেগা! রোজা রাখি নাই তাতে কী হয়েছে? ইফতার না করলে তো ঈমানই থাকবে না।
এবং এই ইফতার পার্টি এটা তাদের কালচার! এখান থেকে ইফতার শুরু হলো।
আমাদের পূর্বপুরুষরা কিন্তু কখনো এই ভাজাপোড়ার ইফতার না।
তারা অবশ্য খেজুর দেখত না! তারা জাস্ট সিম্পলি ভাত। সন্ধ্যার খাবার ভাত।
তো কী করবেন? এই ভাজাপোড়া খাবেন না।
এই যে ইফতারির উপদ্রব! ইফতারির গজব শরীরের ওপরে। মানে এত ভাজাপোড়া!
আমরা প্রথম এটা বললাম যে না, বর্জন করেন। এবং আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি, এখন ভাজাপোড়াটাকে কেউ আর এটাকে কেউ সমর্থন করেন না।
এবং আমার সবচেয়ে ভালো লাগল যে, চার না পাঁচ বছর আগে আমাদের এক গ্রাজুয়েট চিঠি লিখলেন, “গুরুজী! কী বললেন আপনি! বলার পরে তো এখন…”
তাদের তিনটা ইফতারির দোকান ছিল। বেইলি রোডে। তিনটাতেই লস। তো এখন আমরা কী করব?
আমি বললাম যে রোজার মাসে তো মানুষজনের স্বাস্থ্য নষ্ট করে উপার্জন বাড়াতে হবে, না। হালাল উপায়ে চিন্তা করেন। দেখবেন, রাস্তা বেরিয়ে যাবে।
অবশ্য তারা পরবর্তী সময় লিখেছেন তারা অন্য ব্যবসা শুরু করেন এবং সে ব্যবসাতে তারা আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাভবান হন।
আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি ১০ বছর আগে ইফতারির যত দোকান ছিল, আরে গলি গলিতে! ঘর থেকে বেরোনো যায় না, ইফতারি।
রোজাদার যত না, ইফতারি তার চেয়ে অনেক বেশি। এখন আলহামদুলিল্লাহ কমেছে। কারণ মানুষ সচেতন হয়েছে। এই ভাজাপোড়া বর্জন করবেন। ভাজাপোড়া খাবেন না।
দুই নম্বর হচ্ছে- কোনো সেহরি পার্টিতে যাবেন না। এটা আসলে ভ্রষ্টাচার ছাড়া আর কিছু না।
কিছু লোকের অনেক টাকা হয়ে গেছে। তারা কীভাবে এটা খরচ করবে!
ফুটানি করা ছাড়া তো খরচ করার কোনো উপায় নাই। সেহরি পার্টি।
এই দুবাইওয়ালাদের রোজা জানেন তো? তারা ইফতার থেকে শুরু করে। সারারাত খেতে থাকে। সেহরি পর্যন্ত খায়।
খেয়ে তারপরে ঘুম দেয়। দুপুরবেলা ওঠে। কোনো কাজকর্ম নাই। এবং যে কারণে এত অমানুষিক অমানবিক হয়ে উঠছে তারা!
সেজন্যে কী করতে হবে?
সেহরি পার্টি একদম বর্জন। এবং সেহরি পার্টিকে মনেই করবেন যে, এটা ভ্রষ্টাচার পার্টি।
সেহরি করবেন একদম খুব সিম্পল। এটুকু ভাত আর একবাটি সবজি। এর বেশি নয়।
সারাদিন আপনার কোনো ক্লান্তি থাকবে না। সেহরিতে কখনো মাছ-মাংস এগুলো খাবেন না। প্রোটিন খাবেন না। সেহরিতে ডিম খাবেন না।
বলবেন যে, রহস্যটা কোথায়? রহস্যটা খুব সিম্পল।
প্রোটিনটাকে হজম করার জন্যে ভাঙার জন্যে পানির প্রয়োজন হয় বেশি।
যখনই রিচ ফুড খাবেন তৈলাক্ত জিনিস বেশি খাবেন গোশত খাবেন, এটা হজম করার জন্যে পানির দরকার হয়। তৃষ্ণা লাগে বেশি।
এটা যখনই সেহরিতে খাবেন আপনার সারাদিন তৃষ্ণা লাগবে বেশি। কষ্টটা কিন্তু তৃষ্ণার। কষ্টটা কিন্তু ক্ষুধার না। আরে দু-তিন দিন না খেলে কিছু আসে যায় না তো।
কিন্তু কষ্টটা হয় পানির তৃষ্ণা। ভেতরে পানির ডিমান্ড। কারণ প্রোটিন ডিমান্ড করছে যে, আরো পানি আরো পানি আরো পানি।
আপনি তো পানি দিচ্ছেন না। কষ্ট হচ্ছে আপনার। এজন্যে সবজি এবং অল্প ভাত। একদম ঝরঝরে শরীর সারাদিন বোঝা যাবে না।
এবং আলহামদুলিল্লাহ আমি যা ফলো করতে পারি না তা আমি কখনো বলি না, আমি এড়িয়ে যাই।
এবং আমি করে উপকৃত হয়েছি। এবং সেজন্যে এই ফরমুলা দিয়েছি। যে না, আমরা নিজেরা আগে করে নিই। যা বলব সেটা করে আমার ওপরে কী এফেক্ট হয়। তারপরে আমরা বলি।
এবারের রমজান কী করবেন? ভাজাপোড়া বর্জন। খেজুর দিয়ে ইফতার করবেন। নামাজ পড়বেন। রাতের খাবার খেয়ে নেবেন।
তারপরে যদি একটু বেশি ক্ষুধা লাগে আচ্ছা, ১০টার দিকে আবার একটু কিছু খেলেন। কিন্তু আসলে প্রয়োজন হয় না! শরীরটাকে আপনি যেভাবে মেইনটেইন করবেন, শরীর সেভাবে সয়ে যাবে।
সেহরিতে- সেহরি অবশ্যই করবেন, ৩টার দিকে উঠেন। সেহরি করেন। তারপরে একটু ইবাদত করলেন। তারপরে ফজরের নামাজ পড়ে ব্যস মেডিটেশন করলেন।
অর্থাৎ রমজানটাকে পুরো কাজে লাগাতে হবে ইবাদতের জন্যে।
এবং রমজানকে কোনো অবস্থাতেই ভোজন উৎসবে পরিণত করবেন না।
হাঁ খাবেন, রিচফুড খাবেন। ঈদের দিন খাবেন। ঈদের পরের দিন খান। কিন্তু রমজানে রিচফুড যত না খান তত হচ্ছে ভালো।
এবং রমজানে ফল খাবেন- যতরকম ফল পাওয়া যায়, ফল খাবেন। এবং ইফতার করার পরে যে খাবার, এই খাবারে আপনি মাছ-মাংস রাখতে পারেন- কোনো অসুবিধা নাই।
দুধ রাখতে পারেন, ডিম ডাল সবই রাখতে পারেন। কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন যে, পরিমিত।
এভাবে যখন আপনি রোজা রাখবেন, তখন নিঃসন্দেহে আপনার রোজা খুব তৃপ্তির রোজা হবে।