লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় মা-বাবাকে বেঁধে রেখে এক কিশোরী গৃহবধূকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার গভীর রাতে উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের চর নেয়ামত গ্রামে ওই গৃহবধূর বাবার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। গতকাল রাত ৮টার দিকে স্থানীয় মিরাজ হোসেন ও অজ্ঞাতপরিচয় আরো তিনজনের নামে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা। এর আগে দুপুরে আসামি মিরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এই নারকীয় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ জানায়, প্রতিদিনের মতো রাতের খাওয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন ওই তরুণী। গভীর রাতে অজ্ঞাতপরিচয় একদল দুর্বৃত্ত হঠাৎ দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে ওই গৃহবধূকে একটি কক্ষে আটকে ধর্ষণ করে তারা। ধর্ষণ শেষে তাকে পিটিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে থেঁতলে ক্ষতবিক্ষত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পালিয়ে যাওয়ার সময় ঘরে থাকা টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্রও নিয়ে যায় তারা। পরে পরিবারটির চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গৃহবধূর এক নিকটাত্মীয় জানিয়েছেন, বছরখানেক আগে একই উপজেলার অন্য একটি এলাকায় তাঁর বিয়ে হয়েছে। কয়েক দিন আগে তিনি বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
নির্যাতনের শিকার নারীর বরাত দিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঘরে ঢোকা চারজনই মুখোশ পরা ছিল। ঘটনার সময় আটক মিরাজের মুখোশ খুলে গেলে তাঁকে চিনে ফেলেন। মিরাজ সম্পর্কে ভুক্তভোগীর ভাইয়ের মামাশ্বশুর। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মিরাজদের সঙ্গে তাঁদের (নারীর ভাই) মামলা চলছে। এর জের ধরে মিরাজের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি সংঘটিত হতে পারে।
গতকাল সদর হাসপাতালে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিমতানুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, ‘ঘটনার সময় পান খেতে গিয়ে মিরাজের মুখোশ খুলে যায়। এতে গৃহবধূ তাঁকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে, তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।’
চর আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত এ ঘটনাতে আমরা ব্যথিত। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি শারীরিকভাবেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমাদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।’ রামগতি থানার ওসি মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষণের বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে। ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় মিরাজ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্র: কালের কন্ঠ