সমাজে বউ-শাশুড়ির বৈরী সম্পর্ক নিয়ে যেমন নানা প্রবাদ আছে, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি কিংবা পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্বে অনেক ক্ষেত্রেই বউ-শাশুড়ির সম্পর্ককে দায়ী করা হয়৷
আজকের যুগের নারীদের অনেকেই চাকরিজীবী, তাই সবকিছু সামলে নিয়ে আগের দিনের মতো শাশুড়ির সেবা করা তাঁদের জন্য বেশ কঠিন৷ সেটা শাশুড়িকে বুঝতে হবে৷ আবার বউকেও বুঝতে হবে, শাশুড়ির দিকে মাঝে মাঝে কিছুটা মনোযোগ দেওয়া উচিত, বিশেষ করে ছুটির দিনে৷ তার মনটাও তো চায় আপনার কাছ থেকে কিছুটা সেবা পেতে। সময় পেলে শাশুড়ির সাথে গল্প করুন, স্বাস্থ্যের খবর নিন, শপিংয়ে যান কিংবা কোনো উপলক্ষে তাঁকে উপহার দিন৷ এতে সম্পর্ক সুন্দর হবে৷
আদরের কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে স্বামীগৃহে পাঠানোর পর প্রিয়নবী (সা.) তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এভাবে কাজ ভাগ করে দিয়েছিলেন যে ঘরের ভেতরের কাজ স্ত্রী করবে, আর বাইরের কাজ করবে স্বামী। (জাদুল মাআদ : ৫/১৬৯)
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করার এ রীতি সাহাবায়ে কেরামের জীবনেও দেখা যায়। হজরত কাবশা বিনতে কা’ব বিন মালেক (রা.) ছিলেন হজরত আবু কাতাদা (রা.)-এর পুত্রবধূ। কাবশা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আবু কাতাদা (রা.) [কাবশা (রা.)-এর শ্বশুর] ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে প্রবেশ করে তিনি অজুর পানি খোঁজ করেন। তখন কাবশা (রা.) শ্বশুরকে নিজ হাতে পানি ঢেলে দেন….। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭৫)
প্রতিটি ঘরে শাশুড়ির সাথে পুত্রবধূর দ্বন্দ্ব থাকে কেন?
এটা দূর করার জন্যে দুজনের কর্তব্য কী হওয়া উচিত?
পরিবারকে আপন ভাববেন
দায়িত্ব নেবেন স্বেচ্ছায়
সম্মান করবেন
পরিবারে সদস্যদের যত্ন নেবেন
সত্যটি মেনে নিন
নিজেকে পরিবর্তন করুন
ছেলেকে ভালো রাখবেন
একজন শাশুড়ি কী চান তার পুত্রবধূর কাছ থেকে? আসুন জেনে নিই পুত্রবধূদের প্রতি শাশুড়ির প্রত্যাশা।
শাশুড়ি এবং পুত্রবধূর দ্বন্দ্বের মূল কারণ সামাজিক। আমাদের উপমহাদেশের সমাজব্যবস্থায় পরিবারে যতদিন পর্যন্ত কোনো বউ পুত্র সন্তানের মা না হতো ততদিন তার অবস্থান নড়বড়ে থাকত।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ছেলেকে বলা হয় বংশের বাতি আর মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। যদিও এখন এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
এ সমস্ত কারণে মায়ের কাছে ছেলে হলো তার অবস্থান শক্ত করার খুঁটি। মা যখন এই ছেলেকেই বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে আসেন, তখন তিনি ভোগেন এক অন্তর্দ্বন্দ্বে।
অবচেতনভাবেই তিনি ভাবতে শুরু করেন, এখন হয়তো ছেলের কাছে তার গুরুত্ব কমে গেছে। সম্পর্কের টানাপোড়েনটা শুরু হয় এখান থেকেই।
শাশুড়িকে এই অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি দিতে বউয়ের ভূমিকাই হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শাশুড়ির চেয়ে বয়সে ছোট হলেও চিন্তাভাবনায় সে আধুনিক। তার উচিত শাশুড়ির মনে এরকম ধারণা তৈরি করা যে, আমি আপনার প্রতিপক্ষ নই।
আমি এসে আপনার ছেলেকে ছিনিয়ে নিচ্ছি না, বরং ছেলের সাথে সাথে আপনি আমাকেও পাচ্ছেন। একথা যদি আপনি শাশুড়িকে বোঝাতে পারেন, তাহলে দেখবেন দূরত্ব এমনিতেই কমে গেছে।