আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের সবার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে- পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা পরিবারের প্রতি ভালবাসা।
তো আমরা আলোচনা শুরু করব একটি গল্প দিয়ে।
আসলে যে-কোনো গল্পের একটা মজা আছে। স্টোরিটা টেল করা হয় বা বলা হয়। সেই গল্পই কালকে জয় করে যেটা শুনতে ভালো লাগে; যেটা হৃদয়কে স্পর্শ করে। সেটা বলার ভঙ্গিতে হোক অথবা লেখার ভঙ্গিতে হোক।
গল্প যদি প্রবন্ধের ভঙ্গিতে লেখা হয় সেই গল্প কখনো হৃদয়কে স্পর্শ করে না। গল্প; গল্প বলার ভঙ্গিতেই লিখতে হয় তাহলে সেটা হৃদয়কে স্পর্শ করে।
এটাও একটা কালজয়ী গল্প, আমাদের সুফিদের গল্প। এটা বিভিন্নভাবে আসতে আসতে আসতে আসতে একজন শুনেছেন তিনি আবার বলেছেন। তিনি শুনেছেন তিনি আবার বলেছেন। তিনি শুনেছেন তিনি আবার বলেছেন। কিছু ভুলে গেছেন, কিছু যোগ করেছেন।
আসলে কালজয়ী গল্পগুলো এইভাবেই জনে জনে বিবর্তিত হয়। তো গল্পটা নানানভাবেই প্রচলিত। কারণ সুফিদের যে গল্প, গল্পের মধ্য দিয়ে তারা শিক্ষা দিতেন। এবং সেই গল্প নানানভাবে ছড়িয়েছে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে।
বাবা বৃদ্ধ হয়েছেন। তেমন চলাফেরা করতে পারেন না। যৌবনের যে শক্তি স্বাভাবিকভাবে সেই শক্তি নাই। ছেলে টগবগে যুবক এবং ছেলের মধ্যেই বাবা তার সেই যৌবনের প্রতিচ্ছবি কল্পনা করেন এবং খুব তৃপ্তি পান যে আমার ছেলে আমার মতোই। আমি এই বয়সে যেরকম ছিলাম বরং মনে হয় যে আমার চেয়েও এক ডিগ্রি সে উঁচু।
একদিন বাবা খেতে বসেছেন। পরিবারের আরো সবাই আছেন। খাবার টেবিলে গল্প হয় সবচেয়ে বেশি; কথা হয় সবচেয়ে বেশি।
সারাদিন পরিবারের সদস্যরা নানান কাজে ব্যস্ত ছিল- নাতি ব্যস্ত ছিল; বৌমা ব্যস্ত ছিল; ছেলে ব্যস্ত ছিল। ছেলে এসেছে রাতের বেলা। অনেক ব্যস্ততা অনেক কাজ। ক্লান্তি আছে।
আমরা যারা কাজ করি ক্লান্তির সাথে বেশি থাকে বিরক্তি। সারাদিন যে এত কাজ করতে পেরেছি এটাই একটা বিরক্তির কারণ। এত কাজ কেন করতে হয় এবং কাজ যে কত গুরুত্বপূর্ণ; কাজ যে কত আনন্দের এটা যখন কেউ রিটায়ারমেন্টে যান তখন তিনি বোঝেন।
তো খাবার টেবিল। বাবার হাত একটু কাঁপে। বয়স হয়েছে। খাচ্ছেন। তো খেতে খেতে বাবার হঠাৎ মনে হলো যে, আজকে কি বার? তো ছেলেকে জিজ্ঞেস করছেন। কারণ ছেলে হচ্ছে তার সবচেয়ে আদরের। ছেলেকে জিজ্ঞেস করছেন যে আজকে কী বার? ছেলে বলল সোমবার।
একটু পরে খেতে খেতে আবার সে ভুলে গেছে। আবার জিজ্ঞেস করছেন যে আজকে কী বার?
ছেলেকেই জিজ্ঞেস করছেন। ছেলের বউ নাতি-নাতনি কাউকে না।
যে আজকে কি বার? ছেলে বলল যে সোমবার।
একটু পরে আবার ভুলে গেছে। আবার জিজ্ঞেস করছে আজকে না কী বার!
ছেলে তখন একটু জোরেই বলেছে, সোমবার। আবার ভুলে গেছে। কিছুক্ষণ পরে আবার জিজ্ঞেস করছে কী বার যেন বললি?
এইবার ছেলে গেছে ক্ষুব্ধ হয়ে খুব। “যে বললাম না সোমবার। কতবার বললাম ‘সোমবার’। তোমার মনে থাকে না! তোমার বার দিয়ে দরকারটা কি? তুমি কি বাইরে যাবা? তুমি কাজ করতে পারো? তোমার বার দিয়ে এত দরকার কি!”
ছেলেও বাবাকে ভালবাসত। কিন্তু বোঝা যায় যে অফিসের কাজের যে চাপ সেখানে হয়তো বিরক্তি প্রকাশ করতে পারে নাই। বিরক্তিটা পুরো এসে এই সোমবারের ওপরে পড়েছে! মানে বাবার ওপরে পড়েছে।
তো ছেলে যখন খুব ক্ষুব্ধ হয়ে গেছে বাবা চুপ; একেবারে চুপ। যতক্ষণ খাওয়া-দাওয়া করেছে আর কোনো কথা বলে নি। চুপ।
বাবার বয়স হয়েছে। এর মধ্যে দু-তিন দিন পরে হঠাৎ বাবা অসুস্থ হলেন এবং মারা গেলেন। তাকে হাসপাতালে নেয়ারও সময় পাওয়া যায় নি।
এবং এর মধ্যে ছেলের সাথে বাবার আর কথা হয় নি। বাবা মারা গেলেন। বাবার জন্যে যা যা করার স্বাভাবিকভাবে ছেলে করেছে। দাফন কাফন শেষ।
এখন ছেলে বাবার জিনিসপত্র ঘাঁটছে। আচ্ছা বাবার কি আছে? এর মধ্যে বাবার ডায়েরি। পুরনো ডায়েরি। বাবার ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল। অনেক ডায়েরি। প্রত্যেক বছরের একেকটা ডায়েরি। ডায়েরি ঘাঁটতে ঘাঁটতে দেখতে দেখতে ৪০ বছর আগের ডায়েরি অর্থাৎ সবচেয়ে পুরোনো একটা ডায়েরি সেটা উল্টাচ্ছে। উল্টাতে উল্টাতে দেখে যে ঘটনা। দিনের ঘটনা লিখছেন বাবা।
দিনটা সোমবার।
খোকার বয়স আজকে দুই বছর পুরো হলো। আজকে এক অদ্ভুত আনন্দের ঘটনা ঘটেছে। যে খোকা আমার সাথে হাঁটছে! ঘরের উঠানে আমার আঙুল ধরে হাঁটতে হাঁটতে খুব মজা পাচ্ছে সে।
হঠাৎ দূরে দেয়ালের ওপারে গাছে একটা কাক এসে বসল।
খোকা আমাকে জিজ্ঞেস করল বাবা, ওটা কী? আমি বললাম কাক। তো খোকাও উচ্চারণ করল ‘কাক’। আবার একটু পরে খোকা আমাকে জিজ্ঞেস করছে বাবা ওটা কী? আমি বললাম কাক। খোকা আবার বলছে কাক।
আবার একটু পরে জিজ্ঞেস করছে যে, বাবা ওটা কি? আমি বললাম কাক। খোকা বলে কাক। আর আমাকে জড়িয়ে ধরলো; কাক।
আবার একটু পরে আমাকে ছেড়ে আবার জিজ্ঞেস করে যে ওটা কি? আমি বললাম কাক। ও বলে কাক। আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে।
এবং ৩০ বার তাকে আমি কাক বলেছি এবং প্রত্যেকবারই সে কাক বলে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি এই বয়সে এত আনন্দ এর আগে কখনো পাই নি। যে কাক। বার বার সে জিজ্ঞেস করছে আমিও বলছি কাক, সেও বলে কাক।
এটা যখন সে পড়ছে দরদর দরদর করে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
যে বাবা এতবার কাক বলার পরও তার কোনো বিরক্তি ছিল না। আর আমি চতুর্থবার সোমবার বলতে গিয়ে তাকে ধমক দিয়েছি; আমি তার সাথে দুর্ব্যবহার করেছি। আর বাবাকে যে এত ভালবাসি আমার এই ভালবাসার স্মৃতি নিয়ে তো বাবা আমার কাছ থেকে যান নি। বাবা তো স্মৃতি নিয়ে গেলেন আমার বিরক্তির। কান্না কান্না কান্না।
তো আসলে আমরা সবাই কিন্তু বড় হয়েছি পরিবারে।
আমাদের কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের একটা বড় অংশ হচ্ছে পরিবার। তৃতীয় দিনের শেষ আলোচনা এবং চতুর্থ দিনের প্রথম আলোচনার পুরোটাই হচ্ছে পরিবারকে নিয়ে যে, পরিবার কীভাবে সুন্দর করা যায়।
আজকে আমরা যে জ্ঞানী হয়েছি; আমরা যে এত কিছু পারি; বাবা-মায়ের যে বিরক্তিহীন ভালবাসা মমতা ছাড়া আমাদের এই জ্ঞান… বাবা-মা শুধু কাক শেখান নাই। যা-কিছু আমরা জানি সবকিছুর শিক্ষার শুরুটাই হচ্ছে মা এবং বাবা। আমাদের পরিচয়ের শুরুটাই হচ্ছে আমাদের মা এবং বাবা। আমাদের পরিচয়ের শুরুটাই হচ্ছে পরিবার।
আমরা আজকে যে যে অবস্থানে আছি এই অবস্থানের পেছনে যদি আমরা চিন্তা করি যে আমাদের পরিবারের ভূমিকাটা কী?
যাদের মা বা বাবা ছোট বয়সে মারা গেছেন সেটা আলাদা কথা আর কি। তারা বোঝেন যে আসলে মা-বাবার অভাবটা কী?
যারা বাবার স্নেহে লালিত হয়েছেন মায়ের কোলে লালিত হয়েছেন এবং খোকা থেকেছেন ৩০ বছর ৪০ বছর পর্যন্ত বা বেবি থেকেছেন ৩০ বছর বা ৪০ বছর পর্যন্ত তারা আসলে মা-বাবার আদরটা যে কী যত্নটা যে কী এটা তারা আসলে কখনো বুঝতে পারবেন না।
মা-বাবা হচ্ছেন শুরু পরিবারের। তারপরে আমরা; আমি এবং আমার স্ত্রী বা আমি এবং আমার স্বামী। কিন্তু আমার মা-বাবা হচ্ছেন শুরু। ঠিক সেখান থেকে আমরা শুরু।
তো পরিবারটা কী? ধরুন আমাদের পরিবার কি হওয়া উচিত? আমার মা-বাবা আমার স্ত্রীর মা-বাবা। আমার মা-বাবা আমার স্বামীর মা-বাবা। তারপরে হচ্ছে আমাদের সন্তান।
এবং সন্তানের চেয়েও বেশি অধিকার হচ্ছে আমার মায়ের আমার বাবার। এবং একজন পুরুষের ওপরে স্ত্রীর চেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। এটা আল্লাহর রসুলের শিক্ষা।
স্ত্রীর অবশ্যই অধিকার রয়েছে। স্বামীর অবশ্যই অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকের ওপর সবচেয়ে বড় অধিকার হচ্ছে তার মায়ের, তার বাবার। এবং সেবা পাওয়ার যে অধিকার এটা হচ্ছে মায়ের এবং তারপরে হচ্ছে বাবার।
একজন আল্লাহর রসুল (স) কে জিজ্ঞেস করছিলেন যে আমার ওপরে আমার সেবা পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? রসুলুল্লাহ (স) বললেন যে তোমার মায়ের।
আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। যে তারপরে কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। তারপরে কার? তোমার বাবার।
বাবা এসেছেন চতুর্থবারে। প্রথম তিনবার মা।
আসলে মায়ের শ্রম মায়ের ভালবাসা মায়ের মমতা, বাবার শ্রম বাবার মমতা…
আসলে আমরা আমাদের সন্তানের জন্যে যা করি; যে আকুতি এই আকুতিটা খুব ভালো। কিন্তু এই আকুতি এখন কেন কাজ করছে না?
কারণ আমাদের মায়ের প্রতি আমার বাবার প্রতি সেই আকুতি আমাদের নাই।
সন্তান যদি দেখে যে আপনি আপনার মা-বাবাকে ভালবাসছেন। আপনি আপনার মা-বাবার সাথে বিরক্ত হন নাই। আপনি আপনার মা-বাবার সাথে সবসময় সদাচরণ করেছেন, আপনার সন্তান এটাকেই উদাহরণ হিসেবে নেবে। এবং সে এটা ফলো করবে।
সন্তানকে বক্তৃতা দিলে সন্তান ফলো করে না। সন্তান দেখে যে আমার মা আমার বাবা কী করছে সেটা যখন সে দেখে সে সেটা ফলো করে। সে সেটা অনুসরণ করে।
অতএব আপনি যদি চান যে আপনার সন্তান আপনার কথা শুনুক তাহলে আপনি আপনার মা এবং বাবার কোনোকিছুতে বিরক্ত হবেন না।
একটা ছোট্ট শিশু যেরকম বার বার একটা কথা জিজ্ঞেস করে; আপনার বাচ্চা যদি বার বার একটা কথা জিজ্ঞেস করে আপনি যদি বিরক্ত না হন তো আপনার বাবা যদি জিজ্ঞেস করে আপনার মা যদি জিজ্ঞেস করে কেন বিরক্ত হবেন আপনি!
এবং এই বিরক্ত হওয়াটা কখনোই জাস্টিফাইড না। কখনো না।
কারণ জীবনে মা-বাবার দোয়াটা হচ্ছে খুব বড় জিনিস।
আপনি আপনার মা-বাবার দোয়া থেকে যদি বঞ্চিত হন আপনার সন্তানকে আপনি দোয়া করেও কোনো লাভ হবে না।
কারণ আপনি তাই পাবেন যা আপনি করেছেন। আপনি তাই পাবেন যা আপনি দিয়েছেন। আপনি আপনার মা-বাবাকে যা দেবেন, আপনার সন্তানও আপনাকে তা-ই দেবে।
সন্তানের মডেল কিন্তু হচ্ছে মা এবং বাবা। ভালো হলেও মা-বাবা; খারাপ হলেও মা-বাবা। মা-বাবা যদি খারাপ হয় সে ঐ খারাপটাকেই ফলো করবে; ভালো কথা অনুসরণ করবে না।
ধরুন আপনি বাড়ীর বাইরে দুদিন থাকছেন, সিরিয়াল দেখতে পারেন নাই। বাড়ি গিয়ে যদি ঐ পুরনো সিরিয়াল আচ্ছা দুদিন তো মিস গেছে (আজকাল তো সবই দেখতে পাওয়া যায়) ঐটা দেখি!
আপনার সন্তান কী করবে? আপনি সন্তানকে ভার্চুয়াল ভাইরাসমুক্ত রাখবেন, হবে না।
সন্তানকে ভার্চুয়াল ভাইরাসমুক্ত রাখতে হলে আগে আপনাকে ভার্চুয়াল ভাইরাসমুক্ত হতে হবে।
আমরা আমাদের মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আসলে মা-বাবার দোয়া কোনো না কোনোভাবে আমাদের ওপর ছিল বলেই আমরা এই আল্লাহর পথে আসতে পেরেছি; আমরা কল্যাণের পথে আসতে পেরেছি; শান্তির পথে আসতে পেরেছি। এবং মা-বাবার দোয়া এর চেয়ে বড় জিনিস আর হয় না। এর চেয়ে ভালো জিনিস আর হয় না।
অতএব পরিবারের শুরু হচ্ছে মা-বাবা। তারপরে আপনার স্ত্রী বা আপনার স্বামী তারপরে আপনার সন্তান। যদি এই সিরিয়ালটাকে ফলো করতে পারেন মমতার দিক থেকে কর্মের দিক থেকে আপনার সন্তান সুসন্তান হবে। আপনার সন্তানও ঠিক সে একইভাবে আপনাকে দেখবে যেভাবে আপনি আপনার মা-বাবাকে দেখেছেন।
আমি এক বাবার কথা জানি। তার মা মারা গেছেন। মায়ের অসিয়ত ছিল যে তার বাবার সাথে কবরের পাশেই যেন তাকে কবর দেয়া হয়।
তো মারা গেছেন সকালবেলা। এবং লাশ যদি নিয়ে যেতে হয় তাহলে তাকে রওনা দিতে হবে।
ছেলে স্কুলে। পাশের বাসার কলিগকে বলে গেলেন আমার ছেলে আসলে তাকে একটু দেখেন।
ছেলেকে রেখেই মায়ের লাশ নিয়ে চলে গেলেন। নদী পথে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার পথ। যখন বুড়িগঙ্গায় গিয়েছেন মাঝি বলল যে, না আমি লাশ নিয়ে যাব না।
তো শেষ পর্যন্ত মাঝিকে রাজি করালো কীভাবে? যে ঠিক আছে তুমি বসে থেকো আমি নৌকা বাইবো। এবং সে নিজে নৌকা বেয়ে মায়ের লাশ নিয়ে গেল।
ছেলে স্কুল থেকে এসে দেখল যে সবকিছু বন্ধ। বাসায় কেউ নাই। পাশের বাসার প্রতিবেশী তাকে নিয়ে গেল। তার যত্ন আত্তি করলো। থাকার ব্যবস্থা করলো।
আগেকার দিনে তো প্রতিবেশীরা খুবই ভালো ছিল। প্রতিবেশীর খোঁজখবর রাখত। এখন তো একদিকে প্রতিবেশী মারা গেছেন আরেক দিকে পাশের বাসায় লারেলাপ্পা গান হচ্ছে উচ্চগ্রামে।
তো বাবা যখন ফিরে এলেন; ছেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করল আমাকে রেখে গেলে কেন? বাবা বলল যে দেখ, তোমার দাদির শেষ ইচ্ছা ছিল তার কবর যেন তোমার দাদার পাশে হয়। এবং আমি যদি তখন না যেতাম তাহলে তোমার দাদির এই শেষ ইচ্ছা পূরণ হতো না।
এই ছেলে ওটা মনে রেখেছে যে তার বাবার কাছে তার মা কত প্রিয় ছিল।
এবং সেও তার মা-বাবাকে কখনো উহ আহ শব্দ করতে দেয় নি। মা-বাবার যত প্রয়োজন সে পূরণ করেছে। ঐ স্মৃতিতে যে না আমার বাবা তার মায়ের লাশ ছয় ঘণ্টা নৌকা বেয়ে আর কি।
ধরেন একজন কর্মজীবী মানুষ যার নৌকা বাওয়ার অভ্যাস নাই সে নৌকা বেয়ে মাঝিকে আরাম দিয়ে মায়ের লাশ নিয়ে গেছে। ছেলে ভোলে নাই। ছেলেও তার মা-বাবাকে সেভাবে সম্মান করেছে। এবং শেষ বয়সেও সেইভাবে দেখেছে যেভাবে তার বাবা তার মা-কে দেখে ছিল।
অতএব আপনি আপনার মা-বাবাকে যেভাবে স্মরণ করবেন; যেভাবে লালন করবেন; যে ব্যবহার করবেন যে আচরণ করবেন আপনার সন্তান কিন্তু দেখছে।
এবং সন্তানের কোনো দুঃখ নাই যে তাকে রেখে তার বাবা চলে গেছে তার মাকে নিয়ে। তার দাদির ইচ্ছা যে পূরণ করেছে এটাই সে ছেলে নিজের খুব গর্ব মনে করত যে আমার বাবা এরকম ছিল।
তো আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব। আল্লাহ যেন মা-বাবার। যাদের মা-বাবা এখনো আছেন তাদের দোয়া নিয়ে যেন আমরা পৃথিবী থেকে যেতে পারি। আর যাদের মা-বাবা চলে গেছেন তাদের জন্যে যেন আমরা দোয়া করতে পারি।
পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে কবুল করুন। সবাই ভালো থাকুন। খোদা হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম।
[শ্রদ্ধেয় গুরুজী, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০]