এটা একটা সুন্দর প্রশ্ন। আসলে সফল হওয়ার জন্যে উপকরণ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সে উপকরণগুলো বাইরে কোথাও খুঁজে পাবেন না, বরং তার সবটাই আছে আপনার নিজের মধ্যে।
ধরুন, আপনার দেহ। পাঁচ শতাধিক মাংসপেশি, দুই শতাধিক হাড়, ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ বা সেলের সমন্বয়ে গঠিত এই শরীরের প্রতিটি সেলে খাবার পৌঁছানোর জন্যে রয়েছে শিরা ও ধমনীর ৬০ হাজার মাইল দীর্ঘ পাইপ লাইন। আর আপনার হার্ট কোনোরকম ক্লান্তি বা প্রতিবাদ ছাড়াই প্রতিদিন এক লক্ষবার স্পন্দনের মাধ্যমে ১৬ শত গ্যালনেরও বেশি রক্ত পাম্প করে দেহকে সচল রাখছে। আর এ সবকিছুই হচ্ছে এক অসাধারণ দক্ষ স্বয়ংক্রিয় সমন্বয়প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এরকম বিস্ময়কর কর্মক্ষমতাসম্পন্ন দেহ ধারণ করার পরও যদি আপনি মনে করেন আপনার কোনো উপকরণ নেই, তাহলে এর চেয়ে ভ্রান্তি আর কিছু হতে পারে না।
আবার আপনি যদি নিজেকে অভাবী মনে করেন, তাহলে আপনার জানা থাকা দরকার যে, মস্তিষ্ককে নিউরোসায়েন্টিস্টরা সবচেয়ে আধুনিক কম্পিউটারের চেয়েও কমপক্ষে ১০ লক্ষ গুণ শক্তিশালীরূপে বর্ণনা করেছেন। তাহলে কম্পিউটারের দামের অনুপাতে আপনার ব্রেনের মূল্য কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ হাজার কোটি টাকা পুঁজির মালিক আপনি। এরপরও আপনি অভাবী হন কীভাবে?
মস্তিষ্কের মাত্র একটি বিষয়ও যদি আপনি দেখেন, তাহলেও এর বিশাল কর্মক্ষমতা ও প্রতিটি মানুষের অফুরন্ত সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারবেন। মস্তিষ্কের ১০০ বিলিয়ন নিউরোন সেলের প্রতিটি নিউরোন এক হাজার থেকে পাঁচ লক্ষ নিউরোনের সাথে সংযুক্ত। প্রতিমুহূর্তে কমপক্ষে ১০০ ট্রিলিয়ন যোগাযোগ ঘটছে মস্তিষ্কে। প্রতিটি নিউরোন মস্তিষ্কের যে-কোনো নিউরোনের সাথে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম। কতগুলো সংযোগ সম্ভব? যুক্তরাষ্ট্রে মেডিটেশন সংক্রান্ত গবেষণার অগ্রপথিক হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর ডা. হার্বার্ট বেনসন খুব চমৎকারভাবে বলেছেন, ‘সংখ্যাটি হবে : ২৫,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০। এটাকে অন্যভাবেও দেখতে পারেন-আপনি আপনার টেবিলে একটার ওপর একটা সাধারণ সাইজের টাইপ করার কাগজ রাখুন। রাখতে থাকুন। এটা উঁচু হতে থাকবে। আপনি যদি আপনার মস্তিষ্কের সম্ভাব্য নিউরোন সংযোগ-সংখ্যার সমসংখ্যক কাগজ রাখতে যান, তাহলে কাগজের ঢিবি উঁচু হতে হতে চাঁদ পার হয়ে সৌরজগৎ পার হয়ে গ্যালাক্সি পার হয়ে যাবে। এমনকি আমাদের জানা মহাবিশ্বের সীমানা-১৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ-পার হয়ে যাবে। তারপরও কাগজ রয়ে যাবে।’
আর সভ্যতার সবকিছুর পেছনেই রয়েছে এই ব্রেনের ক্ষমতার সৃজনশীল প্রয়োগ। যে মানুষ যাত্রা শুরু করেছিল গুহা থেকে বা জঙ্গল থেকে, সে মানুষই এখন তৈরি করছে গগনচুম্বী অট্টালিকা, মহাকাশযান বা সুপার কম্পিউটার। মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে দেহের কার্যক্ষমতাকেও সে বাড়িয়েছে বহুগুণ। জয় করেছে দেহের সীমাবদ্ধতাগুলো। সময় যত এগুচ্ছে মানুষ মস্তিষ্কের সামর্থ্যকে তত বেশি বেশি কাজে লাগাচ্ছে। প্রযুক্তি শিল্প সাহিত্য—প্রতিটি ক্ষেত্রে তৈরি করছে নতুন দিগন্ত। তার মানে জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, প্রতিটি মানুষ সুপ্ত জিনিয়াস। মেধা তার মস্তিষ্কে ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। একে জাগিয়ে তুলেই মানুষ আপাত সব অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আমরা ২০ বছর ধরে যে কথাগুলো বলে এসেছি, গবেষক ডেভিড শ্যাংক-এর সম্প্রতি প্রকাশিত বই ‘জিনিয়াস ইন অল অফ আস’-এ সে কথাকেই একটু ভিন্নভাবে বলা হয়েছে, ‘জন্মের সময় দিয়ে দেয়া হয়েছে—এমন আলাদা কোনো ‘গোল্ডেন জিন’ নেই। বিশেষ মেধা প্রকৃতিগত নয় বরং মেধা হচ্ছে অদম্য ইচ্ছা আর প্রাণান্ত প্রয়াসের ফসল। আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন, অদম্য সাহস আর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কেউ সফল, খ্যাতিমান ও জিনিয়াস হিসেবে বিখ্যাত হতে পারে।’
অতএব বুঝতেই পারছেন, প্রাচুর্যবান হওয়ার জন্যে যা যা উপকরণ প্রয়োজন সবই আছে আপনার মধ্যে। নিজের ওপর বিশ্বাসে অটল থাকুন, নিরলস পরিশ্রম করুন আর অন্তর্গত শক্তিকে লক্ষ্য অর্জনে কাজে লাগান। আপনি সফল হবেন।