নিজের যত্ন আমরা কীভাবে নিতে পারি, কীভাবে সুস্থ থাকতে পারি! এবং এই যে গ্রীষ্ম-বর্ষা, যে সময়টায় মানুষ সবচেয়ে বেশি রোগাক্রান্ত হয় অসুখ-বিসুখ হয় সেই সময়ে আমরা কীভাবে সবচেয়ে সুস্থ থাকতে পারি, রোগমুক্ত থাকতে পারি।
এবং আজকে আমরা এই সিজনের এই মৌসুমের এমন একটি ফল নিয়ে আলোচনা করব যেটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়, ফল হিসেবে খাওয়া যায়, এবং সেটার বিচিও খাওয়া যায়।
মাংসের বিকল্প কাঁঠাল
আমরা খুব আনন্দিত যে, কাঁঠাল আমাদের কি ফল? জাতীয় ফল! কারণ আমরা জাতি হিসেবে যে, একটা সেরা জাতি এটার প্রমাণ হচ্ছে আমাদের জাতীয় ফলও হচ্ছে সেরা ফল।
এবং এই কাঁঠাল কাঁচা হোক বা পাকা, সবজি হিসেবে বা ফল হিসেবে বা বিচি হিসেবে এর কোনো তুলনা নাই। ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এগুলোর আকর হচ্ছে এই কাঁঠাল।
এবং আমরা এত কষ্ট করে একটা গরু-খাসি জবেহ করে, তারপরে ছিলে মাংস প্রসেস করে-রান্না করে খাচ্ছি এবং এই যে মাংসের যে উপকার এই মাংসের বিকল্প হিসেবে এখন কিন্তু পাশ্চাত্য দেশগুলোতে, ইউরোপ-আমেরিকাতে কাঁচা কাঁঠাল তারা ব্যবহার করছে।
কারণ কাঁচা কাঁঠাল রান্না করতে পারলে মাংসের মতোই স্বাদ এবং মাংসের চেয়ে উপকারি। মাংসের যে ক্ষতিকর প্রভাবগুলো রয়েছে সেটা কাঁচা কাঁঠালে নাই। কাঁচা কাঁঠালে উপকার ছাড়া কোনো ক্ষতি নাই কোনো অপকার নাই।
কাঁঠালের যত গুণাগুণ
এবং সবচেয়ে মজা কি? কাঁঠালে যে প্রোটিন, এই প্রোটিনের পরিমাণ হচ্ছে, এক কাপ পাকা কাঁঠালে পেয়ারার চেয়ে বেশি প্রোটিন রয়েছে, কলার চেয়ে দ্বিগুণ প্রোটিন রয়েছে এবং আপেল আমের চেয়ে চারগুণ প্রোটিন রয়েছে। এটা হচ্ছে পাকা কাঁঠাল।
কাঁচা কাঁঠালে প্রোটিন পাকা কাঁঠালের চেয়ে দ্বিগুণ। কাঁচা কাঁঠাল যেটা এঁচোড়, এঁচোড়ে প্রোটিন হচ্ছে পাকা কাঁঠালের চেয়ে দ্বিগুণ। আর কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে পাকা কাঁঠালের চেয়ে তিনগুণ বেশী প্রোটিন।
তাহলে, আপেলের চেয়ে কতগুণ বেশি হলো? চারগুণ হচ্ছে পাকা কাঁঠালে। পাকা কাঁঠালের চেয়ে তিন গুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে কাঁঠালের বিচিতে! তাহলে, কাঁঠালের বিঁচি আপেলের চেয়ে কত? ১২ গুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে কাঁঠালের বিচিতে!
আমরা এইজন্যে অত্যন্ত-অত্যন্ত আনন্দের সাথে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যে, পরম প্রভু আমাদের দেশে কাঁঠাল দিয়েছেন প্রচুর। এতো কাঁঠাল এবং কাঁচা কাঁঠালের মজা কি এঁচোড় যেটা এখানে পাকা কাঁঠালের চেয়ে শুধু প্রোটিন বেশি না, ডায়েটারি ফাইবার এটাও বেশি রয়েছে।
কাঁঠাল কীভাবে রোগ প্রতিষেধক এবং বলকারক?
এবং আয়ুর্বেদের সূত্রানুসারে কাঁঠাল হচ্ছে, বলকারক, রোগ প্রতিষেধক এবং ত্বক ফর্সাকারক ।
আসলে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি অধিদফতর তাদের তথ্যানুসারে কাঁঠালের যে গুণ; ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৯৫ কিলোক্যালরি এনার্জি রয়েছে, ১.৭২ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে, ০.৬৪ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে, ২৩.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, ১.৫ গ্রাম ফাইবার রয়েছে (ডায়েটারি ফাইবার) এবং ১০.১ গ্রাম সুগার রয়েছে এবং ২৮৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে, ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম আছে এবং ভিটামিন সি আছে ১৩ মিলিগ্রাম।
তো আসলে, আমাদের কাঁঠাল যে রকম জাতীয় ফল; একইভাবে এটা পুষ্টি, শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধে অনন্য। এবং কাঁঠালের এঁচোড়, কাঁঠাল এবং কাঁঠালের বিচি মানে কাঁচা কাঠাল, পাকা কাঁঠাল এবং কাঁঠালের বিচি এতে দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় প্রায় সব ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে এবং রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টি আক্সিডেন্টস যা মানুষকে ভেতর থেকে প্রাণবন্ত রাখে ।
এবং আয়ুর্বেদের সূত্র হচ্ছে, যে অঞ্চলে যে মৌসুমে যে ফল হয়,সেই অঞ্চলে, সেই মৌসুমে যে রোগ হয়, সে রোগের প্রতিষেধক এই ফলে থাকে । তো আপনারা যদি একটু চিন্তা করেন, গ্রীষ্ম এবং বর্ষা, গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালের যত রোগ আছে সব রোগের প্রতিষেধক এই কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে।
এই সময়ে কী হয়? ফ্লু হয়, ভাইরাস জ্বর হয় এবং বিভিন্ন প্রকার জ্বর হয় । তারপরে, আর কি হয়? পানিবাহিত রোগ-পেটের পীড়া হয়। এই সমস্ত পীড়ার এই সমস্ত রোগের প্রতিষেধক কাঁচা কাঠাল, পাকা কাঁঠাল, কাঁঠালের বিচি।
কাঁঠালের উৎপাদন যেভাবে বাড়বে
আমরা যদি শুধু গ্রীষ্ম আসার সাথে সাথে কী শুরু করি? কাঁচা কাঁঠালের তরকারি খাওয়া শুরু করি; কাঁচা কাঁঠাল কিন্তু আমরা যত তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করি তত ভালো—কারণ তত কাঁঠাল গাছ হবে । তা না হলে দেখা যাবে যে, আমাদের কাঁচা কাঁঠাল সব বিদেশে রপ্তানী হয়ে যাচ্ছে। আমরা পাচ্ছি না যদি আমাদের উৎপাদন না বাড়াই ।
তাহলে কী করবে? বিদেশীরা বেশি দাম দিয়ে আমাদের এই কাঁচা কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাবে। তো, আমরা কাঁচাও খেতে পারব না, পাকাও খেতে পারব না। আর যদি, এখন থেকে কাঁচা কাঁঠাল খাওয়া শুরু করি তাহলে গাছের পরিমাণ বাড়তে থাকবে, মানুষ গাছ লাগাতে থাকবে। কাঁঠালের উৎপাদন বাড়তে থাকবে। যেভাবে ডাবের উৎপাদন বেড়েছে—কাঁঠালের উৎপাদন বাড়তে থাকবে।
অলরাউন্ডার ফল কাঁঠাল
আমরা কাঁচা কাঁঠাল খেতে পারব, পাকা কাঁঠাল খেতে পারব, কাঁঠালের বিচিও খেতে পারব। কাঁচা কাঁঠাল, পাকা কাঁঠাল, কাঁঠালের বিচি এটা হচ্ছে সুপার ফুড। সুপার ফুড! এবং একটা কাঁঠালের মধ্যে তিনটা সুপার ফুড—কাঁচা কাঠাল, পাকা কাঁঠাল এবং বিচি। কোনো কোনো গুণ কাঁচা কাঁঠালে বেশি, কোনো কোনো শক্তি পাকা কাঁঠালে বেশি এবং কোনো কোনো শক্তি বিচিতে বেশি। মানে সে এক! কোনোটা কোনোটার চেয়ে কম না।
এবং এ জন্যেই এটা আমাদের জাতীয় ফল—এটা হচ্ছে অলরাউন্ডার ফল আরকি! অলরাউন্ডার কি রাউন্ডার? অলরাউন্ডার ফল! কাঁঠাল কি?! অলরাউন্ডার ফল!!
কাঁচা কাঁঠালের উপাদান
কাঁচা কাঁঠালে কী আছে? পর্যাপ্ত ভিটামিন এ রয়েছে যেটা চোখের জন্যে খুব উপকারি। তারপরে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ভিতামিন বি ৬! যেটা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এবং ভিটামিন সি! প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
এবং কাঁচা কাঠালে যে ক্যালসিয়াম রয়েছে এটা হচ্ছে হাড়ের যে সুরক্ষা, এ হাড়ের সুরক্ষায় উপকারি। পটাসিয়াম যেটা রয়েছে এটা অবশ্য প্রবীণদের জন্যে বিশেষ উপকারি। তাদের রক্তচাপটাকে নিয়ন্ত্রণ করে।.পটাশিয়ামের সাথে ম্যাগনেশিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করে ।
কাঁচা কাঁঠালে যে ফাইটো-নিউট্রেন্টস রয়েছে এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং কাঁচা কাঠালে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে এটা বার্ধ্যকের গতিকে ধীর করে মানে বুড়ো হতে দেয় না। এটা তরুণ রাখে! ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় কাঁচা কাঠাল!
তো, অতএব, রঙ একটু ফর্সা করতে চাইলে কি করতে হবে? কাঁঠাল খেতে হবে, কাঁচা কাঁঠালের সবজি। কাঁচা কাঠালে চর্বি নাই। যার ফলে, কাঁঠাল যতই খাওয়া হোক ওজন বাড়ার সুযোগ নাই।
এবং কাঁচা কাঁঠালে পর্যাপ্ত ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যেটা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে; মানে অনেক্ষণ পর্যন্ত পেটে থাকে, ক্ষুধা কম লাগে। অতএব, যারা একটু স্লিম হতে চান, কি করবেন? কাঁচা কাঁঠাল খাবেন!
এই যে কাঁচা কাঁঠাল, এটা মাংসের যে রকম আঁশ; কাঁচা কাঠালের এঁচোড়ে কি হয়? আঁশটা ঐরকম লাগে? মাংস-মাংস লাগে? লাগে কি লাগে না? হ্যাঁ লাগে!
তো এবং এটা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। তারপরে আবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে! কোলনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। অ্যাসিডিটি এবং আলসার রোগ প্রতিরোধসহ পেটের যত পীড়া আছে, এই পীড়া নিরাময়ে কাঁচা কাঁঠাল সহযোগিতা করে ।
যখন গরম আসে তখন কিন্তু পেটের পীড়া শুরু হয়। এবং এই সময়েই স্রষ্টা কী করেছেন আমাদের জন্যে? কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে দিয়েছেন! যে, তোমরা কাঁচা কাঁঠাল খাও! এখন যদি কাঁচা কাঁঠাল না খেয়ে আমরা যদি পেটের পীড়ায় ভুগি—পেট খারাপ করে, তো এটার জন্যে কে দায়ী? আমরা দায়ী আল্লাহ তো দিয়ে দিয়েছেন, ঝুলিয়ে রেখেছে! এরপরে শুধু পেড়ে-কেটে রান্না করে খাওয়া!
এবং ডায়বেটিক রোগীরা যারা পাকা কাঁঠাল খেতে ভয় পান, তারা কাঁচা কাঁঠাল নিশ্চিন্ত মনে খেতে পারেন । কেন? কারণ, এই কাঁচা কাঁঠাল রক্তে সুগার এর মাত্রা বাড়ায় না । শুধু তাই না, এই কাঁচা কাঁঠাল হচ্ছে একটা লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাবার। এটা যেহেতু লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাবার,ভাত এবং রুটির বদলে কাঁচা কাঠাল খাওয়া যেতে পারে।
কাঁচা কাঁঠালের আরেক নাম গাছ-পাঠা কেন?
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রিসার্চ সার্ভিসের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এটা তাঁরা প্রমাণ করেছেন যে, ভাত-রুটির পরিবর্তে কাঁচা কাঁঠাল খাওয়া যেতে পারে। এবং নিরামিষভোজী বা ভেগান যারা খান, ভেগান ডায়েট যারা অনুসরণ করেন; কাঁচা কাঁঠালকে মাংসের বিকল্প হিসেবে তারা খেতে পারেন এবং এটা প্রোটিনের একটা চমৎকার ভালো উৎস। এবং সেইসাথে এটা মাংসের মতোই সুস্বাদু। এইজন্যে অনেকে এটাকে বলেন নিরামিষ মাংস।
এবং এইজন্যে আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় কাঁচা কাঁঠালকে ‘গাছ-পাঁঠা’ নাম দিয়েছে পাঁঠার মাংস যে রকম খায়, এটা গাছে হয় বলে এটাকে গাছ-পাঁঠা বলা হয়। কাঁঠা কাঁঠাল—প্রচুর আয়রন রয়েছে এবং এটা রক্তের লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। যাদের রক্ত-স্বল্পতা রয়েছে, কাঁচা কাঁঠাল এবং পাকা কাঁঠাল দুটোই তাদের জন্যে সমান উপকারি ।
এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামটরি মানে প্রদাহরোধী উপাদান রয়েছে এই কাঁচা কাঁঠালে। যে কারণে, আর্থ্রাইটিস বা এই জাতীয় রোগ উপশমে এটা খুব সহায়ক হয়।
তো, আমরা আগেই বলেছি যে, কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ-ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম এইজন্যে এটা খেলে ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না আরকি। এবং ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়াম এর পরিমাণ প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম। যে কারণে যাদের উচ্চ-রক্তচাপের রোগী কাঁঠাল তাদের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে কারণ এতে পটাশিয়াম এর পরিমাণ বেশি।
পাকা কাঁঠালের যত গুণ
পাকা কাঁঠালে ভিটামিন এ, অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেটা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং যাদের রাতকানা রোগ বা রাতে দেখতে অসুবিধা হয়—রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
এবং পাকা কাঠালে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। আসলে মানুষের শরীরে কিন্তু ভিটামিন সি তৈরি হয় না, ভিটামিন সি আসে বাইরে থেকে। এবং এই কাঁঠালের প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তা না; এই যে দাঁতের মাড়ি, এই দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে এই ভিটামিন সি।
এবং পাকা কাঁঠালে যে ফাইটো নিউট্রেন্টস এটা আলসার, উচ্চ-রক্তচাপ, ক্যান্সার এবং বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ করে । এবং কাঁঠাল কী করে? টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমায়।
কাঁঠাল খাওয়ার পরে কি হয়? মন একটু ফুরফুরে ফুরফুরে লাগে! না লাগে না? কাঁঠাল খেয়ে একটা খুশি-খুশি ভাব হয় কি হয় না? হয়!
এবং কারো যদি বদহজম থাকে এই বদহজমও প্রতিরোধ করে কাঁঠাল। এবং হজমশক্তি যে রকম বাড়ায় সেরকম কাঁঠাল হচ্ছে কোষ্ঠ পরিষ্কারক কোষ্ঠ পরিষ্কার করে। এবং কাঁঠালে কিন্তু বিপুল পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে যেটা রক্তের সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মহিলাদের জন্যে কাঁঠাল কিন্তু খুব উপকারি। এটা যে রকম দেহের রক্ত-স্বল্পতা দূর করে, একইভাবে যারা গর্ভবতী মহিলা কাঁঠাল তাদের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক রাখে এবং গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধি সুন্দর সু-বৃদ্ধিতে সহায়তা করে অর্থাৎ স্বাভাবিক বৃদ্ধিটাকে নিশ্চিত করে ।
গর্ভবতীদের জন্যে কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
এবং হেকিমি এবং কবিরাজী চিকিৎসা শাস্ত্রমতে, আসলে একটা সময় হেকিমি এবং কবিরাজী আরকি, এটাই ছিলো চিকিৎসার মূল শাস্ত্র আমাদের দেশে।
তো, হেকিমি এবং কবিরাজী চিকিৎসা শাস্ত্রমতে গর্ভবতী মহিলারা প্রতিদিন যদি ২০০ গ্রাম করে তাজা পাকা কাঁঠাল খান তাহলে তার এবং গর্ভস্থ সন্তানের (শিশুর) সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়।
এবং তাজা পাকা কাঁঠাল যারা দুগ্ধ দানকারী মা—মা’দের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । অর্থাৎ শিশু বা সন্তান দুধের কোনো অভাব বোধ করে না।
তো আসলে, কাঁচা কাঠাল, পাকা কাঁঠাল এবং কাঁঠালের বিচি, তিনটাই একটা আরেকটার চেয়ে একেকদিকে পুষ্টিতে ভরপুর।
কাঁঠাল কখন কীভাবে খাবেন?
তো কী করতে পারেন? চৈত্র-বৈশাখে কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবে আমরা খাওয়া শুরু করতে পারি। তারপরে, বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়—তিনমাস হচ্ছে কি? পাকা কাঁঠাল! এবং কখনও কখনও শুধু জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় না শ্রাবণ পর্যন্ত পাকা কাঁঠাল পাওয়া যায়।
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা
এবং তারপরে এই যে কাঁঠাল খেলাম; কাঁঠালের বিচিগুলোকে যদি আমরা শুকিয়ে রেখে দিন, কাঁঠালের বিচি সবজী হিসেবে খাওয়া যায়, তারপরে কাঁঠালের বিচি ভেজে খাওয়া যায় এবং কাঁঠালের বিচি ভেজে খেলে কি হয়? মনটা একটূ ফুরফুরে লাগে কেন? কারণ, এটা টেনশন দূর করে। নার্ভাসনেস দূর কর, দুশ্চিন্তা দূর করে।
তো, একটু হালকা ভাজা দিয়ে কাঁঠালের বিচিটাকে আমরা গুঁড়ো করে রেখে দিতে পারি। এবং সারাবছর এই গুড়ো গরম পানিতে দিয়ে এটা পানীয় হিসেবে আমরা খেতে পারি। এবং যত আমরা কাঁচা কাঁঠাল, পাকা কাঁঠাল এবং বিচি আমরা নিয়মিত খাব তত আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং সারাবছর আমরা সুস্থ থাকব, সারা বছর যদি কাঁঠাল খাই তো ডাক্তারের কাছে দেখা যাবে যে আর যেতে হচ্ছে না।
কাঁচা কাঁঠাল, পাকা কাঁঠাল, কাঁঠালের বিচি—ব্যাস ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন, প্রয়োজন খুব-খুব-খুব-খুব কমে যাবে। আমরা অনেক সুস্থ থাকব এবং অনেক ভালো থাকব।
জাতীয় স্বাস্থ্যসুরক্ষার ক্ষেত্রে কাঁঠাল যেভাবে সাহায্য করবে…
তো আসলে, আমরা আমাদের আলোচনার উপসংহার টানতে পারি এভাবে যে, আমাদের জাতীয় ফল যে কাঁঠাল এটা শুধু সুপার ফুড নয়, কাঁচা কাঁঠাল হচ্ছে সুপার সবজী, পাকা কাঁঠাল হচ্ছে সুপার ফ্রুট আর কাঁঠালের বিচি হচ্ছে সুপার বিচি!
এবং এই কাঁঠালের বিচি পুষ্টিকর সবজী বা পানীয় হিসেবে আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে রকম যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে তেমনি আমাদের জাতীয় কোষাগারে জমা হতে পারে শত কোটি ডলার। শুধু কাঁচা কাঁঠাল-পাকা কাঁঠাল প্রসেস করে এবং কাঁঠালের বিচি রফতানী করে।
কারণ ইউরোপ-আমেরিকাতে কাঁচা কাঁঠাল, পাকা কাঁঠাল, কাঁঠালের বিচির চাহিদা এখন দিন দিন বাড়ছে। আর কাঁঠাল উৎপাদনে আমরা এখন দেশ হিসেবে দুই নম্বর।
এবং আমরা যদি বর্ষাকালে যে জমিতে পানি জমে না—এমন পতিত জমিতে যাদের পক্ষে সম্ভব যদি আমরা কাঁঠাল গাছ লাগাই তবে নিঃসন্দেহে আমরা অদূর ভবিষ্যতে কাঁঠাল উৎপাদন ও আপ্যায়নে পৃথিবীর এক নম্বর দেশে পরিণত হবো। এবং পৃথিবীর প্রধান কাঁঠাল উৎপাদনকারী জাতিতে রূপান্তরিত হবো।
[কোয়ান্টামম সাদাকায়ন, ৩০ জুন, ২০২৩]