আমার বয়স ২৫। আমার লাভ ম্যারেজ। দেড় বছর হয়েছে বিয়ে হলো। আমার বর ইউএসএ থাকেন। আমাকে বিয়ের পর থেকে খারাপ… উনি আরেক বিয়ে করতে চান। এ নিয়ে সবসময় ঝগড়া হচ্ছে। আমাকে মানসিকভাবে অনেক টর্চার করে। আমি এখন কী করব? বাসায় সবাই দুই পরিবার সব জানে। বলেছে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে। আমি আসলে কী করব বুঝতেছি না। আপনি যদি কোনো পরামর্শ দিতেন, আমার সিদ্ধান্ত নেয়াটা ইজি হতো।
এই ক্ষেত্রে আমার কোনো পরামর্শ নাই। আপনার লাভ ম্যারেজ, মানে বিয়ের আগে আপনি প্রেম করেছেন তারপরে বিয়ে করেছেন। এরপরেও যদি আপনার এই অবস্থা হয়! আপনার সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। কারণ প্রেম করার আগে তো আমার সিদ্ধান্ত চান নাই। প্রেমও আপনি করেছেন। বিয়েও আপনার উদ্যোগে হয়েছে এবং আত্মীয়স্বজনরা যা বলেছে, খুব ভালো বলেছে যে, তোমার সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে। আসলেই আপনার সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে।
আর কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েটদের বলি- এই সমস্ত ব্যাপারে কখনো কোনো সাজেশন দিতে যাবেন না। হাজবেন্ড-ওয়াইফ রিলেশনশিপ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ইন্টিমেট রিলেশনশিপ এবং সবচেয়ে দুর্বোধ্য রিলেশনশিপ। এর মধ্যে কখনো নাক গলাতে যাবেন না- হোক সেটা পক্ষে বা বিপক্ষে। এটা সবসময় তাদের ওপরে ছেড়ে দেবেন।
এমনকি মা-বাবাও যদি ঝগড়া করে, মা-বাবার ঝগড়ার মধ্যে যাবেন না। কারণ মাও আপনার, বাবাও আপনার। ঝগড়া করছে করুক তারা। আপনি চুপচাপ থাকবেন। ঝগড়া যখন শেষ হবে, তখন শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যে মা তুমি একটু শরবত খাও। বাবা, তুমি একটু চা খাও। ঝগড়া শেষ হলেন যাবেন। ঝগড়ার মধ্যে যাবেন না।
একবার হয়েছে- এক মা ভক্ত ছেলে। তার বাবা খুব বকাবকি করেছে তার মাকে। বকাবকি করার এক পর্যায়ে রাগের মাথায় তার মায়ের গায়ে হাত ওঠাতে যায় ওঠাতে যায় এই অবস্থা। এই সময় ছেলে গিয়ে বাবার হাত ধরে ফেলেছে।
তো ছেলে হাত ধরাতে স্বাভাবিকভাবে বাবা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে গেলেন এবং যা বলার তাই বললেন।
এরপরে মা ছেলেকে বকা শুরু করেছে। তোর বাবা আমাকে বকছিল, তুই কেন ঝগড়া করতে গেলি। মাফ চা মাফ চা তাড়াতাড়ি। তুই কেন ঝগড়া করতে গেলি।
ছেলে তো হা করে আছে। বলে যে তোমার জন্যে আমি ঝগড়া করতে গেলাম আর তুমি এমন কথা বলছো? তখন মা বলে যে আমার জন্যে তোর ঝগড়া করার দরকারটা কী? আমি কি এতই দুর্বল? যে তোর বাবার সাথে ঝগড়া করতে তোকে লাগবে।
অতএব মা-বাবার ঝগড়ার মধ্যেও কখনো যাবেন না। কারণ দে আর হাজবেন্ড এন্ড ওয়াইফ। তাদের ইকুয়েশন, তাদের ক্যামেস্ট্রি আলাদা ব্যাপার। তারা কখন ঝগড়া করবে, কখন মিল হবে এটা আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব না।
আমি খুব প্রাকটিকেল কথা বলছি। কারণ মানুষের দুঃখকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। যে-কোনো ঘটনা আসুক আমার কাছে অতীতের উদাহরণ আছে। কেস হিস্ট্রি আছে। যার ফলে এটা বলতে পারছি।
অতএব ছেলেমেয়ে যারা আছেন, মাকে ভালবাসেন বাবাকে ভালবাসেন, মায়ের পক্ষ নেবেন, বাবার পক্ষ নেবেন। সবই নেবেন। কিন্তু দুজনের ঝগড়ার মধ্যে কখনো জড়াবেন না। কিন্তু কেউ ক্লান্ত হয়ে গেলে তাকে সহযোগিতা করবেন। চা দিয়ে কফি দিয়ে শরবত দিয়ে যে যেটা পছন্দ করে।
[প্রজ্ঞা জালালি ০৩ জুলাই, ২০১৯]