১৯৮৭ সালে একটি নৈশভোজে প্রথম চার চোখ এক হয়েছিল। এরপর সাত বছর চুটিয়ে প্রেম। অতঃপর বিয়ে। এভাবে কেটে গেছে ২৭ টি বছর। দুজনে মিলে যে প্রতিষ্ঠানে হাত দিয়েছে সেটি সোনা হয়ে গেছে। মাইক্রসফট, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের নাম আজ দিগবিদিক ছড়িয়ে পড়েছে। এই সময়ে তাদের ঘর আলো করে এসেছেন তিন সন্তান। সেই সম্পর্ককে আর বয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না। বলছি ধনকুবের দম্পতি বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের কথা।সোমবার দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিলেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস দম্পতি। টুইটার বার্তায় তারা এই ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী দম্পতির হঠাৎ এই বিচ্ছেদের ঘোষণা অবাক করেছে বিশ্ববাসীকে।
এই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদের যৌথ ঘোষণা মানবহিতৈষী জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছে বলে রয়টার্সের মঙ্গলবার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদের এই সিদ্ধান্তের অর্থনৈতিক কি প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।বিল গেটস ও মেলিন্ডা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোর্টের দারস্থ হয়েছেন। তাদের সম্পতি ভাগাভাগির ভারও আদালতকে দেওয়া হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে খুবই গোপনীয়তা অবলম্বন করেছেন বিল ও মেলিন্ডা। তাদের পরিবার কিংবা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও কেউ মুখ খোলতে রাজি হয়নি।
কী কারণে দুজনের পথ আলাদা হয়ে গেল সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি গোপন থাকুক সেটিই চাওয়া তাদের পরিবারের। যেমনটি জানা গেল এই দম্পতির বড় মেয়ের পোস্টে।বিচ্ছেদের পর ইনস্টাগ্রামে জেনিফার গেটস লিখেছেন, আমাদের পুরো পরিবারের জন্য একটা দুঃসময় ছিল।’ জীবনের পরবর্তী ধাপে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি বোঝার জন্য সবাইকে অগ্রিম ধন্যবাদ দেন গেটস দম্পতির বড় মেয়ে জেনিফার।
অনেকটা হঠাৎ করেই বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন দুজন। দুই সপ্তাহ আগেও মহামারি মোকাবিলায় লড়াইরত চিকিৎসাকর্মীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দুজন। সেখানে জানান, করোনা আক্রান্তদের সহায়তায় বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।সোমবার টুইটারে পোস্ট করা যৌথ বার্তায় গেটস দম্পতি বলেন, ‘ব্যাপক চিন্তাভাবনা করে আমরা বিয়ের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’তারা আরও লেখেছে, আমরা এটা আর বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমাদের জীবনের পরের ধাপে দম্পতি হিসেবে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব।’
বিচ্ছেদ হলেও দাতব্য কার্যক্রম একসঙ্গে চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রত্যয়ী বিল ও মেলিন্ডা গেটস। টুইটবার্তায় লেখেন, ‘গত ২৭ বছরে আমরা অসাধারণ তিনটি সন্তান পেয়েছি। এমন একটা ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। আমরা যে বিশ্বাস থেকে ফাউন্ডেশনটি চালু করেছি, সেটা থাকবে। এই ফাউন্ডেশনের কাজ একসঙ্গে চালিয়ে যাব।বিল ও মেলিন্ডা মিলে দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলেন। বিশ্বব্যাপী এ ফাউন্ডেশন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই ও শিশুদের টিকাদানে উৎসাহিত করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে এই ফাউন্ডেশন। বিল এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আর মেলিন্ডা কো-চেয়ার ও ট্রাস্টি।
সর্বশেষ হালনাগাদ আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ২০১৯ সাল শেষে ফাউন্ডেশনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার।ওয়েবসাইটের তথ্যের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, ১৯৯৪ ও ২০১৮ সালের মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী বিল ও ৫৬ বছর বয়সী মেলিন্ডা মিলে এই ফাউন্ডেশনে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বেশি দান করেছেন।রয়টার্স বলছে, গেটস দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদের পর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিষয়ে জানতে চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে কোনো ধরনের জবাব মিলেনি।