প্রতি বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া এই প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নেয়ান্ডারথাল থেকে প্রায় ৬০ হাজার বছর বিস্তার হওয়া ডিএনএ’র সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগের একটা যোগসূত্র আছে। শনিবার (৪ জুলাই) নিউইয়র্ক টাইমসের বিজ্ঞান বিষয়ক পাতায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে শুক্রবার গবেষণাটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়।
তবে গবেষণার ফলাফল এখনো শীর্ষস্থানীয় কোনো জার্নালে আসেনি বলে জানানো হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, এই ধরনের ডিএনএ’র কপি বাংলাদেশের মানুষের শরীরে বেশি। অন্তত একটি করে কপি আছে বাংলাদেশের ৬৩ শতাংশ মানুষের। দক্ষিণ এশিয়ার এ তৃতীয়াংশ মানুষ এই জিনের উত্তরাধিকার বহন করছে।
টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে অংশটি পেয়ে থাকে। তবে গোটা পৃথিবীতে এই ধরনের ডিএনএ খুব একটা দেখা যায় না। ইউরোপে ৮ শতাংশ, পূর্ব এশিয়ায় মাত্র চার শতাংশ। আফ্রিকায় নেই বললেই চলে।
গবেষকেরা এও জানিয়েছেন, এই ডিএনএ’র প্রস্তর যুগের ভার্সন ক্ষতিকর হলেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় যেটি দেখা যায় তা ভাইরাস প্রতিরোধে আরও বেশি কার্যকরী।
গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ জোশুয়া আকি এই ফলাফলকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘শঙ্কর প্রজননের ৬০ হাজার বছর আগের এই প্রভাব আজও মানুষের শরীরে কাজ করতে পারে।’
জিনোমের এই অংশ ক্রোমোজোম ৩-এ ছয়টি জিনে ছড়িয়ে থাকে। যাকে গবেষকেরা মানব ইতিহাসের ‘ধাঁধাময় ভ্রমণ’ বলেছেন। ডিএনএ’র নির্দিষ্ট এই অংশ কীভাবে করোনাভাইরাসের অসুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো পরিষ্কার ধারণা পাননি।
নতুন এই গবেষণায় যুক্ত ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী হুগো জেবার্গ বলেন, ‘কোন বিবর্তনীয় প্যাটার্ন ৬০ হাজার বছর ধরে এটি উৎপন্ন করছে সেটি পরিষ্কার নয়। এটি এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। ’
৬০ হাজার বছর আগে আধুনিক মানুষের কিছু পূর্বসূরি আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে ইউরোপ, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় বসতি গড়েন। তারা প্রস্তর যুগের বিশেষ মানুষের (Neanderthal) সঙ্গে মিশে যান। তাদের ডিএনএ আমাদের জিন পুলে প্রবেশ করে। এরপর সেটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।
এই ধরনের জিন আধুনিক মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এর কারণে নারীদের সন্তান জন্ম দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যার কারণে ক্ষতিকর এই জিনের অধিকারী মানুষেরা ধীরে ধীরে প্রায় বিলীন হয়ে যান।
হুগো জেবার্গ বলছেন, বিবর্তনের ফলে কিছু জিন ‘কমন’ হয়ে গেছে। যা মানুষের শরীরে এখনো আছে।
জেবার্গ মনে করেন, প্রস্তর যুগের ওই মানুষেরা এশিয়া-ইউরোপে আসার পরে নতুন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন। যার বিরুদ্ধে তাদের বিবর্তিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
তবে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। পুরো বিষয়টি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়ে গেছে। গবেষকরা এখনো বুঝতে চেষ্টা করছেন কোভিড-১৯ কেন কিছু মানুষের জন্য বেশি বিপদজনক, বয়স্করা কেন তরুণদের থেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, নারীদের চেয়ে পুরুষরা কেন বেশি আশঙ্কার মধ্যে আছেন।
সূত্র : সময় টিভি (৫ জুলাই, ২০২০)
নতুন মন্তব্য