1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

অপচয়কারী বা ঋণী নয়, দাতা হোন

  • সময় শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৩৭২ বার দেখা হয়েছে

‘মাসে মাসে স্যালারি থেকে কিছু টাকা কাটবে (EMI), এ আর এমন কী!’

‘সমস্যা নেই, ডেডলাইন চলে এলে আরেক জায়গা থেকে লোন নিয়ে এটা শোধ করে দেবো।’

‘পছন্দটাই বড় কথা, টাকার ব্যবস্থা কোনো না কোনোভাবে হয়ে যাবে।’

‘এত ভাবনার কী আছে, ক্রেডিট কার্ড আছে না!’

এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যারা লালন করেন, গবেষকদের মতে তারাই হন ঋণ ব্যবসায়ীদের সহজ শিকার। কারণ ঋণদাতা সংস্থাগুলোর ব্যবসাই হচ্ছে কিস্তির ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসের পর মাস অতিরিক্ত টাকা আদায় করা। তারা মানুষকে ঋণগ্রস্ত করার (ঋণ দেয়ার) ব্যাপারে যতটা সরব, কিস্তি আদায়ের ব্যাপারে তার চেয়ে বহুগুণ সিদ্ধহস্ত ও নীরব।

ক্রেডিট কার্ড : শুভঙ্করের ফাঁকি

পাশ্চাত্যের মতো আমাদের দেশেও ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় করার জন্যে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ ক্রেডিট কার্ডধারী একজনের পরিচয় ঋণদাস বৈ আর কিছু নয়!

আর ঋণ সবসময় দেয়া হয় বিলাসী ভোগ্যপণ্য (স্মার্ট টিভি, স্মার্টফোন, এসি, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি) কেনার জন্যে। যাতে সামর্থ্য না থাকলেও ক্রেডিট কার্ডে তা বাকিতে কেনা যায় এবং কিস্তি শোধ করতে মূল দামের কয়েকগুণ টাকা দিতে হয়। একটি ওয়াশিং মেশিনের দাম যদি হয় ৫০ হাজার টাকা, মিনিমাম এমাউন্ট পে-এবল পলিসিতে ৫% সুদে এর মূল্য পরিশোধ করতে সময় লাগবে প্রায় ১৮ বছর এবং গুনতে হবে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা!

ঋণ থেকে বাঁচতে—

  • আবেগ বা ফুটানি নয়, সামর্থ্য ও প্রয়োজন অনুসারে ব্যয় করুন।
  • ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি বর্জন করুন।
  • কিস্তির সুযোগ থাকলেও পণ্যের মূল্য পরিশোধ করুন নগদে।
  • প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি কেনার ক্ষেত্রে আগে প্রয়োজনীয় টাকা জমান। তারপর কিনুন।

ধর্ম কী বলছে?

ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে ওআইসি-র (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) ২০০০ সালের ফতোয়া হলো—যদি ক্রেডিট কার্ডে সুদ আরোপ করার ব্যবস্থা থাকে, সুদ আরোপ হওয়ার আগেই আসল শোধ করে দিলেও এটা অনুমোদনযোগ্য নয়।

হিন্দু ধর্মে আছে, ইহলোকে উত্তমর্ণের কাছে সকল ঋণ শোধ করার শক্তি দাও। তোমার প্রাসাদে আমায় সকল ঋণ থেকে মুক্ত করো। ঋণ নিমিত্ত নরকপাত থেকে আমায় মুক্ত করো। … [অথর্ববেদ : শ্লোক ১১৭-১৮-১৯]

বাইবেলে ঋণ নিষিদ্ধ। সেইন্ট অ্যামব্রোস ৩৮০ খ্রিষ্টাব্দে বলেছেন, সুদী ব্যবসা হলো ঋণী ব্যবসা, যা ডাকাতি, এমনকি খুনের সাথে তুলনীয়।

নবীজীর (স) প্রার্থনা— হে আল্লাহ! আমি কুফর (সত্য অস্বীকার) ও ঋণ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। —আবু সাঈদ খুদরী (রা); নাসাঈ শরীফ

অর্থাৎ সত্য অস্বীকার করে কাফের হওয়া আর ঋণগ্রস্ত হওয়াকে নবীজী (স) একইরকম পাপ বলে গণ্য করেছেন।

ক্ষুদ্রঋণ : বাড়াচ্ছে ধনী-গরিবের বৈষম্য

মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ যে দারিদ্র্য দূর করতে পারে না, তা প্রমাণিত হয়েছে অসংখ্য গবেষণায়। ১৯৯৭-২০১৩ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ২১.১ কোটি ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতার ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনে ক্ষুদ্রঋণ কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে নি। বরং অপ্রয়োজনীয় খরচের অভ্যাসের কারণে এ ঋণ শোধ করতে নিম্নবিত্ত হয়েছে হতদরিদ্র ও নিঃস্ব।

বাংলাদেশে করোনাকালে ঋণদাতা এনজিওগুলো কিস্তির টাকা আদায় করে ধরে রেখেছে তাদের মুনাফার ঊর্ধ্বগতি। কিন্তু কিস্তির টাকা জোগাতে দরিদ্র মানুষেরা নিঃস্ব হয়েছে। বাড়ছে ধনী-গরিব বৈষম্য।

অপচয়কারী বা ঋণী নয়, দাতা হোন

প্রয়োজন আর অভাববোধ এক নয়। প্রয়োজনের সীমা আছে, তা পূরণের উপায়ও আছে। অভাববোধের কোনো সীমা নেই, তা মেটানোর উপায়ও নেই। অভাববোধকে সহজ বাংলায় বলা যায় ‘চোখের ক্ষুধা’, যা প্রতিনিয়ত বাড়তেই থাকে। এর পথ ধরেই আসে অপচয় এবং একপর্যায়ে ঋণ। ব্যক্তিগত ধারকর্য ছাড়িয়ে ব্যাংক ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ফাঁদে আটকে যায় জীবন।

পাশ্চাত্যে ঋণকে তুলনা করা হচ্ছে ক্যান্সারের সাথে। প্রাচীন প্রবাদ মতে, ‘ঋণ হলো সেই চারাগাছ, যার বেড়ে উঠতে বৃষ্টির কোনো প্রয়োজন নেই!’ ঋণ ব্যক্তিগত হোক কিংবা জাতিগত, এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সচেতন হোন। অপচয়কারী বা ঋণী নয়, দাতা হোন। ভালো থাকুন।

তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০; সিএনবিসি, ১৯ মার্চ ২০১৯; ভক্স ডট কম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com