1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৭:১৭ অপরাহ্ন

আগামী ডিসেম্বরে চড়া যাবে মেট্রোরেলে

  • সময় শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৯০১ বার দেখা হয়েছে

ঢাকাবাসী আগামী বছর ডিসেম্বরে দেশের প্রথম মেট্রোরেলে চড়বে—এ লক্ষ্য ধরে এগোচ্ছে সরকার। রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশে প্রথমে চালু হবে মেট্রোরেল। এর প্রস্তুতি হিসেবে আগামী রোববার প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল আগারগাঁও পর্যন্ত চালিয়ে দেখা হবে। এর আগে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল সীমাবদ্ধ ছিল। পরীক্ষামূলক এই চলাচলে যাত্রী পরিবহন করা হবে না। ৭ ডিসেম্বর ২০২১ প্রথম আলোতে এ বিষয়ে লিখেছেন আনোয়ার হোসেন।

গত আগস্ট মাসে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক (পারফরম্যান্স টেস্ট) চলাচল শুরু হয়েছে। এটি ছয় মাস চলবে। এরপর তিন মাস ধরে চলবে সমন্বিত পরীক্ষামূলক (ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট) চলাচল। পরের পাঁচ মাসে চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক চলাচল (ট্রায়াল রান) সম্পন্ন হবে। অর্থাৎ আগামী বছরের ডিসেম্বরে যাত্রী নিয়ে চলাচলের জন্যে প্রস্তুত থাকবে ট্রেন।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পারফরম্যান্স টেস্ট আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শুরুতে উত্তরা থেকে তিনটি স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে মেট্রোরেল। গত মাসে দ্বিতীয় ধাপে তা সম্প্রসারণ করে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত ছয়টি স্টেশনে আসে। শেষ ধাপে রোববার আগারগাঁও পর্যন্ত পারফরম্যান্স টেস্ট শুরু হবে।

ঢাকা ও এর আশপাশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কোম্পানি সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের পারফরম্যান্স টেস্টের অংশ হিসেবে প্রথম কোনো অংশে চলাচলের শুরুতে গতি থাকে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার।

অর্থাৎ মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও অংশে ১৫ কিলোমিটারের কম গতিতে ট্রেন চলবে। অবশ্য ট্রেন উত্তরা থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত অনেক আগে থেকেই পরীক্ষামূলক চলাচল করছে। ওই পথে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তোলা হয়েছে। মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদ্যুৎ–চালিত। সংকেত, যোগাযোগসহ ১৭ থেকে ১৮টি ব্যবস্থা ট্রেন চলার ক্ষেত্রে কাজ করে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইনের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ কিলোমিটার উড়ালপথ নির্মিত হয়েছে। এই পথে ১৬টি স্টেশন থাকবে। ইতিমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে ছয়টি স্টেশনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি স্টেশনগুলোর কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রেললাইন ও বিদ্যুৎ–ব্যবস্থাও সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭২ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পূর্তের কাজের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭০ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলে যাত্রী চলাচল করবে—এই লক্ষ্য ধরেই কাজ এগোচ্ছে। রোববার আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল নিয়ে আসার লক্ষ্যে গত দুদিন বৃষ্টির মধ্যেও কাজ চলেছে। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি বর্তমানের মতো থাকলে কাজে কোনো ব্যাঘাত হবে না। আগামী ডিসেম্বরেই মেট্রোরেলে যাত্রী চড়তে পারবে।

মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। প্রকল্পের অধীনে জাপান থেকে ২৪ সেট ট্রেন (প্রতি সেটে ৬টি কোচ) কেনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সাত সেট ট্রেন উত্তরা ডিপোতে মজুত আছে। এক সেট ট্রেন মোংলা বন্দর থেকে ডিপোর উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আরও দুই সেট ট্রেন জাপান থেকে বাংলাদেশের পথে আছে। বাকি ট্রেনের নির্মাণকাজও চলমান।

মেট্রোরেলে যা যা থাকছে

প্রকল্প সূত্র বলছে, একটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবে। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবে ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া।

মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্যে ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী চড়তে পারবে। সম্পূর্ণ শীততাপনিয়ন্ত্রিত (এসি) এই ট্রেনের দুই পাশে সবুজ রঙের প্লাস্টিকের দুই সারি লম্বা আসন পাতা হয়েছে।

প্রতিটি কোচের দুই পাশে চারটি করে আটটি দরজা আছে। অর্থাৎ স্টেশনে থামলে ট্রেনের চারটি দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। বাকি চারটি বন্ধ থাকবে। পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে থাকবে অডিও-ভিজ্যুয়াল ঘোষণা। দুই প্রান্তের দুটি কোচে দুটি করে চারটি হুইলচেয়ার বসানোর ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। তবে ট্রেন কোন স্থানে কত গতিতে চলবে, সেটা ঠিক করবে কর্তৃপক্ষ।

যাত্রীরা যেভাবে ট্রেনে চড়বে

ট্রেনে ওঠার একমাত্র পথ স্টেশন ভবন। স্টেশনগুলো তিনতলা। সড়ক থেকে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে যাত্রীরা দ্বিতীয় তলার কনকোর্স হলে উঠবে। এই তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা যন্ত্রপাতি থাকবে।

তিনতলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। একমাত্র টিকিটধারীরাই ওই তলায় যেতে পারবে। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হলে মেট্রোরেল ফজরের নামাজের পর দুদিক থেকে যাত্রা করবে। প্রাথমিকভাবে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত আছে। তবে অফিস সময়ে প্রতি তিন মিনিট পরপর ট্রেন চলার কথা।

রাতে বা যাত্রী চাপ যে সময় কম থাকে, সে সময় এক ট্রেন থেকে অন্য ট্রেনের সময়ের ব্যবধান বাড়বে। এক ট্রেনের সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার কাজটি কেন্দ্রীয়ভাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বা লাইনে কোনো বাধা থাকলে ট্রেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে যাবে।

প্রকল্পের নথি বলছে, মেট্রোরেল দিয়ে ৩৫ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া যাবে। শুরুতে দৈনিক ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।

সূত্র : প্রথম আলো (৭ ডিসেম্বর ২০২১)

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com