একাধিক গবেষণার পর বিষয়টি এখন নিউরোসায়েন্টিস্টদের কাছে বেশ পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। তারা বলছেন, মানুষের সঞ্চয়-প্রবণতা আর বেশুমার খরচের ঝোঁক- এর পেছনে আমাদের মস্তিষ্কের কোন অংশটি কাজ করে, সে রহস্য এখন পুরোপুরিই বোধগম্য। বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের এ অংশটির নাম দিয়েছেন ‘মানি ব্রেন’।
গবেষকরা বলছেন, তাৎক্ষণিক আনন্দের বদলে যারা ভবিষ্যৎ-সুখের জন্যে অপেক্ষা করতে পারেন এবং আগামী দিনের জন্যে সঞ্চয় করতে পারেন, তাদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সটি তুলনামূলক বেশি কার্যকর। উল্লেখ্য, মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স আমাদের সুখ ও আনন্দের মতো ইতিবাচক আবেগ-অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।
বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্যে নিউরোসায়েন্টিস্টরা একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন, যেখানে একদল স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সকে শক্তিশালী চুম্বকের মাধ্যমে স্তিমিত করে রাখা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এর ফলে তাদের মধ্যে খামখেয়ালিপনা, উদাসীনতা, অযাচিত খরচের প্রবণতা বেড়ে গেছে।
পরবর্তীতে এদের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সকেই আবার কৃত্রিম উপায়ে উদ্দীপিত করে দেখা গেছে, ক্ষণিক আনন্দে মাতোয়ারা না হয়ে তারা দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন এবং আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি ধৈর্যধারণ করতে পারছেন।
এ চুম্বক গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই কিছু ক্রনিক ব্যথা, মাত্রাতিরিক্ত বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়াসহ আরো কিছু মনোদৈহিক অসুস্থতার সফল চিকিৎসা করতে সমর্থ হয়েছেন।
সঞ্চয়ী আর খরুচে- এদের ব্যক্তিত্বের ধরনেও আছে তফাৎ। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট পল গ্লিমশার বলেন, সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহ যাদের কম, তারা যে বোকা আর যুক্তিহীন তা নয়; কিন্তু যে-কোনো কারণেই হোক, সঞ্চয় না করার যে ভবিষ্যৎ পরিণতি সেটা তারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেন না। তার মতে, এটি আসলে আপেক্ষিক। অর্থাৎ কারো কাছে আজকের আনন্দটা গুরুত্বপূর্ণ, কারো কাছে আবার প্রাধান্য পায় ভবিষ্যতের আনন্দটুকু।
একটি গবেষণার অংশ হিসেবে একদল স্বেচ্ছাসেবককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- ১০০ ডলার কি আপনি আজই চান নাকি পরের সপ্তাহে? এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যখন তারা চিন্তা করছিলেন, ঠিক সে-সময় ওদের এমআরআই করে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের যে অংশটি এ-জাতীয় চিন্তার সাথে সংশ্লিষ্ট, সেটি যাদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি উদ্দীপ্ত তারা পরবর্তী সপ্তাহ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারেন। অন্যদিকে এটি কম উদ্দীপ্ত হয় যাদের, তাদের কাছে ভবিষ্যৎ-সুখের বিষয়টি তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয় এবং সবকিছুই তারা চান তৎক্ষণাৎ, এ মুহূর্তেই।
তাহলে সবাই কি এমন ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারবেন না, যাতে ভবিষ্যতের সঞ্চয়টা আরো পোক্ত হয়? আছে, সে উপায়ও আছে। তা হলো, ভবিষ্যৎ প্রাপ্তির আনন্দ-অনুরণন যদি সচেতনভাবে ভেতরে অনুভব করা যায়, তবে মস্তিষ্কের সেই অংশটি ঠিকই উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে এবং তখন সঞ্চয় করাও হয় সহজ। (এ যে মনছবির কথাই বলা হচ্ছে!)