আগস্ট মাস বাঙ্গালি জাতির শোকের মাস। আর এই শোকের মাসে বাংলাদেশের বিশেষ করে ফরিদপুরের সাহিত্যাঙ্গনের সাহিত্যানুরাগিরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে আলফাডাঙ্গার কবি, কবিরত্ন এম এ হককে। তিনি ২০০৬ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৩ই আগস্ট পরলোক গমন করেন।
কবিরত্ন এম এ হক যেন ব্যক্তি জীবনে আদর্শ, নীতি, নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব,শিক্ষা, সাহিত্য আর সমাজ সংস্কারকের প্রতিশব্দ। কবি বিশ্বাস করতেন যে, কবিতা কখনো সতিন পছন্দ করেনা। আর এই কারনে তিনি ব্যবসা নয়, চাকরি নয়, এক প্রকার সংসার বিমুখী হয়ে পেশা এবং নেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা এবং সাহিত্য সাধনা। তাই কবি দাবি করতেন একমাত্র সাহিত্য চর্চার জন্যই তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
কবি ছিলেন হ্যামিলয়নের বাঁশিওয়ালার মত সম্মোহনী ক্ষমতার অধিকারী। শত শত ছাত্র ছিলো তার একনিষ্ঠ ভক্ত ও অনুসারী। কবি ছিলেন যেন এযুগের সক্রেটিস। যার মূল মন্ত্রই ছিল সৎগুনই জ্ঞান। সূক্ষতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখলে যে কেউ উপলব্ধি করতে পারবে যে, তিনি ছিলেন একটা আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা। আর কবি শিক্ষিত সমাজে এ উপলব্ধি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।কবিরত্ন এম এ হক ছিলেন কুসংস্কার মুক্ত আধুনিক শিক্ষায় একজন শিক্ষিত মানুষ।
যার কারনে তিনি অজপাড়াগাঁয়ে থেকেও হোমিওপ্যাথি ও এ্যালোপ্যাথিতে গ্রাম্য ডাক্তার হিসেবে মানুষের সেবা করেছেন এবং সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। কবির চিন্তা ভাবনা এবং কার্যক্রম দিয়ে নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। কবিরত্ন এম এ হক ছিলেন একজন প্রগতিশীল মানুষ।
শিক্ষকতা এবং সাহিত্যের উপর ভর করে এক হাতে তুলে নিয়েছেন কলম, আর কুসংস্কার মুক্ত শিক্ষিত সমাজ বিনির্মানে আরেক হাতে তুলে নিয়েছেন মানবতার পতাকা। ধর্ম বর্ণের উর্ধ্বে উঠে সকলকে একত্রিত করে এগিয়েছেন সামনের দিকে যার লক্ষ ছিলো মানবতার উৎকর্ষতা সাধন।
এক নজরে কবির গ্রন্থ গুলোর আলোচনা করলে যা পাওয়া যায় তা হলো, ”কচি মনের খোরাক” নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে এটি শিশুতোষ গ্রন্থ। কবির এই গ্রন্থটি দেশ স্বাধীনের আগে যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুত পাঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এ ছাড়াও কবির আর একটি ছড়ার বই হচ্ছে “দাদুর ছড়া”।
কবির আরও একটি বইয়ের নাম হলো “ছন্দ-বন্ধ-বাগধারা”- এই গ্রন্থে কবি বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অসংখ্য বাগধারা সংকলন করেন এবং তা ছন্দে রূপ দেন।যা যশোর ফরিদপুরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে।
গীতিকার হিসেবে কবিরত্ন এম এ হক ছিলেন মূলত ইসলামি ও লোকসংগীত রচয়িতা। তার লেখা প্রসিদ্ধ গানের গ্রন্থ দুটি হলো “দরদে নবী”, “এপার ওপার ও “দেশের গান”। আর এই গানগুলো স্থানীয় শিল্পীদের মুখে মুখে থাকতো। সমাজের আদর্শ নীতি নৈতিকতা মূল্যবোধকে মাথায় রেখে নিজস্ব দৃষ্টি ভঙ্গিতে রচনা
করেন “হক বচন”। কবির এ গ্রন্থটিও জনসাধারণের কাছে সমাদৃত হয়। কবিরত্ন এম এ হক মূলত কবি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন যার কারনে তিনি যশোর সাহিত্য সংঘ থেকে “কবিরত্ন” উপাধিতে ভূষিত হন। কবির কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো “পথ দিশারু”, ”শুকতারা”, ”কাঙ্গাল পথিক”,এবং “মুক্তির গান” ইত্যাদি। উক্ত গ্রন্থগুলোর অধিকাংশ কবিতাই আদর্শ সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যেই রচিত।
লেখকঃ-
জাহিদ হাসান (বাহার)
সহকারি শিক্ষক (স.প্রা.বিদ্যালয়)
আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর। —