বাংলাদেশি সাহিত্যিক, গবেষক ও অনুবাদক গোলাম সামদানী কোরায়শী এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৮৪ তম (অধিবর্ষে ২৮৫ তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯৭৮ : জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বর্ণবাদ বিরোধী বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
১৮৭৭ : চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রখ্যাত বাঙালি লেখক ও ঔপন্যাসিক, সম্পাদক ও অনুবাদক।
১৮৮৪ : ফ্রেডরিখ কার্ল রুডলফ বার্জিয়াস, নোবেলবিজয়ী জার্মান বংশোদ্ভূত আর্জেন্টিনার রসায়নবিদ।
১৮৮৫ : ফ্রাসোয়া মাউরিয়াক, নোবেলজয়ী ফরাসি লেখক, কবি ও নাট্যকার।
১৯২১ : নীলিমা ইব্রাহিম, বাঙালি শিক্ষাবিদ।
১৯৩৮ : বাংলা বিশ্বকোষের প্রথম প্রণেতা, প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ নগেন্দ্রনাথ বসু।
১৯৯১ : বাংলাদেশি সাহিত্যিক, গবেষক ও অনুবাদক গোলাম সামদানী কোরায়শী।
১৯৯৬ : নোবেলজয়ী কানাডীয় অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ভিকরি।
২০০৭ : বাঙালি মহাত্মা ও হিন্দুধর্মের সংস্কারক, লেখক, শিল্পী, কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ, চিন্ময় কুমার ঘোষ ( শ্রী চিন্ময় ) নামে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস।
গোলাম সামদানী কোরায়শী ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, গবেষক ও অনুবাদক। সাহিত্য ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের ৫ এপ্রিল নেত্রকোনা জেলার কাউরাট গ্রামে। ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি কামেল পাস করেন এবং ‘মোমতাজুল মোহাদ্দেসীন’ টাইটেল ও স্বর্ণপদক লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি কৃতিত্বের সাথে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনের শুরু হয় ১৯৬১ সালে বাংলা একাডেমিতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে। তার মেধা, বহু ভাষায় পাণ্ডিত্য ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পাঠোদ্ধারের দক্ষতা এই মূল্যবান অভিধানটি সংকলনে বিশেষ ভূমিকা যুক্ত করে। সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণকারী কোরায়শীর মৌলিক সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি অনুবাদ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষার বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন। তার অনুবাদকর্মের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ইবনে খালদুনের ‘আল মুকাদ্দিমা’র মূল আরবি থেকে অনুবাদ। সেমেটিক মিথলজি অবলম্বনে তার রচিত বিশেষ উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘স্বর্গীয় অশ্রু’, ‘মহাপ্লাবন’, ‘পুত্রোৎসর্গ’, ‘চন্দ্রতাপ’, ‘যষ্ঠিমায়া’ ইত্যাদি। অসংখ্য ছোটগল্প ছাড়াও তিনি নাটক ও কবিতা রচনা করেছেন।
শিশুদের জন্যে তার সমৃদ্ধ রচনার তালিকায় রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ এবং ‘ছোটদের দুদু মিয়া’। আত্মজৈবনিক রচনা ‘সিন্ধুর এক বিন্দু’ ত্রিশ থেকে ষাটের দশকে পূর্ববঙ্গের তৎকালীন সাধারণ জনজীবনের মূল্যবোধ, জীবন সংগ্রাম ও সামাজিক ইতিহাসের এক অনবদ্য উপাখ্যান।
স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু আগে গোলাম সামদানী কোরায়শী স্থায়ীভাবে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনায় যুক্ত হন। এ সময় তিনি লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম শিবিরের আহ্বায়ক হওয়া থেকে শুরু করে সর্বশেষ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ময়মনসিংহের আহ্বায়কের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যান।
তিনি ময়মনসিংহের উদীচী ও সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিজীবনে কোরায়শী ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও সংস্কৃতিমনা। বিশেষ করে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তার অবদান অসামান্য।
সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্যে কোরায়শী বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। এর মধ্যে-
কুমারদী মাদ্রাসা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৫০)
এম.এ. কামিল পরীক্ষায় স্বর্ণপদক (১৯৫৪)
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৭)
অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০)
স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৭) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বহুভাষী পণ্ডিত ও বিশিষ্ট এই সাহিত্যিক ১৯৯১ সালের ১১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত