বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২২৯তম (অধিবর্ষে ২৩০তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮৩৬ : ব্রিটেনে জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ নিবন্ধীকরণ শুরু হয়।
১৯০১ : বেঙ্গল থিয়েটার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুনরায় এটি অরোরা থিয়েটার নামে চালু হয়।
১৯৪৫ : ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৬০ : আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গ্যাবন স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৮২ : জার্মানিতে প্রথম কমপ্যাক্ট ডিস্ক উন্মোচিত হয়।
১৭৬১ : উইলিয়াম কেরি, ব্রিটিশ খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক, বাংলায় গদ্য পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তক।
১৮০১ : ফ্রেডরিকা ব্রেমার, সুইডিশ লেখক ও নারীবাদী সংস্কারক।
১৯৩২ : বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল, ভারতীয়-নেপালি বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদীয় সাহিত্যিক।
১৯৩২ : মুর্তজা বশীর, বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী।
১৯৪০ : শবনম, বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
১৯৭২ : হাবিবুল বাশার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক।
১৯৪৯ : ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পুলিনবিহারী দাস।
১৯৬৯ : নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী অটো স্টের্ন।
১৯৮৪ : বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী আচার্য চিন্ময় লাহিড়ী।
২০০৪ : বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য নিমাইসাধন বসু।
২০০৬ : প্রখ্যাত বাংলাদেশি কবি শামসুর রাহমান।
২০২০ : ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী পণ্ডিত যশরাজ।
মুর্তজা বশীর ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, কবি, লেখক ও গবেষক। তিনি ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বাবা ছিলেন প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। বাংলাদেশের শিল্পকলার পরিসরে মুর্তজা ছিলেন অপরিহার্য ও অন্যতম উল্লেখ্য এক নাম। তিনি দৃশ্যশিল্পের বিভিন্ন শাখায় যেমন বিচরণ করেছেন, তেমনি সৃজনকলার অন্য দুটি মাধ্যম সাহিত্য ও চলচ্চিত্রেও রেখেছেন সৃজন-প্রতিভার স্বাক্ষর।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায়। মায়ের নাম মরগুবা খাতুন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা গভর্নমেন্ট ইনষ্টিটিউট অব আর্টস (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট)-এ দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে মুর্তজা বশীর চারুকলা শিক্ষা শুরু করেন। ১৯৫৪ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি শিল্প শিক্ষা শেষ করে প্রথম বিভাগে পাস করেন। কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন ও প্রতিবাদে মুর্তজা বশীর ছিলেন অগ্রভাগে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ২১ ফেব্রুয়ারির ওপর ‘রক্তাক্ত ২১শে’ শিরোনামে ১৯৫২ সালে তিনি লিনোকোটে চিত্রটি আঁকেন। এশিয়াটিক সোসাইটির মতে, ‘রক্তাক্ত ২১শে’-কে ভাষা আন্দোলনের ওপর আঁকা প্রথম ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ শহীদ মিনার থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত বাংলাদেশে চারু ও কারুশিল্পী পরিষদের উদ্যোগে ‘স্বাধীনতা’ মিছিলে নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
‘দেয়াল’, ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘কালেমা তাইয়্যেবা’, ‘পাখা’ শিল্পী মুর্তজা বশীরের আঁকা উল্লেখযোগ্য সিরিজ। তিনি ‘বিমূর্ত বাস্তবতা’ নামে একটি শিল্পধারার প্রবর্তক। এছাড়া ফিগারেটিভ কাজে পূর্ব-পশ্চিমের মেলবন্ধনে তিনি স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন।
তিনি ১৯৬৩ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘কারোয়াঁ’র কাহিনী ও চিত্রনাট্য রচনা করেন। ১৯৬৪ সালে হুমায়ূন কবীর রচিত ‘নদী ও নারী’র চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক ও প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন। ১৯৬৫ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘ক্যায়সে কহু’র শিল্প নির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুর্তজা বশীর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘কাঁচের পাখির গান’, ‘গল্প সমগ্র’। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘ত্রসরেণু’, ‘তোমাকেই শুধু’, ‘এসো ফিরে অনুসূয়া’, ‘সাদায় এলিজি’। উপন্যাস ‘আল্ট্রামেরিন’, ‘মিতার সঙ্গে চার সন্ধ্যে’, ‘অমিত্রাক্ষর’। নির্বাচিত রচনার মধ্যে রয়েছে ‘মূর্ত ও বিমূর্ত’, ‘আমার জীবন ও অন্যান্য’। ‘মুদ্রা ও শিলালিপির আলোকে বাংলার হাবশী সুলতান ও তত্কালীন সমাজ’ শিল্পীর গবেষণাগ্রন্থ। এছাড়া ভারতের বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জার্নাল অব দ্য নিউম্যাসটেকি সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’য় প্রাক-মোগল যুগের মুদ্রার ওপর তার বেশ কয়েকটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
মুর্তজা বশীর চিত্রকলায় অবদানের জন্যে ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮০ সালে একুশে পদক ও ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমি পদক পেয়েছেন। এছাড়াও জাতীয় পুরস্কার (Prix National), চিত্রশিল্প উৎসব, ক্যাগনেস-সুর মের, ফ্রান্স (১৯৭৩), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৫), শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদ নকশা, জাতীয় বই কেন্দ্র, ঢাকা (১৯৭৬), সুলতান পদক, নড়াইল (২০০৩), হামিদুর রহমান পুরস্কার (২০১৫), স্টার লাইফটাইম পুরস্কার (২০১৬)।
মুর্তজা বশীর অনেক দিন ধরেই হৃদ্রোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। রাজধানী ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত