বাঙালি নাট্যব্যক্তিত্ব বিজন ভট্টাচার্য এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৯৮তম (অধিবর্ষে ১৯৯তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৭৯০ : টমাস সেইন্ট প্রথম সেলাই কলের পেটেন্ট করেন।
১৮৫৫ : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তত্ত্বাবধানে পাঠশালার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে নর্মাল স্কুল স্থাপিত হয়।
১৮৪১ : ব্রিটিশ ম্যাগাজিন পাঞ্চ প্রকাশিত হয়।
১৮৯৪ : জর্জ ল্যমেত্র, বেলজীয় বিশ্বতত্ত্ববিদ।
১৯১২ : অমিতা সেন (আশ্রমকন্যা), সংগীত, নৃত্য ও অভিনয়ে পারদর্শিনী।
১৯১৫ : বিজন ভট্টাচার্য, একজন বাঙালি নাট্যব্যক্তিত্ব।
১৭৯০ : স্কটিশ দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ।
১৯৩১ : বাংলাদেশের মুসলিম জাগরণের কবি, ঔপন্যাসিক ও রাজনীতিবিদ ইসমাইল হোসেন সিরাজী।
২০২০ : বাংলাদেশি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমদ।
আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচার দিবস।
বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন একজন নাট্যকার ও অভিনেতা। শিক্ষক বাবার কর্মসূত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করার সুবাদে তিনি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। ফলে তাদের সংগ্রামী জীবন ও আঞ্চলিক কথ্য ভাষার ছাপ তার রচিত নাটকে পরিলক্ষিত হয়।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৫ সালের ১৭ জুলাই বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার খানখানাপুরে। বাবা ক্ষীরোদবিহারী ভট্টাচার্য ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। বিখ্যাত লেখিকা জ্ঞানপীঠ পুরস্কার বিজয়ী মহাশ্বেতা দেবী বিজন ভট্টাচার্যের স্ত্রী। তবে তারা বিবাহ বিচ্ছিন্ন হন। তাদের এক সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্য; যিনি ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নবারুণ ভট্টাচার্য একজন সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক এবং কবি।
বিজন ভট্টাচার্যের নাট্যজীবনের শুরু ১৯৪০-এর দশকে। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েসনের (আইপিটিএ নামে বেশি পরিচিত) প্রথম সারির নাট্যকর্মী ছিলেন তিনি। চিন্তা, চেতনা এবং সংগ্রামের প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনার দিশারী ছিল ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ। বিজন ভট্টাচার্যের নাটক রচনা, অভিনয় এবং নির্দেশনা সাফল্য লাভ করেছিল এই গণনাট্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
গণনাট্য আন্দোলন এবং বিজন ভট্টাচার্যের নাটক বাংলা নাটক রচনা এবং অভিনয়ের এক যুগ বদলের সূচনা করে। ১৯৪৪ সালে শ্রীরঙ্গম মঞ্চে বিজন রচিত ‘নবান্ন’ নাটকের প্রথম প্রদর্শন হয়। এই নাটকটির পটভূমিকা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতা, ১৯৪২ সালের আগস্ট আন্দোলন, পঞ্চাশের মন্বন্তর এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
১৯৫০ সালে তিনি নিজের নাটকের দল ক্যালকাটা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেও তিনি নাট্যকার, প্রধান অভিনেতা এবং নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ক্যালকাটা থিয়েটার ছেড়ে দিয়ে কবচ-কুণ্ডল নামে নতুন দল গঠন করেন।
বিজন রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- আগুন, জবানবন্দী, নবান্ন, জীয়নকন্যা, মরাচাঁদ, অবরোধ, কলঙ্ক, জননেতা, জতুগৃহ, মাস্টারমশাই, গোত্রান্তর, ছায়াপথ, দেবীগর্জন, কৃষ্ণপক্ষ, ধর্মগোলা, গর্ভবতী জননী, আজ বসন্ত, লাস ঘুইর্যা যাউক, স্বর্ণকুম্ভ, চলো সাগরে, চুল্লি, হাঁসখালির হাঁস ইত্যাদি।
বিজন ভট্টাচার্য প্রথম দিকে মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। ক্রমে মার্কসীয় দর্শনের পরিবর্তে বা সঙ্গে তার রচনায় লোকায়ত ধর্ম দর্শন, হিন্দু ধর্মের সমন্বয় প্রয়াসী মানসিকতা কাজ করেছিল। চিরকালীন মাতৃকা ভাবনা তার নাটকে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। অভিনেতা হিসেবেও তিনি অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। নানারকম চরিত্রকে মূর্ত করে তুলতে তিনি দক্ষ ছিলেন। নানা উপভাষার সংলাপ উচ্চারণেও তিনি সাফল্য অর্জন করেছিলেন। নাট্যনির্দেশক হিসেবেও তিনি সমান সফল ছিলেন। গণনাট্য সঙ্ঘে তার নাটক জবানবন্দী এবং নবান্ন ছিল অসাধারণ দুটি প্রযোজনা।
১৯৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত