বাংলাদেশি প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, জাতীয় অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক কবীর চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩৪৭তম (অধিবর্ষে ৩৪৮তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৬৪২ : পর্তুগিজ নাবিক আবেল তাসমান নিউজিল্যান্ড আবিষ্কার করেন।
১৮৮৯ : বেলজিয়াম নারী ও শিশু শ্রম বিষয়ে আইন জারি করে।
২০০১ : ২৯তম অলিম্পকস ক্রীড়া সংস্থার কমিটি পেইচিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯১১ : ট্রাইগভে হা্ভেল্ম, নোবেলজয়ী নরওয়েজিয়ান অর্থনীতিবিদ ও গণিতবিদ।
১৯২৩ : ফিলিপ ওয়ারেন অ্যান্ডারসন, নোবেলবিজয়ী আমেরিকান পদার্থবিদ ও একাডেমিক।
১৯৩৪ : জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, কিংবদন্তি বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার।
১৯৮৯ : টেইলর অ্যালিসন সুইফট, আমেরিকান গায়ক-গীতিকার, রেকর্ড প্রযোজক ও অভিনেত্রী।
১০৪৮ : বিশ্বখ্যাত ফার্সি পণ্ডিত, আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক আবু রায়হান মোহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বিরুনি।
১৯৩০ : ব্রিটিশ বিরোধী বাঙালি বিপ্লবী বিনয় বসু।
১৯৩৫ : নোবেলজয়ী ফরাসি রসায়নবিদ ভিক্টর গ্রিগনারড।
১৯৫৫ : নোবেলবিজয়ী পর্তুগিজ সাইকোলজিস্ট ও নিউরো সার্জন এগাস মনিয।
১৯৯২ : ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
২০১১ : বাংলাদেশি প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, জাতীয় অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক কবীর চৌধুরী।
কবীর চৌধুরী ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, লেখক, সংস্কৃতি ও সমাজকর্মী। তার সাহিত্যকর্ম বহুমুখী, বস্ত্তনিষ্ঠ ও অসাধারণ। তার রচিত, সম্পাদিত ও অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতেরও বেশি। বাঙালি পাঠকদের বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত করা এবং বাংলা সাহিত্যকে ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে বিদেশি পাঠকদের সামনে তুলে ধরা ছিল তার অনুবাদকর্মের অনন্যসাধারণ সাফল্য।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবা ছিলেন খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী এবং মা উম্মে কবীর আফিয়া চৌধুরী। পৈতৃক নিবাস ছিল নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার গোপাইরবাগ গ্রামে। তার স্ত্রী মেহের কবীর একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী।
পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয় পরিবারেই। পরিবারের সাহচর্যে তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪০ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেন।
১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে এমএতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। পরে ১৯৫৭-৫৮ সালে ফুলব্রাইট বৃত্তিধারী হিসেবে আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কিন সাহিত্য সম্পর্কে এবং ১৯৬৩-৬৫ সালে সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসন সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন এবং দীর্ঘ জীবনে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছেন।
স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন৷ ১৯৯৮ সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক পদ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। জীবনের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর স্তরে ‘কালচার স্টাডিজ’ কোর্সে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। জাতীয় অধ্যাপক অভিধায় ভূষিত হওয়ার আগেই অবশ্য তিনি তিন দশকব্যাপী গণযোগাযোগ ও জনকল্যাণধর্মী কর্মের সুবাদে জাতীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং অনুবাদও করেছেন উভয়মুখী। তিনি আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, মপাশাঁ, চেখভ, স্ট্রিনবার্গ, ইবসেন, স্যামুয়েল বেকেট, নগীব মাহফুজ, জেএম কোয়েতজি, বেওউলফ ও জোসে সারামাগো প্রমুখ প্রখ্যাত লেখকদের শ্রেষ্ঠ রচনাবলির বাংলা অনুবাদ করেছেন। একদিকে বাঙালি পাঠকদের বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিতি করে তোলা এবং অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যকে ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে বিদেশি পাঠকদের সামনে তুলে ধরা ছিল কবীর চৌধুরীর অনুবাদকর্মের অনন্যসাধারণ সাফল্য।
জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান গর্ভনর স্বর্ণপদক, ১৯৭০ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সম্মাননা পদক, ১৯৮৫ সালে অলক্ত স্বর্ণপদক ও সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, ১৯৮৯ সালে শেরেবাংলা পুরস্কার, ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৯১ সালে একুশে পদক, ১৯৯৪ সালে উইলিয়াম কেরি স্বর্ণপদক (ভারত), ১৯৯৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে সুফী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী জাতীয় পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে কবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার, ২০০১ সালে বিশ্ব বাঙালি সম্মেলন পুরস্কার, ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, ২০০৪ সালে ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড, ২০০৬ সালে বিশ্ব নাটক দিবস সম্মাননা, ভারতের টেগোর পিস অ্যাওয়ার্ড, ২০১০ সালে গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক ইত্যাদি।
বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম এবং একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি বিশ্বের বহুসংখ্যক দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, হংকং, জাপান, তুরস্ক, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সোভিয়েট ইউনিয়ন, মঙ্গোলিয়া, উত্তর কোরিয়া, উগান্ডা ও এঙ্গোলায় বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং কোনো কোনো সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
কবীর চৌধুরী ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে তার জানাজা শেষে গার্ড অব অনারসহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে দাফন করা হয়।
সূত্র: সংগৃহীত