১৯১৮ : বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৯৩৬ : লাইফ ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
১৯৩৩ : আলতাফ মাহমুদ, বাংলাদেশি সুরকার, সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৫২ : মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশি লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ।
২০১১ : বাংলাদেশের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
২০১৩ : একে-৪৭-এর উদ্ভাবক মিখাইল কালাশনিকভ।
আলতাফ মাহমুদ ছিলেন একজন বাংলাদেশি সুরকার, সংস্কৃতিকর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক। শহিদ দিবস নিয়ে রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির বর্তমান সুরটিও তারই করা। এই গানের সুরকার হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে। ১৯৪৮ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে বিএম কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি চিত্রকলা শিখতে কলকাতা গমন করেন। বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থাতেই তিনি গান গাইতে শুরু করেন।
তিনি প্রথমে প্রসিদ্ধ ভায়োলিনবাদক সুরেন রায়ের কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। এছাড়া তিনি গণসঙ্গীত গাইতে শিখেছিলেন; যা সেই সময় তাকে অসম্ভব জনপ্রিয়তা ও বিপুল খ্যাতি এনে দেয়। বিয়ে হয় সারা আরা মাহমুদের সাথে। মেয়ের নাম শাওন মাহমুদ।
১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় আসেন এবং ধুমকেতু শিল্পী সংঘে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি এই সংস্থাটির ‘সঙ্গীত পরিচালক’ পদে আসীন হন। ১৯৫৪ সালে ‘ভিয়েনা শান্তি সম্মেলনে’ মাহমুদ আমন্ত্রিত হন, কিন্তু করাচিতে পাকিস্তানি সরকার তার পাসপোর্ট আটকে দেয়ায় তিনি এখানে যোগ দিতে পারেননি।
তিনি ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত করাচিতে ছিলেন এবং ওস্তাদ আব্দুল কাদের খাঁ’র কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ক তালিম নিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি নৃত্যপরিচালক ঘনশ্যাম এবং সঙ্গীত পরিচালক দেবু ভট্টাচার্যের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন।
করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর মাহমুদ ১৯টি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া, ক্যায়সে কাহু, কার বউ, তানহা, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, দুই ভাই, সংসার, আঁকাবাঁকা, আদর্শ ছাপাখানা, নয়নতারা, শপথ নিলাম, প্রতিশোধ, কখগঘঙ, কুচবরণ কন্যা, সুযোরাণী দুয়োরাণী, আপন দুলাল, সপ্তডিঙ্গা প্রভৃতি।
এছাড়া তিনি রাজনীতি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার সাথেও জড়িত ছিলেন। সঙ্গীতে প্রতিভার পাশাপাশি মাহমুদ ছবিও আঁকতে পারতেন।
জীবন থেকে নেয়া আর এক শহীদ চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের অমর সৃষ্টি। বাংলা চলচ্চিত্রে এখনো যা মাইলফলক হয়ে আছে। এই চলচ্চিত্রে তিনি হামিং ব্যবহার করেন। যা ছিল তখনকার যুগে নতুন।
১৯৭১ সালে আলতাফ মাহমুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তার বাসায় গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। কিন্তু ক্যাম্পের কথা ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনী তাকে আটক করে। তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তার বাসা থেকে আরো অনেক গেরিলা যোদ্ধা আটক হয়।
এদের অনেকের সাথে তিনিও চিরতরে হারিয়ে গেছেন। পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হতে থাকে যা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে অণুপ্রারিত করেছিল।
১৯৭৭ সালে আলতাফ মাহমুদকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার কারণে তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। সংস্কৃতিক্ষেত্রে অসামান্য আবদান রাখায় শহিদ আলতাফ মাহমুদকে ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। এছাড়াও তাকে স্মরণ রাখতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহিদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন।
সূত্র : সংগৃহীত