1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
আজও উৎপাদন বন্ধ আশুলিয়ার ২১৯ কারখানায় শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে যা বললেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর চট্টগ্রামের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী আটক পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশে প্রবেশ ফি কমলো বোটানিক্যাল গার্ডেনের আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ৫৮ পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা ইতিহাসের পাতায় ১১ সেপ্টেম্বর উষ্ণ হৃদয় ও ঠান্ডা মস্তিষ্কের সম্মিলনে মানুষ হয় ভালো মানুষ, দেশ হয় ভালো দেশ ইতিহাসের পাতায় ১০ সেপ্টেম্বর আন্দোলন যেন থামছেই না, কার্যাদেশ হারানোর শঙ্কা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভেতরে রেখেই তালা ঝুলিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীরা

ইতিহাসে ডিসেম্বর ৯খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক এবং সমাজ সংষ্কারক বেগম রোকেয়া সাখাজন্মগ্রহণ করেনওয়াত হোসেন

  • সময় শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৭৭৯ বার দেখা হয়েছে

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩৪৩তম (অধিবর্ষে ৩৪৪তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৭৯৩ : নিউ ইয়র্ক শহরের প্রথম সংবাদপত্র ‘আমেরিকান মিনার্ভা’ নোয়াহ ওয়েবস্টার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯০৫ : ফ্রান্সে রাষ্ট্র থেকে গির্জা পৃথকীকরণ আইন পাস হয়।

জন্ম

১৬০৮ : জন মিলটন, ইংরেজ কবি।
১৭৪২ : কার্ল উইলহেম শেলে, সুইডেনের বিখ্যাত রসায়নবিদ।
১৮৭৯ : অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ, বাঙালি বহুভাষাবিদ পণ্ডিত এবং প্রাবন্ধিক।
১৮৮০ : বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক এবং সমাজ সংষ্কারক।
১৯১৬ : কার্ক ডগলাস, হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক।
১৯২৭ : ব্রজেন দাস, ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু।

মৃত্যু

১৯১৬ : জাপানি ঔপন্যাসিক সোসেকি নাৎসুম
১৯৩২ : খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
১৯৪২ : ভারতের পাঁচজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন দ্বারকানাথ কোটনিস। যারা দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের সময় চীনে চিকিৎসা সহায়তায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।

দিবস

আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস।
আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস।
জাতীয় রোকেয়া দিবস (বাংলাদেশ)।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন; ‘বেগম রোকেয়া’ নামেই অধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি বাংলার ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন বেগম রোকেয়া।

জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে। বাবা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের একজন শিক্ষিত জমিদার ছিলেন। তার মা ছিলেন রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা, আরও তিন ভাই ছিলেন তার।

মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে রোকেয়ার পরিবার ছিল খুবই রক্ষণশীল। সেসময় তাদের পরিবারে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো চল ছিল না। আর তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় ঘরের বাইরে গিয়ে মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভেরও কোনো সুযোগ ছিল না। তাই প্রথম জীবনে গোপনে দাদার কাছে একটু আধটু উর্দু ও বাংলা পড়তে শেখেন বেগম রোকেয়া। তার বড় দুভাই কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে শিক্ষালাভ করেছিলেন। তার বড় বোন করিমুন্নেসাও ছিলেন বিদ্যোৎসাহী। শিক্ষালাভ ও মূল্যবোধ গঠনে বড় দুভাই ও বোন রোকেয়ার জীবনকে প্রভাবিত করলেও তার আসল লেখাপড়া শুরু হয়েছিল বিয়ের পর স্বামীর সাহচর্যে।

শিশু বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় বসবাসের সময় তিনি লেখাপড়ার যে সামান্য সুযোগ পেয়েছিলেন, তা সমাজ ও আত্মীয়স্বজনের সমালোচনায় বেশিদূর এগোতে পারেননি, যদিও ভাইবোনদের সমর্থন ও সহযোগিতায় তিনি অল্প বয়সেই আরবি, ফার্সি, উর্দু ও বাংলা আয়ত্ত করেছিলেন।

বিহারের ভাগোলপুরে স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ের পর তার জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের শুরু হয়। বাঙালি সমাজ যখন সামাজিক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল, সেই সময় বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালি মুসলমান নারী জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম একজন পথিকৃৎ।

রোকেয়ার স্বামী ছিলেন খুব উদার মনের মানুষ এবং শিক্ষিত ব্যক্তি। বেগম রোকেয়া কিছুটা উর্দু তো আগেই শিখেছিলেন। বিয়ের পর সেই শিক্ষা তার উর্দুভাষী স্বামীর সহায়তায় আরও প্রসার লাভ করল। স্বামীর কাছ থেকে ইংরেজিতে খুব ভালো দক্ষতা অর্জন করেন। সুন্দর ইংরেজি রচনা করতে পারতেন তিনি। তবে বাংলা ভাষার প্রতি তার ছিল গভীর টান। বাংলা তিনি ছাড়লেন না। বাংলাতেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন।

রোকেয়ার সাহিত্যচর্চার সূত্রপাতও হয়েছিল স্বামীর অনুপ্রেরণায়। তার সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গদ্য রচনার মধ্য দিয়ে। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে ছিল প্রবন্ধ সংকলন ‘মতিচুর’ এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ‘সুলতানার স্বপ্ন’। ‘সুলতানার স্বপ্ন’কে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়।

১৯০৯ সালের ১৩ মে স্বামীর মৃত্যুর পর আত্মপ্রকাশ করেন এক নতুন বেগম রোকেয়া। লেখালেখির বাইরে সমাজে বদল আনার দিকে এবং নারী শিক্ষার বিস্তারেও তিনি মন দেন। মেয়েদের অভিভাবকরা যাতে তাদের স্কুলে পাঠায় তার জন্যে তিনি নিজে পর্দা করে, বোরকা পরে মেয়েদের বাড়ি বাড়ি যেতেন। সব সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি আজ কলকাতার একটি নামকরা মেয়েদের সরকারি স্কুল– সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স হাইস্কুল।’

আট ছাত্রীকে নিয়ে শুরু হয়েছিল কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলের যাত্রা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সোনিয়া আনিম বেগম রোকেয়া সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তিনি মনে করেন নারী হিসেবে মেয়েরা আজ যেখানে পৌঁছেছেন, তারা সেখানে পৌঁছতেন না, যদি নারীর উন্নতির জন্যে বেগম রোকেয়ার মতো মনীষীর অবদান না থাকত।’

ধর্ম ও সমাজের অনেক রীতিনীতি বেগম রোকেয়া মেনে নিয়েছিলেন ঠিকই; কিন্তু একটি রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়ে ওঠার পরও তিনি সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থাগুলোকে উপেক্ষা করে এগোতে পেরেছিলেন। রোকেয়ার সব কিছুর মাঝে যে একটি প্রচণ্ড ধরনের বিদ্রোহ ছিল– প্রচলিত সমাজব্যবস্থা, নারীর প্রচলিত অবস্থান, নারীর প্রতি তৎকালীন সমাজের প্রচলিত যে দৃষ্টিভঙ্গি–এসব কিছু নিয়ে সমাজের বিবেককে তিনি চাবুক দিয়ে কষাঘাত করেছিলেন। নারীর শিক্ষা গ্রহণ, নারীর বাইরে চলাফেরা এবং কাজের অধিকার, স্বাধীন চিন্তা-চেতনার অধিকার– এই বিষয়গুলো যে নারীর মুক্তির সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ, সেসব কথা বেগম রোকেয়া সারাজীবন বলে এসেছেন।

নারীর এগিয়ে চলার জন্যে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং নারী-পুরুষের মধ্যে সমতার পক্ষে তিনি যুক্তি তুলে ধরেছেন তার লেখা ও কাজে। সমাজে নারীর অসম অবস্থানের কথা সবসময়ে ফুটে উঠেছে তার দৃপ্ত কলমে। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রেখে দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি কখনই সম্ভবপর নয়। সারাজীবন তিনি পিছিয়ে থাকা নারী সমাজকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে অধিকার সচেতন করে তোলার প্রয়াস নিয়েছিলেন।

রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে বেগম রোকেয়ার জন্মস্থানে ছড়িয়ে আছে বিশিষ্ট এই নারী শিক্ষাবিদের অবদানের স্মৃতি বহনকারী স্কুলসহ বহু প্রতিষ্ঠান। শুধু শিক্ষাগত মুক্তি নয়, নারীর সার্বিক মুক্তির কথা চিন্তা করেছিলেন বেগম রোকেয়া। নারী জাতি ও অর্থনৈতিক বিষয়ে তার এক প্রবন্ধে তিনি নারী-পুরুষের সমকক্ষতার যে আদর্শের কথা লিখে গেছেন তা আজকের দিনে নারী সমাজের জন্যে একটা আদর্শ। তিনি জন্মেছিলেন সময়ের অনেক আগে।

স্বীকৃতি ও স্মরণ

বেগম রোকেয়ার অবদানের জন্যে রয়েছে অসংখ্য প্রাপ্তি। তার নামে কলকাতায় রয়েছে বেগম রোকেয়া উদ্যান। বাংলাদেশের ৭ম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ ৮ অক্টোবর ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর ২০০৯ সালে ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ হিসেবে তার নামকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করেন। উল্লেখ্য, নারীর নামে বাংলাদেশে প্রথম কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি।

বেগম রোকেয়ার নামে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬০-এর দশকে ছাত্রীনিবাস ‘রোকেয়া হল’ খোলা হয়; যার নাম আগে ছিল ‘উইমেন্স হল’ তবে ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৮ সালে ‘চামেলি হাউজ’ নামে প্রথমে হলটি চালু হয়েছিল।

মহীয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসনের জন্যে আবাসিক হল ‘রোকেয়া হল’ নামকরণ করা হয়।

প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর তার জন্মদিনে বেগম রোকেয়া দিবস পালন করা হয় এবং নারী উন্নয়নে অবদান রাখার জন্যে বিশিষ্ট নারীদেরকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।

১৯৮০ সালে বেগম রোকেয়ার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দুটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

তার ১৩৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুগল তাদের হোমপেজে বেগম রোকেয়ার গুগল ডুডল প্রদর্শন করে তার জন্মদিন উদ্‌যাপন করে। গুগল ডুডলটিতে দেখা যায় সাদা পোশাকে চশমা পরা বেগম রোকেয়া বই হাতে হেঁটে যাচ্ছেন।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে বাংলাদেশ সরকার একটি গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে পৈতৃক ভিটায় ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির উপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। এতে অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউজ, ৪ তলা ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি ইত্যাদি রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে স্মৃতিকেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলা একাডেমি।

বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন। তার কবর উত্তর কলকাতার সোদপুরে অবস্থিত; যা পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অমলেন্দু দে আবিষ্কার করেন।

সূত্র : সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © RMGBDNEWS24.COM