১৮৫৯ : অস্ট্রিয়া ও সার্ডিনিয়ার মধ্যে জুরিখ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯০৮ : বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের ফাঁসি কার্যকর হয়।
১৯৮৬ : বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ম সংশোধনী গৃহীত হয়। এতে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
১৪৮৩ : মার্টিন লুথার, জার্মান সন্ন্যাসী ও পুরোহিত প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার নেতা।
১৬৯৭ : উইলিয়াম হগারথ, ইংরেজ চিত্রশিল্পী, চিত্রকর ও সমালোচক।
১৮৪৮ : স্যার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ রাষ্ট্রগুরু।
১৮৬৮ : গিচিন ফুনাকোশি, জাপানি মার্শাল আর্টিস্ট, ‘জাপান কারাতে এসোসিয়েশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
১৮৯৩ : অমল হোম, বাঙালি সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক।
১৯৩৯ : আমজাদ খান চৌধুরী, বাংলাদেশা ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তা এবং প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা।
১৯৫৪ : জয় গোস্বামী, প্রখ্যাত বাঙালি কবি এবং সাহিত্যিক।
১৮৯১ : ফরাসি কবি ও শিক্ষাবিদ জ্যঁ নিকোলা আর্তু র্যাঁবো।
১৯০৮ : ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী কানাইলাল দত্ত।
১৯০৯ : অস্ট্রেলিয়ান কবি ও শিক্ষাবিদ জর্জ এসেক্স ইভান্স।
১৯৩৮ : তুরস্কের জাতির পিতা, আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি কামাল আতাতুর্ক।
১৯৮৭ : বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন তথা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী নূর হোসেন।
নূর হোসেন দিবস (বাংলাদেশ)।
কানাইলাল দত্ত ছিলেন ভারতের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম যুগের বিপ্লবী। বাংলা থেকে শুরু করে গোটা ভারতবর্ষে যিনি বিপ্লবের বীজ বপণ করেছিলেন। দেশকে স্বাধীন করার শপথ পালন করার জন্যে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতেও পিছপা হননি।
জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে মাতুলালয়ে। পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলি জেলার খরসরাই বেগমপুর গ্রামে। বাবা চুনিলাল দত্ত ছিলেন বোম্বাইতে ব্রিটিশ সরকারের নৌবিভাগের একজন হিসাবরক্ষক।
শৈশবে বোম্বাইয়ের গিরগাঁও এরিয়ান এডুকেশন সোসাইটি স্কুলে এবং পরবর্তী সময়ে চন্দননগর দুপ্লেক্স বিদ্যামন্দিরে (বর্তমান কানাইলাল বিদ্যামন্দির) অধ্যয়ন করেন। ১৯০৮ সালে হুগলি মোহসীন কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বিপ্লব ও রাজদ্রোহিতার অভিযোগে কারারুদ্ধ হওয়ায় ইংরেজ সরকার তাকে ডিগ্রি প্রদানে বাধা দেয়, কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সে বাধা উপেক্ষা করে তাকে ডিগ্রি প্রদান করে।
কানাইলাল চন্দননগর যুগান্তর পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক চারুচন্দ্র রায়ের সান্নিধ্য লাভ করেন। তারই অনুপ্রেরণায় কানাইলাল বিপ্লববাদে দীক্ষা নেন এবং ব্রিটিশ-ভারতে বিপ্লবীদের মুখপত্র যুগান্তর ও অন্যান্য পত্রিকা, বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাস এবং দেশপ্রেমিকদের জীবনগাথা পাঠে উদ্বুদ্ধ হন। শ্রীশচন্দ্র ঘোষের সক্রিয় নেতৃত্বাধীনে উপেন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ, বসন্তকুমার প্রমুখের গোন্দলপাড়া গোষ্ঠীর সঙ্গে কানাইলালের ঘনিষ্ঠতা হয়। শ্রীশচন্দ্রেরই ব্যবস্থাপনায় কানাইলাল আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও আয়ত্ত করেন। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চন্দননগর গোষ্ঠীর মধ্যে এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, যার পুরোভাগে ছিলেন কানাইলাল। এ সময় চন্দননগরে বিলাতি বস্ত্রবর্জন আন্দোলনসহ ইংরেজবিরোধী অসংখ্য স্থানীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কানাইলাল খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসুর কিংসফোর্ড হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ২ মে অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ও অন্যান্যের সঙ্গে কানাইলালও গ্রেপ্তার হন। তাদের আলীপুর জেলে (বর্তমান প্রেসিডেন্সি জেল) রাখা হয়। এ মামলার অন্যতম আসামি নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী প্রাণ বাঁচাতে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হওয়ায় বিপ্লবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯০৮ সালের ৩১ আগস্ট দলপতির নির্দেশে কানাইলাল অপর বন্দি বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সহযোগিতায় জেল হাসপাতালের ভেতরই নরেন গোস্বামীকে হত্যা করেন। বিচারে কানাইলালের ফাঁসির আদেশ হয়। এ খবর শুনে তিনি তার জন্যে কাউকে আপিল করতে নিষেধ করেন। বিনা আপিলে ১৯০৮ সালের ১০ নভেম্বর ফাঁসিকাষ্ঠে আরোহণ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন নির্বিকার, স্বাভাবিক। তার এ বীরোচিত আচরণ এবং মাতৃভূমির মুক্তির জন্যে এ আত্মত্যাগ কারাকর্মীদের পর্যন্ত অভিভূত করে।
হাইপাওয়ারের মোটা কাঁচের চশমা পরতেন কানাইলাল। মৃত্যুর আগে জেলে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন দাদা আশুতোষ। বলেছিলেন, ‘তোর চশমাটা দে। একটা কিছু তো আমার কাছে রাখি।’ কানাইলাল বলেন, ‘দাদা, চশমাটা আমি এখন দিতে পারব না। চোখে হাইপাওয়ার তো। ফাঁসির মঞ্চে যদি হোঁচট খাই, এরা ভাববে বাঙালির ছেলে আমি মৃত্যুর আগে ভয় পাচ্ছি। চশমাটা আমার মৃত্যুর পরে নিও।’
মৃত্যুর সময়ও কানাইলালের এমন তেজ দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ আধিকারিকেরা। পুর্ণচন্দ্র দে, সাগরকালী ঘোষ, মোতিলাল রায়, আশুতোষ দত্তরা তার মৃতদেহ নিতে যাওয়ার পর তাদের জিজ্ঞেস করেছিল, তোমাদের দেশে এরকম ছেলে ক’টা আছে!
কানাইলাল বলে গিয়েছিলেন, আমার মৃত্যুর পর দেহ নিয়ে শোক নয়, শোভাযাত্রা কোরো। যাতে সকলে অনুপ্রাণিত হয়। হয়েওছিল তাই। ১০ নভেম্বর, ১৯০৮। সে এক অবিস্মরণীয় দিন। আলিপুর জেল থেকে কানাইলালের মরদেহ বেরতেই হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে রাজপথ কার্যত অবরুদ্ধ। জনতার বাঁধভাঙা আবেগ। ক্যাওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত শেষযাত্রায় সামিল অসংখ্য মানুষ। আজও তার উৎসর্গ স্মরণীয় হয়ে আছে কোটি মানুষের হৃদয়ে।
সূত্র : সংগৃহীত