1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪০ অপরাহ্ন

ইতিহাসে নভেম্বর ২৮ বাংলাদেশি চিত্রকর ও কার্টুনিস্ট রফিকুন নবী জন্মগ্রহণ করেন ।

  • সময় রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১
  • ৮৭৩ বার দেখা হয়েছে

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩৩২তম (অধিবর্ষে ৩৩৩তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৫২০ : প্রথম ইউরোপীয়ান নাবিক হিসেবে ফার্ডিনান্ড ম্যাগেলান আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করেন।
১৮১৪ : লন্ডনের টাইমস পত্রিকা প্রথম স্বয়ংক্রিয় মেশিনে ছাপা হয়।

জন্ম

১৭৫৭ : উইলিয়াম ব্লেক, ইংরেজ কবি ও চিত্রকর।
১৭৯৩ : কার্ল জোনাস লাভ আল্মকভিস্ট, সুইডিশ কবি, সুরকার ও সমালোচক।
১৮২০ : ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস, সমাজতাত্ত্বিক।
১৯০৭ : আলবার্তো মোরাভিয়া, ইতালীয় সাংবাদিক ও লেখক।
১৯৩১ : গোলাম রহমান, বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
১৯৪৩ : রফিকুন নবী, বাংলাদেশি চিত্রকর ও কার্টুনিস্ট।
১৯৫০ : রাসেল অ্যালান হাল্স, নোবেলজয়ী মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

মৃত্যু

১৮৫৯ : মার্কিন ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, জীবনীকার, ইতিহাসবেত্তা ও কূটনীতিক ওয়াশিংটন আরভিং
১৯৬০ : আমেরিকান বংশোদ্ভূত ফরাসি লেখক ও কবি রিচার্ড রাইট
১৯৬২ : সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার কৃষ্ণচন্দ্র দে
১৯৮৯ : বাংলাদেশের প্রথম এটর্নি জেনারেল ফকির শাহাবুদ্দীন
১৯৯৯ : বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী জ্ঞানতাপস জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক
২০০৬ : অবিভক্ত ঢাকার প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফ

রফিকুন নবী

রফিকুন নবী। তিনি বাংলাদেশের খ্যাতনামা চিত্রকর, কার্টুনিস্ট। উপ-নাম রনবী। রনবী নামে জনপ্রিয়। টোকাই নামক কার্টুন চরিত্রটি তার অনবদ্য সৃষ্টি। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে টোকাই কার্টুন স্ট্রিপ হিসেবে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্যে তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন।

জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালের ২৮ নভেম্বর রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। বাবা রশীদুন নবী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা আনোয়ারা বেগম ছিলেন জমিদার পরিবারের সন্তান। রফিকুন নবীর স্ত্রী নাজমা বেগম।

বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব ও কৈশোরকাল কেটেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়৷ পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝিতে ঢাকায় স্থায়ী হন তারা। পুরান ঢাকাতেই কৈশোর ও যৌবনের বেশিরভাগ সময় কাটে। রনবী পুরান ঢাকার পোগোজ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকার সরকারি আর্ট কলেজে ভর্তি হন।

সেখানে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসানসহ খ্যাতিমান দিকপালের সান্নিধ্যে থেকে পড়াশুনা করেন৷ আর্ট কলেজে প্রথম বর্ষে থাকতে নিজের আঁকা ছবি প্রথম বিক্রি করেন ১৫ টাকায়৷ স্থানীয় সংবাদপত্রে রেখাচিত্র এঁকে এবং বুক কভার ইলাস্ট্রেশন করে পরিচিতি লাভ করেন দ্বিতীয় বর্ষেই৷ ১৯৬২ সালে এশিয়া ফাউন্ডেশনের বৃত্তি লাভ করেন। ‘৬৪ সালে স্নাতক পাশ করেন৷

পড়াশোনা শেষে রফিকুন নবী সে সময় ঢাকার প্রথম সারির পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত কাজ শুরু করেন। নিয়মিত কার্টুন আঁকতেন সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকায় কবি আবদুল গনি হাজারির কলাম কাল পেঁচার ডায়েরীতে৷ ১৯৬৪ সালের আগস্টে ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষক হিসেবে জীবন শুরু করেন তিনি৷ আর্ট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রদের নিয়ে তার শিক্ষকতা জীবনের শুরু হয়৷

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঢাকায় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে অর্থ, কাপড় ও খাদ্য সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে গ্রিক সরকারের পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন বৃত্তি নিয়ে তিনি ভর্তি হন গ্রিসের এথেন্স স্কুল অব ফাইন আর্ট-এ৷ পড়াশোনা করেন প্রিন্ট মেকিং-এর ওপর৷ ১৯৭৬ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি৷ শিক্ষক থেকে ধীরে ধীরে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকের পদে অধিষ্ঠিত হন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস-এর ড্রয়িং ও পেইন্টিং বিভাগে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন এই ইন্সটিটিউটের পরিচালক। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।

১৯৭৮ সালের ১৭ মে টোকাই শিরোনামে প্রথম স্ট্রিপ কার্টুনটি ছাপা হয় বিচিত্রার প্রারম্ভিক সংখ্যায়। প্রথম কার্টুনে টোকাই একজন বড় কর্মকর্তা৷ বসে আছে তার বানানো অফিসে৷ রাস্তার ইট দিয়ে তৈরি একটি টেবিলে৷ প্রথম কার্টুনেই বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া টোকাই নিয়মিত বিচিত্রায় ছাপা হয়৷ ২০০০ সাল থেকে সাপ্তাহিক ২০০০-এ শুরু হয় আঁকা হলেও ২০০৪ সালের দিকে নিয়মিত টোকাই আঁকা বন্ধ করেন তিনি।

টোকাইয়ের মাথায় টাক, কখনও গুটিকয়েক চুল, খাটো চেক লুঙ্গি মোটা পেটে বাঁধা৷ কখনো কাঁধে বস্তা৷ ‘৭৮-‘৭৯-এ ভোটের সময় বিলি করা জামা পরেছিল টোকাই, সেই জামাটি ছিল ওর থেকে অনেক বড় আকারের৷ থাকে রাস্তার ডাস্টবিনের পাশে, ফুটপাতে, ফেলে রাখা কংক্রিটের পাইপের ভেতর, পার্কের বেঞ্চিতে, ভাঙা দেয়ালের পাশে, কাঠের গুঁড়িতে, ঠেলা গাড়ির ওপরে, ইটের ওপর মাথা পেতে৷ তার পাশে থাকে কুকুর, কাক৷ কথা বলে কাক, গরু, ছাগল, মশার সাথে৷ কথা বলে মানুষের সাথেও৷

তার কথা বুদ্ধিদীপ্ত, বিচক্ষণতায় ভরা, আবার রসে সিক্ত৷ পেন অ্যান্ড ইঙ্কের পরে টোকাই হাজির হলো জলরঙের উচ্ছলতায়৷ সেখানে সে কখনও মনের আনন্দে মার্বেল গুটি দিয়ে খেলে, নৌকা চালায়, বাঁশি বাজায়, বেহালা বাজায়, কখনও রাস্তার বুকে উবু হয়ে লিখতে শুরু করে, কখনও আনন্দে দেয় ছুট৷ কখনও একা বসে থাকে, আবার কখনও পাঁচিলের উপরে উঠে পাশের দেয়ালের অপর দিকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে, রাজকীয় বাড়ির দরজায় হাজির হয় কাঁধে বস্তা নিয়ে৷ রনবীর টোকাই এভাবে সমাজ-সংসারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলে প্রতিনিয়ত৷ মূলত টোকাই চরিত্রটি বাস্তবের এমন কিছু পথশিশুর প্রতিনিধিত্ব করে, যারা, মানুষের ফেলে দেয়া আবর্জনা, কুড়িয়ে নিয়ে যায় বা টুকিয়ে নিয়ে যায়।

বাস্তবের সেসব পথশিশুকে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে টোকাই’র বাসস্থান হলো আস্তাকুঁড়ে বা ডাস্টবিনের কাছাকাছি, ফুটপাত কিংবা পতিত বড় পাইপ, যা তার বাস্তুহীনতাকে প্রতীকায়িত করে। তার পোশাক বলতে একমাত্র লুঙ্গি, যা তার দারিদ্রকে প্রতীকায়িত করে। অন্য অর্থে টোকাই প্রতীকতাবর্জিত একটি চরিত্র, যে প্রায় বাস্তবই তুলে ধরে। এ অর্থে টোকাই চরিত্রে প্রতীকতা খোঁজার অবকাশ নেই।

রফিকুন নবী শিল্পকলায় অবদানের জন্যে ১৯৯৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি চারুকলায় জাতীয় সম্মাননা শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, বুক-কভার ডিজাইনের জন্যে ১৩ বার ন্যাশনাল একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন৷ ২০০৮ সালে তার আঁকা খরা শীর্ষক ছবির জন্যে ৮০টি দেশের ৩০০ জন চিত্রশিল্পীর মধ্যে ‘এক্সিলেন্ট আর্টিস্টস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে মনোনীত হন৷ তিনি ২০১৫ সালের জন্যে শেলটেক কর্তৃক প্রদত্ত ‘শেলটেক পদক’ লাভ করেন।

সূত্র : সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com