পশ্চিমবঙ্গের একজন জনপ্রিয় বাঙালি লেখক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৫০তম (অধিবর্ষে ২৫১তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯০৪ : দলাইলামার সঙ্গে ব্রিটেনের চুক্তি হয়।
১৯১১ : ফরাসি কবি গিলাউম আপোলিনিয়ার লুভ্যর জাদুঘর থেকে মোনালিসা চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দী হন।
১৯১৯ : মহাত্মা গান্ধীর সম্পাদনায় প্রথম ‘নবজীবন’ গুজরাটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
১৯২৩ : আন্তর্জাতিক অপরাধী পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল) গঠিত হয়।
১৮৭০ : আলেকসান্দর কুপ্রিন, রুশ কথাসাহিত্যিক।
১৮৮৭ : গোপীনাথ কবিরাজ, বাঙালি সংস্কৃত-তন্ত্র পণ্ডিত ও দার্শনিক।
১৮৯২ : কুমুদশঙ্কর রায়, প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী।
১৯১২ : ডেভিড প্যাকার্ড, টেকজায়ান্ট হিউলেট প্যাকার্ডের (এইচপি) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
১৯১৭ : জন কর্নফোর্থ, নোবেলজয়ী অস্ট্রেলীয় জৈবরসায়নবিদ।
১৯৩৪ : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের একজন জনপ্রিয় বাঙালি লেখক ও কবি।
১৯৫৪ : শাইখ সিরাজ, বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নকর্মী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
১৯০৭ : প্রথম সাহিত্যে নোবেলজয়ী ফরাসি কবি সুলি প্রুদহোম।
১৯৩২ : বিশিষ্ট বাঙালি সাংবাদিক, দেশপ্রেমিক ও বক্তা শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী।
১৯৭৬ : স্বাধীনতা সংগ্রামী ও যুগান্তর দলের অন্যতম কাণ্ডারি সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ।
১৯৯৯ : প্রথিতযশা ভারতীয় বাঙালি গীতিকার ও সুরকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১০ : আমেরিকান লেখক বারবারা হল্যান্ড।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বিংশ শতকের শেষার্ধে আবিভুর্ত একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিস্টোব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাঙলাভাষী এই সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসেবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। ‘নীললোহিত’, ‘সনাতন পাঠক’, ‘নীল উপাধ্যায় ইত্যাদি ছদ্মনামেও তিনি লিখতেন।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায়। বড় হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক।
সুনীলের বাবা ছেলেকে টেনিসনের একটা কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিদিন এখান থেকে দু’টি করে কবিতা অনুবাদ করবে। এটা করা হয়েছিল তিনি যাতে দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। তিনি তাই করতেন। বন্ধুরা যখন সিনেমা দেখত, বিড়ি ফুঁকত সুনীল তখন পিতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ একঘেঁয়ে উঠলে তিনিই নিজেই লিখতে শুরু করেন।
সুনীলের মা কখনোই চাননি তার ছেলে শিক্ষকতা করুক। পড়াশুনা শেষ করে কিছুদিন তিনি অফিসে চাকুরি করেছেন। তারপর থেকে সাংবাদিকতায়। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মি. পলেন কলকাতায় এলে সুনীলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়। সেই সূত্রে মার্কিন মুলুকে গেলেন সুনীল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে। ডিগ্রি হয়ে গেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন।
১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ সালে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো- আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনি চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাকাবাবু চরিত্রের চারটি কাহিনি সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন?, মিশর রহস্য এবং ‘পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক’ চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ‘হঠাৎ নীরার জন্য’ তার চিত্রনাট্যে নির্মিত আরেকটি ছবি।
২০০২ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরের শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
হৃদযন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় ২৫ অক্টোবর ২০১২ তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র: সংগৃহীত