সুস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান ভিত্তি দম। অথচ শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই সঠিক নিয়মে দম নেয় না। ফলে রক্ত পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, দেহকোষে অভাব ঘটে প্রাণশক্তির।
ক্লান্তি-অবসাদ, ক্রনিক সর্দি, নার্ভাসনেস, প্যানিক এটাক, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ রোগের অন্যতম প্রধান কারণ সঠিক প্রক্রিয়ায় দম না নেওয়া। আমেরিকান বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ ডাঃ রুডি ট্যাডারহিল দীর্ঘ গবেষণার আলোকে বলেছেন, কেবলমাত্র সঠিকভাবে দম নেয়ার মাধ্যমেই আমরা এই রোগগুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি।
হাজার বছর ধরে প্রাচ্যর যোগীরা দমচর্চার বিভিন্ন টেকনিক কাজে লাগিয়ে সবসময় সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকতেন। আর এখন আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এই স্বাস্থ্যাভ্যাসের কল্যাণকর দিকগুলো ধীরে ধীরে খুঁজে পাচ্ছে।
দমচর্চার একটি পদ্ধতির নাম নাসায়ন। সম্প্রতি এই নাসায়ন বা ‘নাসাল ব্রিদিং’ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজির একটি গবেষণা ‘ন্যাচার’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে নাসায়নকালে শরীরে ঘটা ইতিবাচক পরিবর্তন সম্পর্কে বলা হয়েছে সবিস্তারে।
আর তা ঘটে যখন আমরা একনাসা প্রাণায়ামে একটি নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস নিই। অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির বায়োডিজাইন ল্যাবের গবেষকরা এর প্রমাণ পেয়েছেন হাতেনাতে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড কলেজ অফ চিরোপ্রাকটিকের গবেষকেরা বলছেন, মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলি তারা পরিমাপ করতে পারছেন।
আধুনিক গবেষণার আলোকে প্রাপ্ত এই তথ্যপ্রমাণগুলো দ্বার উন্মোচন করেছে স্রেফ দমচর্চার মাধ্যমে বিষণ্নতাসহ মস্তিষ্কের বহু ব্যাধি নিরাময়ের।
গবেষকরা দেখেছেন যে, ডান নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস নেওয়া তুলনামূলকভাবে বেশি সহানুভূতিশীল কার্যকলাপ বা উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার সাথে জড়িত। আর বাম নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস নেওয়া তুলনামূলকভাবে বেশি জড়িত প্যারাসিমপ্যাথেটিক অবস্থা বা স্ট্রেস-রিলিফের সাথে।
সহজ কথায়, ডান নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস নেওয়া মানুষকে শক্তি জোগাতে সাহায্য করতে পারে এবং বাম নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস নেওয়া সাহায্য করতে পারে শান্ত মানসিক অবস্থা খুঁজে পেতে।
একই গবেষণায় আরও দেখা যায়, ডান অনুনাসিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় মস্তিষ্কের উভয় বলয় সমানভাবে উদ্দীপ্ত হয়, যা মস্তিষ্কের একটি উত্তেজিত অবস্থাকে প্ররোচিত করে। এবং বাম অনুনাসিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সমানভাবে হ্রাস পায়, যা দেহ মনের একটি শান্ত অবস্থাকে প্ররোচিত করে।
ফলে, নাসায়নকালে মস্তিষ্কের দুই বলয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়। তাই দেহ-মন মুহূর্তেই সজীব ও সতেজ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি স্নায়ু ও পেশী শিথিল হতে শুরু করে। এ-ছাড়া মাইগ্রেন নিরাময়েও নাসায়ন বেশ উপকারী।
গভীর দম চর্চায় জীবণীশক্তি বৃদ্ধি পায়। কর্মব্যস্ততার পর শরীর সহজেই শিথিল হয়। তাই নিয়মিত প্রাণায়ামে আপনার দেহ থাকবে সতেজ, মন হবে প্রফুল্ল। উপভোগ্য হবে প্রতিটি ক্ষণ।
নিয়মিত নাসায়ন দম চর্চায় ক্লান্তি ও অবসাদমুক্ত হয়ে উপভোগ্য হয়ে উঠুক আপনার জীবন।
পদ্মাসন, সুখাসন বা অন্য যে আসনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেই আসনে বসুন। এবার প্রথমে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নাকের ডান পাশের ছিদ্র এমনভাবে চেপে ধরুন যেন বাতাস বেরিয়ে যেতে না পারে।
এবার বাম পাশের ছিদ্র দিয়ে দম নিয়ে অনামিকা দিয়ে বাম পাশের ছিদ্রটিও বন্ধ করে দিন। ডান ছিদ্র থেকে বুড়ো আঙুল তুলে ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। বাম ছিদ্র বন্ধ রাখা অবস্থায়ই নাকের ডান ছিদ্র দিয়ে পুনরায় দম নিন। দম নেয়া হলে বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান ছিদ্র বন্ধ করে পুনরায় বাম ছিদ্র দিয়ে দম ছাড়ুন।
পুরোটা মিলে হলো একপ্রস্থ। এভাবে দিনে ৫-১০ প্রস্থ করতে পারেন।
নাসায়ন শুরু করুন আজই। টানা ছয় মাস করেই দেখুন, নিজের প্রাণশক্তি দেখে বিস্মিত হবেন আপনি নিজেই!
তথ্যসূত্র Nature: Scientific Reports, AUT Journal