নবম শতকের এক হজ মৌসুম। উটের কাফেলায় চড়ে হজে রওনা হয়েছেন বিখ্যাত বুজুর্গ রাবি ইবনে সোলায়মান।
পথে বিশ্রামের জন্যে এক শহরের বাজারে থামলে দেখা পান এক নারীর।
ভাগাড়ে পড়ে থাকা মৃত একটি খচ্চরের দেহ থেকে ছুরি দিয়ে মাংস কাটছে নারী।
রাবি ইবনে সোলায়মান ভাবলেন, এ বোধ হয় এই মাংস বাজারে বিক্রি করবে।
পিছু নিলেন তার। পৌঁছালেন নারীর বাসস্থান জীর্ণ কুটিরে।
শুনলেন নারী তার কন্যাদের বলছেন, “আর চিন্তা নেই বাছারা। খাবার এসে গেছে। একটু পরেই তোমরা মাংস খাবে।“
শুনে ইবনে সোলায়মান আঁতকে উঠলেন। তার মানে মা তার সন্তানদের মৃত পশুর মাংস খাওয়াচ্ছে!
চিৎকার করে বলে উঠলেন, হে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহর ওয়াস্তে এ মাংস তোমরা খেও না। এ মাংস এক মৃত পশু থেকে নেওয়া!
নারী তো ক্ষিপ্ত! এ কি করলেন আপনি? আজ চারদিন এ এতিম শিশুগুলো অন্নহীন! কত কষ্টে কিছু খাবার যোগাড় করলাম। আর আপনি তা নষ্ট করে দিলেন!
রাবি ইবনে সোলায়মান স্তম্ভিত! এত দারিদ্র্যও হতে পারে!
জিজ্ঞেস করলেন, সন্তানদের বাবা কোথায়?
নারী বললেন, স্বামী তো খুব নেককার মানুষ ছিলেন! সৎ ছিলেন। কিন্তু সঞ্চয় কিছু ছিল না!
আজ এক বছর হলো তিনি মারা গেছেন। সেই থেকে আমাদের দিন চলছে নিদারুণে অর্থকষ্টে!
রাবি ইবনে সোলায়মান সঙ্গে সঙ্গে ছুটলেন বাজারে। নিজের সঞ্চয় দিয়ে ধামা ভরে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে এলেন। তাদের হাতে দিয়ে বললেন, এই নাও কিছু খাবার। কয়েকদিন এ দিয়ে চলবে।
আর এই হলো কিছু অর্থ। বলে হযরত সোলায়মান তার কাছে থাকা বাকি সমস্ত অর্থ দিয়ে দিলেন।
হজে আর তার যাওয়া হলো না। ফেরা হলো না নিজের দেশেও। রাহা খরচ যে নেই!
রাহা খরচ যোগাড়ের জন্যে ঐ শহরেই একটা কাজ জুটিয়ে থেকে গেলেন।
এদিকে সহযাত্রীরা যখন হজশেষে ফেরত যাত্রায় আবারো কাফেলা থামাল, রাবি ইবনে সোলায়মান সবার কাছে দোয়া চাইতে লাগলেন। বললেন, তোমরা তো হজ করে এসেছ। আমার জন্যে দোয়া করো।
তারা বলতে লাগল, আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? হজে তো আপনি আমাদের সাথেই ছিলেন!
আরেকজন দৌড়ে এসে বলল, আরে এই তো, আপনি এখানে! কি যে হন্যে হয়ে খুঁজছি আপনাকে। তাওয়াফ শেষে আশরফির এই থলেটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেই যে উধাও হলেন, আর তো আপনার দেখা নেই! থলে বইতে বইতে আমার তো হাত ব্যথা হয়ে গেছে।
সবকিছুই রাবি সোলায়মানের কাছে বিস্ময়কর ঠেকছে। থলে খুলে দেখেন ৬০০ স্বর্ণমুদ্রা!
রাতে স্বপ্নে শুনলেন ঐশীবাণী- তার দান প্রবণতায় সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তার রূপে এক ফেরেশতা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এবার হজে যে তার হয়ে হজ করেছে।
এবং হজশেষে ৬০০ স্বর্ণমুদ্রার একটি থলেও দিয়েছেন তার সেই ৬০০ রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে, যা হতদরিদ্র পরিবারটিকে রাবি ইবনে সোলায়মান দিয়েছিলেন!
আসছে ঈদুল আজহা। ঈদ মানেই আনন্দ।
তবে এবারের ঈদ হয়তো অনেকের জন্যেই আনন্দময় হবে না। কারণ আমাদের মাঝে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের উপার্জন প্রায় থেমে গেছে এই লকডাউনে। অনেকেই বেতন আংশিক পাচ্ছেন বা একেবারেই পাচ্ছেন না। অনেকের ফ্যাক্টরি বন্ধ, কোম্পানি বন্ধ, কর্মীদের বেতন দিতে পারছেন না ঠিকমতো।
তার চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দিনে আনে দিন খায় সেই মানুষগুলোর, যাদের পেটে এক বেলা খাবার ঠিকমতো জুটছে কিনা সন্দেহ।
আরও আছে এমন অনেক পরিবার যাদের এক বা একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত অথবা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে সামাজিক চাপের মুখে ঘরবন্দী হয়ে আছেন তারা। আক্রান্ত হবার ভয়ে প্রতিবেশী-পরিজন তাদের একরকম পরিত্যাগ করেছে!