করোনার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার চার সপ্তাহ বা এক মাস পর নয়, আট সপ্তাহ বা দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে একাধিকবার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের সময় পাল্টানো হলো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, যাঁরা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন বা নেবেন, তাঁদের সবাইকে মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকার দ্বিতীয় চালান আসতে পারে।
কভিড-১৯ টিকাদান পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে বলেছিল, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে সময়ের পার্থক্য হবে চার সপ্তাহ। এর সমালোচনা শুরু হলে সময় পাল্টে আট সপ্তাহ করা হয়। কিন্তু গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর আগের দিন গত ৬ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুই ডোজের পার্থক্য হবে চার সপ্তাহ।
গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, আট থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিলে অধিকতর ফল পাওয়া যায়। এই তথ্য জানার পর দেশের বিশেষজ্ঞরা দফায় দফায় বৈঠক করে সরকারকে চার সপ্তাহ থেকে সরে আসার সুপারিশ করেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকেও বিষয়টিতে নীতিগত সাড়া দেওয়ার পরই গতকাল নতুন সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে গত শনিবার কালের কণ্ঠে ‘দ্বিতীয় ডোজের সময় পেছাচ্ছে!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা আগে বলেছি, প্রয়োজন অনুসারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে পরিকল্পনার মধ্যেই। সে অনুসারেই আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার আলোকে আমাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। তাদের সুপারিশমতোই আমরা প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দিয়ে দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী শুরু হয় গণটিকাদান। গতকাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ লাখের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। যাঁরা এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য এক মাস পরের তারিখও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ইতিমধ্যে যাঁরা টিকা নিয়েছেন এবং এক মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য তারিখ জানানো হয়েছিল, তাঁদেরকে আমরা দুই মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য বার্তা (এসএমএস) পাঠাব। বিষয়টি অন্যান্যভাবেও প্রচার করব।’
এদিকে গতকাল একটি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়, যাদের বয়স ৪০ হয়নি, তাদেরও এখনই টিকার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে; এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাসংক্রান্ত কারিগরি কমিটির একজন পরামর্শক ও বাংলাদেশের জাতীয় টিকা বিষয়ক কারিগরি দলের (নাইট্যাগ) একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শুরুতেই ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। সরকার একবার আমাদের পরামর্শকে কিছুটা গুরুত্ব দিয়ে আট সপ্তাহ করল, কিন্তু তারপর হঠাৎ করেই চার সপ্তাহ করেছিল। তবে গত শনিবার আমরা নাইট্যাগ থেকে বৈঠক করে আমাদের সিদ্ধান্ত সরকারকে আবারও জানিয়েছিলাম।’
এদিকে সরকার গঠিত করোনা মোকাবেলায় জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক থেকেও সরকারকে সুপারিশ করা হয় চার সপ্তাহ পরিবর্তন করে আট থেকে ১২ সপ্তাহ করার জন্য।
এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরকারের চুক্তি অনুসারে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় চালান আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দেশে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি। গতকাল তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন। পরে সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি ৫০ লাখ ডোজ না হলেও ৩০ লাখ ডোজের মতো আসতে পারে এবং বাকিটাও দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দেশের মোট ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১৩ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল এক দিনেই নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন, যার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে গতকাল টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন। আর এ পর্যন্ত টিকা নেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল ৪৫৫ জনের। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধনকারী ২০ লাখ ছাড়িয়েছে।