ব্যয় করলে আপনি কখনো গরিব হবেন না। কিন্তু অপচয় করলে গরিব হয়ে যাবেন।
অপচয় কখন হয়?
যখন আপনি সচেতন নন।
সচেতন কখন হন? যখন জিনিষের প্রতি মায়া বাড়ে মমতা বাড়ে। যখন জিনিসটা নিজের মনে হয়।
আর যে জিনিস সহজে পাওয়া যায় তার প্রতি মায়া থাকেনা।
আগে সিল্কের রুমাল মানে খুব দামি রুমাল হতো। জমিদার পুত্রের জন্যে কিন্তু সিল্কের রুমালটা দামী কিছু না।
দেখা গেল সে জুতো মোছার জন্য কিছু পাচ্ছে না ওই সিল্কের রুমাল দিয়েই জুতো মুছে ফেলবে। কারণ সিল্কটা তার কেনা নয়। এই সিল্কটা কেনা হচ্ছে তার বাবার।
আমরা একজন ধনকুবেরের নাম বলি- ‘হেনরি ফোর্ড’। হেনরি ফোর্ড আমেরিকাতে তখন এক নম্বর ধনকুবের। ফোর্ড মটরসের মালিক।
হেনরি ফোর্ডের বিশেষত্বটা কী? কেন ধনকুবের হয়ে গেলেন?
তিনি ব্যবসার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন। গাড়িটা সবাই যাতে কিনতে পারে অর্থাৎ কম দামে যাতে কিনতে পারে এইজন্যে এটার ফ্যাক্টরি বানিয়ে ফেললেন।
গাড়িগুলো মেকানিকরা আগে মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপে বানাত। একটা একটা একটা করে বানাত। অনেক দাম। হেনরি ফোর্ড প্রোডাকশন লাইন করে ফেললেন। কম দামে গাড়ি দেওয়ায় অল্পদিনেই ধনকুবের হয়ে গেলেন।
একবার হেনরি ফোর্ড এবং তার ছেলে এক হোটেলে উঠেছে।
হোটেলওয়ালা তো সবচেয়ে ডিলাক্স স্যুট, সবচেয়ে ভালো স্যুটটা হেনরি ফোর্ডের জন্যে দিলেন। এবং সেকেন্ড যেটা ভালো সেটা তার ছেলের জন্যে। সেটা একটা রয়্যাল স্যুট। তো ছেলে চলে গেল তার রয়্যাল স্যুটে।
হেনরি ফোর্ড যখন হোটেলে চেক ইন করবেন তো তিনি ভাড়া জিজ্ঞেস করলেন। বললেন যে, আমার জন্যে যে ডিলাক্স স্যুট দিয়েছেন,তার ভাড়া কত?
তাকে বলা হল, ভাড়ার জন্যে কোনো চিন্তা করতে হবে না। আপনি এসেছেন আমাদের সবচেয়ে ভালো মানের যে স্যুটটা তা আপনার জন্যে। এক নম্বর স্যুট।
হেনরি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ভাড়া কত? তো বলা হল, ভাড়া এত ডলার। হেনরি ফোর্ড বললেন, আমার জন্যে একটা সিঙ্গেল রুম হলেই যথেষ্ট।
আমি একা থাকব। ডিলাক্স বেড লাগবে না। সিঙ্গেল বেড হলেই আমার চলবে।
হোটেল কর্তৃপক্ষ তার দিকে ‘হা’ করে তাকিয়ে রইল।
বলল যে, আপনার ছেলে রয়্যাল স্যুটে থাকবে আর আপনি সিঙ্গেল রুমে থাকবেন! হেনরি বললেন দেখ! আমার যে ছেলে, তার বাবা হচ্ছে হেনরি ফোর্ড।
আমার তো তার মত ধনকুবের বাবা নাই। এমন ধনী বাবা থাকলে আমিও কী করতাম? রয়্যাল স্যুটে উঠতাম।
আসলে যারা কষ্ট করেন তারা খরচ করার সময় সবসময় চিন্তা করেন।
আর যাদের কষ্ট নাই, যারা সহজে পেয়ে যায়, তারা খরচ করার সময় কত খরচ হচ্ছে কখনো এটা তারা চিন্তা করেনা। কারণ যে জিনিস অনায়াসে পাওয়া যায় সে জিনিসের প্রতি মায়া তত কম থাকে। এবং যে জিনিস অর্জন করতে কষ্ট যত বেশি হয় তার প্রতি মায়া তত বেশি থাকে।
আসলে কষ্ট করে পেলে জিনিসটা নিজের মনে হয়। ব্যয় হচ্ছে না অপচয় হচ্ছে এটা তখন সে চিন্তা করে। এবং সেই উপকরণ সেই অর্থ সেই বিত্ত দিয়ে সে নিজের কল্যাণ সাধন করতে পারে।
পরিশ্রম ছাড়া যে টাকা পাওয়া যায় সে টাকা তার কল্যাণেও আসে না। তার পরিবারের কল্যাণেও আসে না।