1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন

কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রম : সবার জন্যে যে সেবা

  • সময় মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১
  • ১১০৩ বার দেখা হয়েছে

যে মারা যায় তার চেয়ে নিঃস্ব আর কেউ নাই

করোনার সময় জীবনের একটা নির্মম সত্য আমি উপলব্ধি করলাম। আগেও জিনিসটা বুঝতাম, কিন্তু এত নির্মমভাবে চোখের সামনে ধরা পড়ে নাই।

৫০টা ফ্ল্যাটের মালিক। তার এই ৫০টা ফ্ল্যাটের মধ্যে কোথাও গোসল করানোর জন্যে কোনো ঘর পাওয়া গেল না। রাস্তায় তাকে গোসল করাতে হলো।

বুঝলাম- আসলে যখন কেউ মারা যায়…ধরুন বেইলি রোডে ১৮ তলা বিল্ডিংয়ের মালিক। মার্কেটসহ ১৮ তলা। মহিলা! মারা গেল মুগদাতে। ছেলেরা কেউ দেখতে যায় নাই। নান।

তাকে যে ওখানে ফেলে রেখে আসছে, নিয়েও গেছে হচ্ছে তার পিএ/কর্মচারী। দেখতে যায় নি।

তাদেরকে খবর দেয়া হলো যে মারা গেছে দাফন। বলে যে ছবি পাঠিয়ে দিলেই হবে। আপনারা যেভাবে করেন,আমাদের সম্মতি আছে।

বুঝলাম যে মারা যায় তার চেয়ে নিঃস্ব আর কেউ নাই। তার ব্যাংকে হাজার কোটি টাকা থাকতে পারে। কিন্তু চেক সাইন করার কোনো ক্ষমতা তার নাই। তার চেয়ে নিঃস্ব কেউ নাই।

মৃতের দাফন করা হচ্ছে ফরজে কেফায়া, অর্থাৎ সামাজিক দায়িত্ব!

নতুন উপলব্ধি হলো যে না দাফন সেবা করতে হবে। একজন মৃতের দাফন করা হচ্ছে ফরজে কেফায়া।

অন্য কাজগুলো তো হচ্ছে মানে এটা নফল। কিন্তু মৃতের দাফন করা হচ্ছে ফরজ। অর্থাৎ সামাজিক দায়িত্ব!

কিছু মানুষ যদি এটা পালন করে সবার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

আমরা বললাম যে ঠিক আছে। করোনা আমাদেরকে যে অভিজ্ঞতা দিয়েছে সেই আলোকে আমরা দাফন কার্যক্রম শুরু করলাম।

কেউ মারা গেলে সমাজের সচেতন মানুষ হিসেবে তার গোসল করানোর পবিত্র দায়িত্ব আমরা নিতে চাই

বনশ্রীতে আমাদের হাম্মাম হলো। ওয়াইএমসিএ-র নিচতলায় আমাদের হাম্মাম হয়েছে। এবং এরপরে মিরপুরে উত্তরাতে এবং বিভিন্ন জায়গায় আমরা এই হাম্মাম করব।

যাতে যে মারা যায় তার ওয়ারিশরা কী করবে,ওয়ারিশদের ব্যাপার। কিন্তু সমাজের সচেতন মানুষ হিসেবে তার গোসল করানোর পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে আমরা নিতে চাই এবং এই নেয়াটা হচ্ছে আমাদের জন্যে করোনাকালের একটা বড় অর্জন।

তো আমাদের এখন অ্যাম্বুলেন্স আছে,গাড়ি আছে। যদি এই উপলব্ধি না আসত এগুলো অকেজো পড়ে থাকত।

কিন্তু এখন এগুলো আমাদের পুরো কাজে লাগবে।

এখন আমরা যে-কেউ মারা যাই। যে-কেউ মারা যেতে পারি যে-কোনো সবচেয়ে বেস্ট পসিবল কম খরচের মধ্যে বেস্ট পসিবল অ্যারেঞ্জমেন্ট।

যাতে যাকে ওখানে গোসল করানো হয় তার আত্মা যেন শান্তি পায় যে দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে তো এরকম গোসল পাই নাই! অন্তত মরার পরে তো একটা গোসল দিয়েছে।

মৃত্যুর পরে সে কি ডিজার্ভ করে না তাকে একটু মমতার সাথে গোসল করানো হোক?

একজন মানুষ তো ডিজার্ভ করে। সে-তো তার জীবন ব্যয় করেছে এই সমাজের জন্যে,মানুষের জন্যে!

মৃত্যুর পরে সে কি ডিজার্ভ করে না তাকে একটু মমতার সাথে গোসল করানো হোক? তাকে একটু সুন্দর করে কাপড় পরিয়ে দেয়া হোক? তাকে একটু মমতার সাথে নিয়ে মাটিতে রাখা হোক? এটাতো সে ডিজার্ভ করে! এবং সে পরশটুকু আমরা দিতে চাই।

এটা শুধু গ্রাজুয়েট না, মাস্টার না, আর্ডেন্টিয়ার না। সর্বসাধারণের জন্যে!

এটা শুধু গ্রাজুয়েট না, মাস্টার না, আর্ডেন্টিয়ার না। সর্বসাধারণের জন্যে! আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব যে মারা যায় যার গোসল করানোর প্রয়োজন হয়।

যেমন,এর মধ্যে একজন প্রফেসর মারা গেছেন। তার ওয়াইফ এবং তার মেয়ে! অর্থের অভাব নাই! প্রফেসর তো বোঝেন। অর্থের অভাব নাই!

কিন্তু তার গোসল করানো বা দাফন-কাফন করানোর মতো কেউ নাই! None!

গোসল করানোর পর তার পুরো চেহারায় আভা, একটা তৃপ্তি। কারণ আত্মা একটা সময় পর্যন্ত থাকে…

আমাদেরকে খবর দিয়েছে। আমাদের লোকজন চলে গেছে। এবং তাকে যখন গোসল করানো হলো তার চেহারা খোলতাই হয়ে গেছে। অর্থাৎ পুরো চেহারায় আভা একটা তৃপ্তি।

কারণ আত্মা কিন্তু কী করে? একটা সময় পর্যন্ত থাকে।

আমার শুনে এত ভালো লাগল যে না আল্লাহ প্রত্যেকটা মানুষকে যেন আমরা এই তৃপ্তিটা দিতে পারি।

যে কারো আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব গোসল করানো ফ্রি। আমরা ফরজ দায়িত্বপালন করছি, টাকার অভাব হবে না।

অতএব যে কারো আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব গোসল করানো এবং কাফনের কাপড় পরানো এটা ফ্রি। এটা আমরা ফাউন্ডেশনের আমাদের যে এই ক্ষেত্রে যে ফান্ড আসছে এই ফান্ড দিয়ে আমরা করব।

এবং ইনশাল্লাহ এক্ষেত্রে এইক্ষেত্রে টাকার অভাব হবে? অভাব হবে না। কারণ এটা ফরজ দায়িত্বপালন আল্লাহর একটা হিসাব আছে তো। আমরা ফরজ দায়িত্বপালন করছি টাকার অভাব হবে না।

লাশের কাছ থেকে কি টাকা নেবেন আপনি।

যদি তার আত্মীয়স্বজনরা তাকে কবরস্থ করার জন্যেও উদ্যোগ না নেয়, আমরা করব

এবং যদি তার আত্মীয়স্বজনরা তাকে কবরস্থ করার জন্যেও উদ্যোগ না নেয় আমরা করব। আর যদি তারা নেয় নেবে কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু আমরা গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে দেব। একদম আতর লাগিয়ে যেভাবে যা করতে হয় আমরা করে দেব।

এই কথাগুলো মুখে মুখে ছড়িয়ে দেবেন- পরিচিত যারাই হোক

যখন কেউ মারা যায় কোনো পরিবারের, ঐ সদস্যদের মাথা ঠিক থাকে না। তো এসময় সেই মানুষগুলোর পাশে আমরা দাঁড়াতে চাই।

আসলে যখন কেউ মারা যায় কোনো পরিবারের ঐ সদস্যদের কিন্তু মাথা ঠিক থাকে না। কী করবে না করবে কিচ্ছু ঠিক থাকে না।

তো এসময় সেই মানুষগুলোর পাশে আমরা দাঁড়াতে চাই। যে না ঠিক আছে আপনি চিন্তা করবেন না, গোসলটোসল করানো… কারণ অনেকেই জানে না কোথায় গোসল করানো হবে কী করা হবে না করা হবে। আমরা তাদেরকে সেভাবে সেবা দিতে চাই।

এবং ফ্রি এটা। এটার জন্যে কোনো কোনো ই নাই।

তারপরও কেউ যদি তার বাবার জন্যে তার মায়ের জন্যে দান করতে চায় কিছু সেটা আলাদা জিনিস। কিন্তু এই সেবাটা হচ্ছে টোটালি ফ্রি।

অর্থাৎ আমরা তাকে নিশ্চিত করতে চাই যে যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে কবরে শোয়ানো না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চিন্তার কোনো কারণ থাকবে না

এবং তারপরে ফ্রিজিং ভ্যান আছে। এটা নিয়ে যদি কেউ গ্রামের বাড়িতে যেতে চায় এটার জন্যে তেল খরচ গাড়ির খরচ বাবদ একটা নির্দিষ্ট টাকা থাকবে। সেটা দিয়ে যে-কেউ যে-কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে।

অর্থাৎ আমরা তাকে সব ব্যাপারে নিশ্চিত করতে চাই যে না একবার যদি লাশ ফ্রিজিং ভ্যানে ঢোকে তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে কবরে শোয়ানো না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আর চিন্তার কোনো কারণ থাকবে না। তিনি নিশ্চিন্ত মনে যতদূর খুশি নিয়ে যেতে পারবেন।

তো আমরা করোনাকালের উত্তরণ হচ্ছে আমাদের এই সার্বজনীন দাফন সেবা। সবার জন্যে সেবা।

[আর্ডেন্টিয়ার মিটিং, আইডিইবি, ১৬ নভেম্বর, ২০২০]

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com