টিভি স্মার্টফোনের প্রতি আরও বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে।

লকডাউনে থেকে আমার ১০ বছরের ভাগ্নে টিভি স্মার্টফোনের প্রতি আরও বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে। তার বাবা মাকে যতই সাবধান করতে যাই তারা উত্তর দেন যে বাসায় থেকে কি আর করবে। ছোটমানুষ বন্দী থেকে কষ্ট পাচ্ছে।
এগুলো নিয়ে ভুলে থাক। গুরুজী, ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যদি একটু উপদেশ দিতেন যে কীভাবে তাদের ঘরের ভেতর ব্যস্ত কিন্তু আনন্দেও রাখা যায়? এ ছাড়া টিভি ফোন তাদের হাতের কাছেই থাকে। এ থেকে কীভাবে দূরে রাখব ওদেরকে?
এখনকার বাবা মায়েদের এই একটা সমস্যা। আগে যৌথ পরিবারে শিশুদের দেখাশোনার জন্যে অনেক মানুষ থাকত। বাবা মা-দের অনেকগুলো বাচ্চাকাচ্চা থাকত, তারা নিজেরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকত।
বাবা মাদের টেনশন থাকত কম।
এখন একটা বাচ্চা। পড়ে গেল, না হারিয়ে গেল- কত টেনশন! আমরা কিন্তু বহু আগে থেকে বলছি, যে বাচ্চাকাচ্চা চারটার কম নয়, বেশি হলে ভালো হয়! তো, স্মার্টফোন দিতে হচ্ছে, যে এগুলো নিয়ে ভুলে থাক- এগুলো আসলে বাহানা ছাড়া কিছু না! যে, বাবা মায়েরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, নিজেরাই হয়তো স্মার্টফোন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত।
সন্তানকে সময় দেবেন কিভাবে?
তো, দৃষ্টিভঙ্গি যদি পরিষ্কার থাকত, আসলে এই লকডাউন কোয়ারেন্টিন এগুলোকে অনেক ভালো কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল।
এতদিন হয়তো পেশাগত ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে সময় দিতে পারছিলেন না; এখন প্রচুর সময় পেয়েছেন। উচিত হলো এটাকে সন্তানের বিকাশের কাজে লাগানো।
সন্তান কেন ভার্চুয়াল ভাইরাস নিয়ে পড়ে থাকবে? তাকে বাস্তব জ্ঞানের সুযোগ করে দিতে হবে তো!
আসলে শোষক বেনিয়াদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে এখনকার সন্তানেরা। তাকে কতভাবে কতক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করা যায়- সব উপকরণ নিয়েই তারা তৈরি! কি, গেমস বেরিয়েছে- কিভাবে প্যান কেক বানানো যায়! আরে, এই গেমস খেলে কী শিখবে বাচ্চারা?
আপনি নিজে যখন কেক বানাবেন, তাকে ডেকে দেখিয়ে দিন, যে এভাবে এভাবে এভাবে কেক বানাতে হয়।
তাকে পরিবারের কাজে সম্পৃক্ত করে ফেলুন।
বাজারে যাবার যখন তাকে সঙ্গে করে নেন। তাকে দেখিয়ে দিন, যে এভাবে টাটকা সব্জি চিনে কিনতে হয়। ছোট একটা ব্যাগ তাকেও ধরিয়ে দিন।
রান্নার সময় বাচ্চাকে পাশে রাখুন। খেলাচ্ছলে ছোটখাট কাজ করতে দিন। মানে, বলেন- আসো আমরা আজকে পিকনিক পিকনিক খেলবো! আর কিছু না হোক, একটু পানি আনতে বলুন, দরকারি জিনিসটা এগিয়ে দিতে বলুন।
তবে আদরের সাথে, মমতার সাথে। মানে, তাকে এই ইম্প্রেশন দিন যে, সে কষ্ট করছে না, মজার কোনো খেলা খেলছে। তাহলেই সে কাজে আনন্দ পাবে।
লাভ হলো, সন্তান ব্যস্ত থাকলো, ভার্চুয়াল ভাইরাস নিয়ে পরে থাকার সুযোগ পেল না। আবার পরিবারের সাথে এটাচমেন্টও বাড়লো। কারণ কন্ট্রিবিউশন না থাকলে তো বন্ধন মজবুত হবে না। আর যদি সংসারের কাজে ঘাম ঝরায় তো পরিবারকে সে ‘নিজের’ বলে ভাবতে শিখবে।
আসলে পরিস্থিতি বা ভাগ্যকে দুষে তো লাভ নাই! যখন যেমন সিচুয়েশন তখন সেটাকে নিজের ও পরের কল্যাণে কাজে লাগানোর উপায় বের করতে হবে।
আর স্মার্টফোন কেন বাচ্চাদের হাতের নাগালে থাকবে? বলবেন- দরকারি জিনিস, কাছে রাখতে হয়।
তেলাপোকা বা ইঁদুর মারা বিষ, টয়লেট ক্লিনার- এগুলোও তো দরকারি। কিন্তু এগুলো কি শিশুদের হাতের নাগালে রাখেন, নাকি দূরে, বলেন?
তেমনি স্মার্টফোনকে শিশুদের জন্যে ‘বিষ’ বলে গণ্য করে এগুলো তাদের থেকে দূরে রাখুন। সন্তান অকল্যাণ থেকে বেঁচে যাবে।
আর, সন্তানদের নিয়ে নিয়মিত মেডিটেশন করুন। শুদ্ধাচার পাঠচক্র করুন। শুক্রবার সাদাকায়নে নিয়ে যান। তাদের বয়স অনুযায়ী গল্পের বই এনে দেন।
আসলে এখনকার বাচ্চাদের সমস্যা হলো, তাদের কল্পনাশক্তি কমে যাচ্ছে এই ভিডিও দেখতে দেখতে। আর এখন তো ঠাকুরমার ঝুলি, গোপাল ভাঁড়ের গল্প এগুলোরও নাকি অ্যানিমেশন ভিডিও বের হয়েছে!
তো, বেশি বেশি ভিডিও দেখার কারণেই এখন শিশু-কিশোরদের কল্পনাশক্তি কমে যাচ্ছে।
রূপকথার গল্প কেন ভিডিও দেখে জানতে হবে? আপনি নিজেই তাদের গল্প শোনান। নিজের জীবনের গল্প, ছোটবেলার গল্প শোনান। তাদের কাছ থেকে শুনুন। তাকে গল্প বা কবিতা লিখতে, ছবি আঁকতে উৎসাহিত করুন।
আর, তাদের হাতে কখনো স্মার্টফোন দেবেন না। অনলাইন ক্লাস করতে হলে কম্পিউটারে করার ব্যবস্থা করুন।
আর টিভি দেখার সময়টা নির্দিষ্ট রাখুন। সম্ভব হলে টিভি বক্সের ব্যবস্থা রাখুন।
তবে কোনো অবস্থাতেই ঘরে স্মার্টটিভি রাখবেন না। স্মার্টটিভি দেখতে দেখতে কত ‘স্মার্ট’ জিনিস দেখে ফেলবে আপনি টেরও পাবেন না!
এই কথাগুলোই আপনি বোন-ভগ্নীপতিকে বুঝিয়ে বলুন। ভার্চুয়াল ভাইরাসের যে ভিডিওগুলো আছে সেগুলো দেখান। যে, এই ডিজিটাল ডিভাইস, ফেসবুক-ইউটিউব কিভাবে বাচ্চাদের সর্বনাশ করছে। তারা নিজেরা যখন সচেতন হবে তখন সন্তানদের এগুলো থেকে দূরে রাখার উপায় নিজেরাই বের করে নিতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *