1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২২ অপরাহ্ন

ডায়েটিং যখন প্রাণঘাতী : মারা গেল স্কুল পড়ুয়া কিশোর

  • সময় সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১
  • ১০৫২ বার দেখা হয়েছে

ডায়েটিং যখন প্রাণঘাতী, মারা গেল ১৭ বছরের সামিন!

ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি খুব অনুভূতিপ্রবণ। কাউকে কষ্ট দেওয়া তার স্বভাবে ছিল না। দেখতে ছিল নাদুসনুদুস সুদর্শন। সুন্দর করে কথা বলত – শুদ্ধ উচ্চারণে প্রমিত বাংলায়।

ঘরময় ছড়ানো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই আর দেয়ালে সাজানো ক্লাসে প্রথম হওয়ার স্মারক আর অঙ্কনের পুরস্কার।

স্কুলের ডিবেটিং ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের সদস্য ছিল। খেলাধুলায়ও ছিল ঝোঁক। একবার ক্লাসে ফুটবল টিম গঠনের জন্যে টিচার ছাত্রদের নাম দিতে বললেন।

ছেলেটি নাম দিতে গেল। ‘তুই তো মোটকা! দৌড়াবি ক্যামনে? হাঁটতেই পারস না। আয় আমার সামনে হাঁট!’ এভাবেই তখন উপহাস করলেন ক্রীড়াশিক্ষক।

এরপর ছাত্রদের দিয়ে টেবিল সরিয়ে জায়গা তৈরি করেন। সেখানে কয়েক চক্কর হাঁটালেন। সেটা দেখে সহপাঠীরা মটকু বলে উল্লাস আর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

তাদের অট্টহাসির শব্দে কেউই হয়তো তখন বুঝতে পারে নি নরম স্বভাবের ছেলেটা লজ্জায় কতটা কুঁকড়ে গিয়েছিল সেদিন।

কিশোরমনে এই উপহাস কতটা দাগ ফেলেছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেল মাত্র ১৭ বছর বয়সে যখন আজওয়াদ আহনাফ করিম সামিন নামে ছেলেটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।

সেদিন বাসায় এসে সামিন মাকে বলেছিল, ‘মা’ আমার মারা যেতে ইচ্ছে করছিল যখন তারা ওভাবে হাসছিল’।

এ ঘটনার পর থেকে স্কুলে অনিয়মিত হয়ে গেল ছেলেটি। এক পর্যায়ে ওজন কমাবার জন্যে হন্যে হয়ে উঠল। ইন্টারনেট ঘেঁটে কিটো ডায়েট করা শুরু করে দিল।

জুন মাসে তার ওজন ছিল ৯৩ কেজি। জুলাই থেকে সামিন শুরু করে ডায়েটিং। ডিসেম্বরে তার ওজন দাঁড়ায় ৬০ কেজি। মানে ৩৩ কেজিরও বেশি ওজন কমায় সামিন।

তখনো পরিবার কিছু বুঝতে পারে নি। ভাবছিল যে, ছেলেটা একটু খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই হয়তো ওজন কমছে।

কিন্তু ততদিনে সামিন আক্রান্ত হয়েছে eating disorder এ। কোনোবেলায় সামান্য বেশি খেয়েছে মনে করলে বাথরুমে গিয়ে বমি করে ফেলত।

খেতে যেন না হয় সেজন্যে জানালা দিয়ে খাবার ফেলে দিত।

সারাক্ষণ ভয়ে থাকত যদি ওজন বেড়ে যায়, তাহলে তো আবারো তাকে স্কুলে খ্যাপাবে!

জানুয়ারির শেষদিকে এসে সামিনের কিছু শারীরিক পরিবর্তন নজরে আসে পরিবারের।

তার পায়ের গোড়ালি ফুলে গিয়েছিল, স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গিয়েছিল এবং সে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল।

তখন তাকে প্রথম চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ছেলেটি প্রথম জানায় সে ইন্টারনেট দেখে এই ডায়েট প্রোগ্রামটি অনুসরণ করছিল।

ডাক্তাররা বলেন, সামিন অ্যানারেক্সিয়া নারভোসা নামে অসুখে আক্রান্ত হয়েছে।

অ্যানারেক্সিয়া নারভোসা আহার সংক্রান্ত একটি রোগ, যা ব্যক্তির মধ্যে মানসিক সমস্যাও তৈরি করে।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি না খেয়ে থেকে অথবা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খেয়ে ওজন কমাতে চায় এবং ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভীতিতে ভোগে।

এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলেটিকে একইসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ডায়েটিশিয়ান, সাইেকালজিস্ট এবং সাইক্রিয়াটিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়।

কিন্তু ততদিনে তার ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে গেছে। সেই সঙ্গে তার ওজন দ্রুত কমে যাচ্ছিল।

মে মাসের দিকে তার ওজন দাঁড়ায় ২৯ কেজি।

এদিকে, নিয়মিত চিকিৎসা এবং মনোবিদের সাহায্যে ছেলেটির ওজন কিছুটা বাড়লেও, শেষ পর্যন্ত জুন মাসের শেষদিকে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।

২৫শে জুন তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। মারা যায় সামিন।

 

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com