ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। এরপর ২০১৪ সালে সপ্তম শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তি হই। তখন ১২ বছর বয়স আমার। মা—বাবা অনেক আশা নিয়ে আমাকে ভর্তি করিয়েছিলেন।
শুরু হলো কোয়ান্টা জীবন। প্রথমদিকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও আমি নিজেকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে আমি ভালো রেজাল্ট করে ২০১৯ সালে লামা উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছিলাম। কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজের সাত বছরের শিক্ষাজীবনে আমি যা পেয়েছি সেগুলোই আমার জীবন পরিচালনার দিক-নির্দেশনা হয়ে আছে।
যদিও কোয়ান্টামের ডিসিপ্লিন মেনে চলা অনেক কঠিন, তারপরও এটাই সবচেয়ে ভালো দিক বলে আমি মনে করি। কারণ ডিসিপ্লিন না থাকলে কোনোকিছু করা যায় না। লেখাপড়া, খেলাধুলা, শারীরিক-মানসিক ফিটনেস সবকিছুর একটা ব্যালেন্স করা যায় এই ডিসিপ্লিন দিয়ে।
কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে যে মেডিটেশন আর মনছবি দেখা শিখেছিলাম, সেগুলো আমাকে আজীবন সহযোগিতা করবে। আমি প্রতিদিন সকালে শিথিলায়ন আর বিকেলে মনছবির মেডিটেশন করি। মেডিটেশনে বসে শিথিল প্রক্রিয়ায় যে-কোনো সিদ্ধান্ত আর লেখাপড়ার জন্যে সঠিক রুটিন সহজেই করা যায়। বাইরে আর কোয়ান্টামের পরিবেশের মধ্যে তুলনা করলে আমরা দেখি—শৃঙ্খলার সাথে পড়ালেখা, শারীরিক-মানসিক ও সামাজিকভাবে নিজেকে ফিট রাখা খুবই কঠিন, যা কোয়ান্টামে খুব সুন্দরভাবে শেখানো হয়।
গুরুজী দাদুকে আমার খুব ভালো লাগে। তার সাথে আমার একটা স্মৃতি রয়েছে। আমি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। কোয়ান্টামের নিয়ম হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষার সময় কোয়ান্টারা কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলাতে অংশ নেয় না। আমি ভলিবল খেলোয়াড় ছিলাম। ঐ সময় আমাদের স্কুলে ভলিবল নতুন যুক্ত হয়েছে। অন্য খেলাগুলোতে কসমো স্কুল চ্যাম্পিয়ন হলেও ভলিবলে তখনো ভালো ফলাফল আসে নি। আমি ও আমার দুই বন্ধু এসএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকে আমাদের বাদ দিতে বলা হলো।
কিন্তু আমাদের ভেতর সংকল্প ছিল আমরা জাতীয় আন্তঃস্কুল ভলিবলে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলকে একবার হলেও চ্যাম্পিয়ন করাবই। আমরা নিজেদের উদ্যোগে গুরুজী দাদুকে চিঠি লিখলাম। এর মাঝে তিনি একদিন আমাদের হিকমান ক্যাম্পাসে এলেন। আমাদের সবাইকে ডাকা হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এখানে জেমি কে? আমি বললাম আমিই জেমি। তখন তিনি আমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করে বললেন যে, ‘আপনি আন্তঃস্কুল ভলিবলে অংশ নেন, কোনো সমস্যা নেই। ভালো কিছু হবে।’ আসলে এই শুভকামনার চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না। কাঙ্ক্ষিত সাফল্যও পেয়েছিলাম।
ভলিবলের পাশাপাশি আমি গান গাইতাম। সংগীত চর্চা আমার আরেকটি শখের জায়গা।
বর্তমানে আমি রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগে অধ্যয়ন করছি। এখন মনছবি দেখি—আমি এখানে এই বিষয়ে গবেষণামূলক কাজ করব।
নিজের এলাকা লামা এবং আলীকদমে অবহেলিত মানুষদের নিয়েও আমার মনছবি রয়েছে। নিজের মানুষের কল্যাণ সাধনার এই অনুভূতি ও মনছবি দেখার অনুপ্রেরণাও পেয়েছিলাম গুরুজী দাদুর কাছ থেকে।
[ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘সব সম্ভব’ বই থেকে ]