আনন্দের যে হরমোন ব্রেন সিক্রেশন শুরু করে দেয় যে, আপনি আনন্দে আছেন; এটার জন্যে কিছু কিছু খাবার আছে। কী খাবেন? ডুমুর ডুমুর।
শুনেছেন ডুমুরের কথা? শুনেছেন। ডুমুর খেলে যে আনন্দ হয় এটা শুনেছেন?
এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যেখানে আমি আমার সতর্ককারী পাঠাই নি- সূরা ফাতির, ২৪
এই যে ডুমুর, ডুমুরেরও মজা আছে। আসলে আল্লাহতায়ালা কোরআন শরীফে বলেছেন যে, এমন কোনো জনপদ নাই, যেখানে আমি আমার বাণীবাহককে পাঠাই নাই। রসুল পাঠাই নাই।
তো চিন্তা করলাম যে মানে, আচ্ছা কোথায় আমাদেরও তো এটাও তো দেশ এই দেশতো ঠিক আছে এখানে কোনো নবী-রসুল আসছেন কিনা।
চিন্তা করছি চিন্তা করছি।
প্রতিটি জনপদে নবী-রসুল পাঠানোর উদ্দেশ্য- ‘বর্বর মানুষকে সভ্য করা’
তো তার আগে আবার বলি যে, এক আরবি একদিন বলছে যে, হেই তোমাদের এটা একটা দেশ হলো? কোনো নবী-রসুল আসে নাই, এটা একটা দেশ? তোমরা হচ্ছো মুর্খের দেশ।
তো আমি বললাম যে লুক, নবী-রসুল কোথায় আসে? কেন আসে? বর্বর মানুষকে সভ্য করার জন্যে আল্লাহতায়ালা সবসময় নবী-রসুল পাঠিয়েছেন।
তো তোমাদের দেশে এত নবী-রসুল আসার কারণটা কী? এবং নবীদের তোমরা কী পরিমাণ জুলুম করেছ, কী পরিমাণ অত্যাচার করেছ! হত্যাও করেছ তোমরা নবীদের! মানে তোমাদেরকে মানুষ বানানোর জন্যে আল্লাহর কত পরিশ্রম করেছেন, এত নবী-রসুল পাঠাতে হয়েছে।
আমরা আগে থেকে সভ্য ছিলাম। আগে থেকে ভালো মানুষ ছিলাম। এজন্যে আল্লাহ মানে…
ধরুন মা কোন সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করে বেশি? যে সন্তান অনেক উপার্জন করে তার, না যার উপার্জন কম তার?
যার উপার্জন কম তার। যে ভালো তাকে নিয়ে কিন্তু চিন্তা করে না। চিন্তা করে দুষ্টটা, কোথায় গিয়ে বিপদে পড়ে!
আল্লাহ কত আমাদের ওপরে নির্ভার ছিলেন যে না, এই এই মানুষগুলো খুব ভালো মানুষ। এদেরকে পাঠানোর দরকার নাই!
তো এটা একটা দিক গেল।
শব্দ মনে গাঁথে তখনই যখন কেউ আত্মনিমগ্ন হন!
তো যখন চিন্তা করছি যে এমন কোনো জনপদ নাই, যেখানে তিনি তাঁর বাণীবাহককে পাঠান নাই।
হঠাৎ মানে আসলে তো কিছু কিছু জিনিস ক্লিক করে কখন? যখন আপনি আত্মনিমগ্ন হন তখন।
এমনি তো শব্দ মনে হয় যে শব্দ। কিন্তু সবসময় শব্দ কিন্তু ক্লিক করে না।
আপনি শুনে যাচ্ছেন শুনে যাচ্ছেন শুনে যাচ্ছেন। একবার হঠাৎ মনে হবে যে আরে, এই জিনিসটা তো এভাবে চিন্তা করি নাই।
ধরুন একটা বই ভালো বই। টলস্টয়। টলস্টয়ের গল্প তার উপন্যাস তার আনা কারনিনা। পড়লে মনে হয় যে আরে যে এই জিনিসটা তো এর আগে খেয়াল করি নাই।
কারণ একটা ভালো বইয়ের সবটুকু সবসময় চোখে পড়ে না একেক সময় একেকটা বাক্য একেকটা শব্দ মনে গাঁথে। চোখে তো পড়ে সবই। মনে গাঁথে কিন্তু একেক সময় একেকটা।
বাংলাদেশি জলপাই আরবে গিয়ে হয়ে গেল যাইতুন…
একবার সূরা ত্বীন পড়ছিলাম। ওয়াত্বীন ওয়াযযাইতুন ওয়াতুরে সিনি না ওয়া হাজাল বালাদিল আমিন। তো হঠাৎ মনে হলো যে আরে ওয়াত্বীন ওয়াযযাইতুন ওয়াতুরে সিনি না।
ওয়াত্বীন ত্বীন মানে হচ্ছে ডুমুর ওয়াত্বীন ওয়াযযাইতুন। ওয়া যাইতুন মানে হচ্ছে জলপাই।
আরে জলপাই! বাংলাদেশি জলপাই আরবে গিয়ে যাইতুন হয়ে গেল। সাইজে ছোট হলো। যাইতুন হয়ে গেল, যাহ।
অর্থাৎ আমাদের অনেকের যখন হুজুগ ওঠে বা আরবি যখন শুনি সবচেয়ে মজা হয়েছিল উট দেখে। ১৯৭৪ সালে বাইতুল মোকাররমের সামনে উট এলো রাজস্থান থেকে।
হায় আল্লাহ!
উটের চোনা গামলাতে করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং গ্লাসে করে বিক্রি করা হচ্ছে এবং সে-সময় ৭৪ সনে এক গ্লাস উটের চোনার দাম ১০ টাকা। চিন্তা করেন এবং লোকজন লাইন ধরে নিচ্ছে খাচ্ছে।
এটা কোনো শোনা কথা না, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ।
এবং কবি শামসুর রহমান ওনাকে গিয়ে যখন বললাম যে এই অবস্থা, উনি কবিতাই লিখে ফেললেন।
গরিবী ছাড়তে কারো অসুবিধা হয় না; কিন্তু বড়লোকের বড়লোকি ছাড়াটা সাংঘাতিক কঠিন ব্যাপার!
তো ওয়াত্বীন ডুমুর ডুমুর। আমি দেখলাম যে, যইতুন তো পাওয়া যায় ভূমধ্যসাগরে। অনেক নবী ছিলেন।
ওয়াতুরে সিনি না, সিনাই পাহাড় পাওয়া যায়।
কিন্তু যইতুন, ডুমুর। ডুমুরে তো পাচ্ছি না কাউকে। ডুমুর পড়তে পড়তে পড়তে ডুমুর।
কারণ মহামতি বুদ্ধ আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। তার জীবনী পড়ার চেষ্টা করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি।
যে একজন মানুষ সেই সময়ে এরকম সত্যকে উপলব্ধি করলেন যে দুঃখের কারণ। এই উপলব্ধি সে-সময়ে! এটা তো একটা বিশাল ব্যাপার!
যে একজন মানুষ গরিব থেকে বড়লোক হতে পারে। খুব অসুবিধা হয় না। গরিবী ছাড়তে কোনো অসুবিধা হয় না। রাতারাতি সে বড়লোক হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু বড়লোকের বড়লোকি ছাড়াটা সাংঘাতিক কঠিন ব্যাপার! সাংঘাতিক কঠিন ব্যাপার। যে একজন বিলাসী মানুষ বিলাস ত্যাগ করবে, ডিটাচড হবে, সাংঘাতিক কঠিন ব্যাপার।
‘এই বাচ্চা তো সন্ন্যাসী হবে’- রাজপুরোহিত
আর আমার কাছে বিস্ময় হচ্ছে একজন রাজকুমার। রাজকুমারের আবার মজা আছে।
আপনারা তো জানেন বুদ্ধের কাহিনী। যে তিনি সিদ্ধার্থ। তার আসল নাম তো সিদ্ধার্থ।
সিদ্ধার্থ যখন জন্মগ্রহণ করলেন, তো রাজা রাজপুরোহিতের কাছে নিয়ে গেলেন নাম রাখার জন্যে। কারণ তখনকার দিনে রাজপুরোহিতরাই নাম রাখতেন।
আর তখনকার দিনে পুরোহিত জ্ঞানী যারা তারা আবার জ্যোতিষবিদ্যায় দক্ষ ছিলেন।
তো রাজপুরোহিত পদ্মাসনে বসেছিলেন। তো এখন তার কোলে তো দেয়া হয়েছে।
তো ছোট বাচ্চার পা-তো, পা ঢুকে গেছে এই পদ্মাসনের পায়ের যে প্যাঁচ এই প্যাঁচের মধ্যে। যাহ! এবং প্যাঁচ ছোটানোর জন্যে শেষ পর্যন্ত মানে গুরুকে কী করতে হয়েছে? তার পদ্মাসন থেকে আসন ছাড়তে হয়েছে। তারপরে বাচ্চাকে তোলা হয়েছে।
তো উনি বললেন যে, দেখুন মহারাজ, এই বাচ্চাকে তো আপনি রাখতে পারবেন না। এই বাচ্চা তো সন্ন্যাসী হবে।
তো রাজা কি নিজের সন্তানকে সন্ন্যাসী বানাবেন কখনো! রাজার অত মাথা খারাপ হয় নি।
অতএব তার জন্যে সে যাতে সন্ন্যাসী না হতে পারে এজন্যে ভোগবিলাসের যতরকম উপকরণ- তিনটা প্রাসাদ বানালেন তার জন্যে। বর্ষাকালে এক জায়গায়, শীতকালে আরেক জায়গায়, গরমের সময় আরেক জায়গায়, যাতে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষাতে তার বিলাসব্যসনের কোনো অভাব না হয়।
এবং পৃথিবীর কোনোরকম জরাব্যাধি দুঃখ যেন কোনোভাবেই খোঁজ সে না পায়। কিন্তু রাজা কি রাখতে পেরেছিলেন? একরাতে এক কাপড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। নট এ ম্যাটার অব জোক! তার পরিবর্তনটা আসছিল ভেতর থেকে। আকাঙ্ক্ষা ছিল ভেতরে।
শুধু গেরুয়া বসন পরলেই সন্ন্যাসী হওয়া যায় না…
আমরা তো সন্ন্যাসী হতে চাই। মানে একটা গেরুয়া বসন পরে নেই। ভাবি যে, সন্ন্যাসী হয়ে গেছি। অন্তর কিন্তু গৃহীই থেকে যায়।
শুধু গৃহী না, লোভী গৃহী। গৃহীর মধ্যেও তো একটা ই আছে, লোভীগৃহী। কিন্তু কি হয় না? সন্ন্যাস হয় না শুধু পোশাক পরলে।
এক কাপড়ে। চিন্তা করেন নাই যে, খাবেন কী? চিন্তা করেন নাই যে, শীত আসলে পরবেন কী? চিন্তা করেন নাই যে, বৃষ্টিতে এই কাপড় যদি ভিজে যায় তাহলে শীত নিবারণ করবেন কীভাবে?
কোনো চিন্তা ছাড়া চলে গেলেন, বেরিয়ে গেলেন। এবং যতদূর যাওয়া যায়, যাওয়ার পরে গাড়ি যেটা ছেড়ে দিলেন যে, যাও তুমি ফিরে চলে যাও।
নির্জনে হারিয়ে গেলেন।
মনে আনন্দ বাড়াতে মাঝে মাঝেই ডুমুর খান!
এক কাপড়ে চলে গেলেন অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে।
তো ঐখানে পড়তে পড়তে দেখলাম যে, অশ্বত্থ বৃক্ষের সাথে একটা ডুমুরের গাছ ছিল। এবং তখন দেখলাম যে উনি এই ডুমুর খেতেন। খুব বেশি মানে দৌড়াদৌড়ি করতেন না। খুব বেশি খাবারের সন্ধানেও যেতেন না, এই ডুমুর খেতেন।
কেন ডুমুর খেতেন? তখন তো বুঝি নাই।
পুষ্টিবিজ্ঞানের আলোকে দেখলাম যে, যত ফল আছে এর মধ্যে ডুমুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেরেটনিন পাওয়া যায়।
সেরেটনিন হচ্ছে যে মনের ভেতরে আনন্দভাব সৃষ্টি করে। মস্তিষ্কে সেরেটনিনের প্রবাহ যখন বেড়ে যায়, তখন আনন্দভাব সৃষ্টি হয়।
তাহলে হয়তো বা এই ওয়া ত্বীন এটা এই মহামতি বুদ্ধের দিকেই ইঙ্গিত।
তো অতএব যারা একটু আনন্দ বাড়াতে চান ডুমুর খাবেন মাঝে মাঝে।
মেডিটেশনে বসছেন। বসার আগে আচ্ছা একটু ডুমুর খেয়ে নিলেন।
ব্রেনে সেরেটনিনের প্রবাহ একটু একটু বেড়ে গেল। কারণ ফ্রুটস থেকে যে জিনিসটা আসে সেটা হচ্ছে ন্যাচারাল।