আমরা অনেক আগেই বলেছি যে, ভক্ত যখন তৈরি হয় জানার জন্যে জ্ঞানের জন্যে, তখন গুরু নিজেই ধরা দেন। সেই গুরু ব্যক্তিরূপে হতে পারে, বাণীরূপে হতে পারে, গ্রন্থরূপে হতে পারে।
বাইবেলেও খুব চমৎকারভাবে বলা হয়েছে, “তুমি খোঁজো পাবে। অনুসন্ধান করো পাবে।” অনুসন্ধান না করলে পাবেন কোত্থেকে! খুঁজতে হবে, খুঁজলে পাওয়া যাবে।
আমাদের সময় তো ভার্চুয়াল ভাইসের আক্রমণ ছিল না সবকিছুই দুর্লভ ছিল। জ্ঞানও দুর্লভ ছিল তথ্যও দুর্লভ ছিল।
আমাদের সময় তারুণ্যের স্বপ্ন একটাই ছিল যে, অসহায় মানুষের কল্যাণ-মঙ্গল কীভাবে হতে পারে। সমাজের যে অসাম্য এটা কীভাবে দূর হবে।
এই যে আমাদের এখন কী হচ্ছে? ধনী-দরিদ্রের যে বৈষম্য আমাদের ‘অতি ধনী’র সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ‘অতি ধনী’ বাড়লেই বুঝতে হবে যে ‘অতি গরিবের’ সংখ্যা বেড়েছে।
আমাদের সময়ও এই যে বৈষম্য-অনাচার এটা নিয়ে আমরা ভাবতাম।
ভাবতে ভাবতে নীটশের একটা বই পড়লাম। ফ্রেডরিখ নীটশে, দাজ স্পোক জরথষ্ট্র। আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন যে কয়েকটা বই আমাকে প্রভাবিত করেছিল এটি এর মধ্যে একটি!
বিস্মিত হলাম যে, নীটশে হচ্ছেন জার্মান দার্শনিক এবং ঊনবিংশ/বিংশ শতাব্দীতে ইউরোপ হচ্ছে দুর্দান্ত প্রতাপে রাজত্ব করছে সারাবিশ্বব্যাপী। এবং জার্মানরা হচ্ছে নাকউঁচু। তারা মনে করে যে তারা আর্য জাতি, পৃথিবীকে শাসন করার জন্যে এসছে।
অবশ্য এই বিভ্রান্তির পেছনে এই বিকৃতির পেছনে নীটশের অবদান কম নয়।
আসলে যখন লেখকরা লেখেন, লেখার ভাষাটা এত চমৎকার হয় যে, একবার পড়লে বোঝা যায় না, অনেকবার পড়লে তখন বোঝা যায় যে আসলে এটার ভেতরে ফাঁক কোথায়।
প্রথম চিন্তা হলো নীটশে জার্মান সে জার্মান একজন দার্শনিক এবং জার্মানির দার্শনিকদের মধ্যে প্রথমসারির দার্শনিক। সে তার বইয়ের নায়ক জরথষ্ট্রকে কেন করলেন! জরথষ্ট্র তো পার্সিয়ান।
তার মানে হচ্ছে ইউরোপে তিনি কোনো নায়ক খুঁজে পান নাই। যদি ইউরোপে কোনো নায়ক খুঁজে পেতেন তিনি লিখতেন নিশ্চয়ই।
‘জরথষ্ট্র বললেন’, (এটাও হচ্ছে যে জরথষ্ট্রের মুখ দিয়ে তিনি বলেছেন) ‘দাজ স্পোক জরথষ্ট্র’ তার কথাগুলোকেই নানানভাবে বলেছেন। এটাকে উপন্যাস বলা যায় দর্শন বলা যায় বা বই বলা যায়, গ্রন্থ বলা যায় সাহিত্য বলা যায়- যা খুশি বলা যায়। এবং জড়বাদ-বস্তুবাদের ব্যক্তিবাদের উদ্ভবের অন্যতম ফ্যাক্টর হচ্ছেন এই নীটশে।
এর মধ্যে কিছু কিছু সুন্দর শব্দ আছে, বাক্য আছে, কথা আছে যেটা দাগ কাটে। এবং তার মধ্যে তার একটি বাক্য, একটা উপলব্ধি মানে সুপারম্যানের যে কনসেপ্ট।
এই কনসেপ্টটা নীটশে নিয়ে এলেন যে, মানুষ তার জৈবিক অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারলেই সুপারম্যান হবে।
তো খুব ভালো লাগল। সুপারম্যান খোঁজা শুরু করলাম যে সুপারম্যান কোথায় পাওয়া যায়!
[সজ্ঞা জালালি, ১৭ জুলাই, ২০১৯]