1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

দান দয়া মায়াই প্রকৃত ধার্মিকের কাজ

  • সময় শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১
  • ৯৬৬ বার দেখা হয়েছে

ধর্ম মানেই মানবিকতা। মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজ করা। নবীজীর জীবনের দিকে তাকালে দেখি, তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধা সহজ সরল মানুষ। মানুষের জন্যে অন্তর থেকে অশ্রু বর্ষণকারী একজন মানুষ। সবার দুঃখ কষ্ট দেখে নিশ্চুপ বসে থাকার মানুষ তিনি ছিলেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুসারীদেরও ছিল দয়া মায়ায় ভরা মন। তাঁরা নিজের ধন সম্পদকে কখনো নিজের মনে করতেন না। মনে করতেন আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া আমানত যার ওপর অধিকার আছে বঞ্চিতের।

হযরত ওসমান (রা.) এর কূপ কিনে নিয়ে সবার কল্যাণে দান করে দেয়ার ঘটনাটি অনেকেই জানেন। নবীজীর (সা.) হিযরতের পর মুসলমান শরণার্থীরা এক সময় দারুণ পানির কষ্টে পড়েন। খরায় সব কূপ শুকিয়ে গেছে। শুধু একটি কূপে পানি আছে। কিন্তু সেটির মালিক একজন নিষ্ঠুর ইহুদী। সে পানি নিতে আসা শরনার্থীদের কাছে অস্বাভাবিক চড়া দাম চাইত। ফলে তারা পর্যাপ্ত পানি নিতে পারতেন না। রাসূলের (সা.) দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ওসমান (রা.) ইহুদীর কাছে কূপ কেনার প্রস্তাব দিলেন।

কিন্তু ইহুদী রাজী হল না। তখন ওসমান (রা.) কূপের অর্ধেক কেনার প্রস্তাব দিলেন। এতে ইহুদী রাজী হল। শর্ত হল একদিন ইহুদী ও একদিন ওসমানের (রা.) কাছে থাকবে মালিকানা। মুসলমানরা তখন ওসমানের (রা.) দিনে পানি নেয়া শুরু করলেন। কারণ হযরত ওসমান (রা.) পানির দাম নিতেন না। এতে ইহুদীর পানি বিক্রি বন্ধ হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে ইহুদী পুরো কূপই ওসমানের (রা.) কাছে বিক্রি করে দিলো।

ওসমান (রা.) ২০ হাজার দিরহামে পুরো কূপ কিনে ওয়াকফ্ অর্থাৎ জনকল্যানে দান করে দিলেন। এই কূপটির নাম ছিল বির রুমা। পরবর্তীতে এটি বির ওসমান নামে খ্যাত হয়েছে। গত ১৪০০ বছর ধরে এটিতে পানি থাকছে। এর আশে পাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খেজুর বাগান হয়েছে। খেজুর বিক্রির আয়ের অর্ধেক হযরত ওসমানের (রা.) নামে ব্যাংক একাউন্টে জমা করে যাচ্ছে সৌদী কৃষি মন্ত্রণালয়। বাকি অর্ধেক এতিম দরিদ্রদের জন্যে ব্যয় হয়।

একাউন্টে জমা হওয়া অর্থ দিয়ে মদীনার কেন্দ্রস্থলে জমি কেনা হবে। পাঁচ তারকা হোটেল বানানো হবে। সেই হোটেলের আয়ের অর্ধেক এতিম দরিদ্রদের জন্যে ব্যয় হবে। আর বকি অর্ধেক জমা হতে থাকবে ওসমান (রা.) ব্যাংক একাউন্টে। একটি কূপ জনকল্যাণে দান করে তার পুণ্য নিশ্চয়ই তিনি আখেরাতে পাবেন। কিন্তু এই কালেও সেই দানের বরকত কত বেড়ে গেছে সেটাই আনন্দের বিষয়।

শুধু ইহকালে ও পরকালে বরকতের জন্যে হলেও যারা নবীজীর (সা.) অনুসারী বলে দাবি করেন তাদের উচিত মানুষের দুঃখে কষ্টে নিশ্চুপ বসে না থেকে সহমর্মিতা নিয়ে এগিয়ে আসা। এই করোনার দুর্যোগকালে অভাবী অসুস্থ কর্মহীন মানুষের পাশে অর্থ, খাদ্য ও অন্যান্য সেবা (যেমন চিকিৎসা সেবা, দাফন সেবা ইত্যাদি) নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত নবীজীর (স.) সকল অনুসারীরই।

এই ভাল কাজে এগিয়ে না এসে যারা এ সময় ঘরে বসে সামাজিক মাধ্যমে গাল গল্প আর আর খাবার পোশাকের ছবি পোস্ট করছেন তারা নিজের বিবেকের কাছে একবার প্রশ্ন করুন, নবীজী এই সময়ে কী করতেন? তাঁর আদর্শ সাহাবীরা এই সময়ে কী করতেন?

কোরবানি দেয়া ওয়াজিব। যার ওপর যাকাত ফরজ তার ওপরই কোরবানি ওয়াজিব। তারপরও অনেকে নানা কারণে এবার কোরবানি দিতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে। অনেক মানুষ একসাথে জড়ো হওয়াটা এখনও নিরাপদ নয়। যদিও স্বাস্থ্যবিধি মেনে একসাথে কাজ করা শুরু হয়েছে। তাছাড়া, গরুর হাটে যাওয়াটাকেও অনেকে নিরাপদ মনে করছেন না।

সেক্ষেত্রে অনেকে ঝুঁকছেন অনলাইন গরু কেনার দিকে। কিংবা অন্য কোথাও অন্য কারও ওপর দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন কোরবানি করার। কিন্তু কে যে কাকে বিশ্বাস করবে আর কে যে কার বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করবে বলা মুশকিল। কারণ করোনাকাল আমাদের ভেতর থেকে অন্য অনেক কিছুর মত বিশ্বাসের ঘনত্বও কমিয়ে দিয়েছে। তাই এটা অনুমান করা খুব শক্ত নয় যে, বাস্তবিক কারণেই অনেকে কোরবানি দিতে পারবেন না। কোরবানি দেবেন না।

সেই অর্থ তারা কী করবেন? আগে থেকে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও সৎ পরিকল্পনা না থাকলে এই অর্থ খারাপ বা কম ভাল কোন খাতেই অপব্যয় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই যাদের কোরবানি দেয়া সম্ভব হবে না, আগে থেকেই কোন সেবা খাতে সেটা দান করার পরিকল্পনা করে রাখা তাদের জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন অভাবী অন্নহীন মানুষের কাছে নগদ অর্থ বা খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া। কিংবা যেসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনায় মৃতদের দাফন/সৎকার করছেন তাদেরকে নগদ অর্থ বা এ্যম্বুলেন্স, ফ্রিজার ভ্যান সরবরাহ করা ইত্যাদি।

তবে এসব অনুদান কিন্তু কোরবানির বিকল্প নয়। কিংবা কোরবানি না দিয়ে সেই অর্থ পুরোপুরি দান করে দিতে বলাটাও এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বরং যারা কোরবানির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মহামারীর এই বাস্তবতায় তা দিতে পারবেন না তাদেরকে সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করা। যারা দেবেন তারা তো স্বাভাবিকভাবেই কোরবানি দেবেন, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দেবেন আশা করি।

একইসাথে আশা করি, তারা কোরবানির জন্যে বরাদ্দ করা বাজেট থেকে কিছুটা দান করবেন ত্রাণ, দাফন ইত্যাদি কাজে। যদি সবাই এটা করেন তাহলে এবার বড় পশু কেনার অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমে যাবে। হ্রাস পাবে লোক দেখানো কোরবানি করার প্রবণতা। বন্ধ হবে মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে ফ্রিজ ভর্তি করার প্রবণতাও।

যাকাতের অর্থ থেকেও করোনার এই সংকট মূহুর্তে আমরা অনুদান দিতে পারি দুঃস্থ অসহায় মানুষদের। ইসলামের যাকাত বিধানে খুব স্পষ্টভাবেই যাকাতের আটটি খাত উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ফকির’ ও ‘মিসকিন’ দুইটি খাত রয়েছে। ফকির এমন মজুর ও শ্রমজীবিকে বলা হয়, যে শারীরিক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষম হওয়া সত্ত্বেও প্রতিকূল অবস্থার কারণে বেকার ও উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে।

ছিন্নমূল মানুষ ও শরণার্থীদেরও ফকির বলা যেতে পারে। আর মিসকিন বলতে বোঝায় বার্ধক্য, রোগ, অক্ষমতা, পঙ্গুত্ব যাকে উপার্জনের সুযোগ হতে বঞ্চিত করেছে অথবা যে ব্যক্তি উপার্জন দ্বারা তার প্রকৃত প্রয়োজন পূরণ করতে অক্ষম এবং আশ্রয়হীন শিশু- এদের সকলকেই।

প্রসিদ্ধ বুযুর্গ হযরত জুন্নুন মিসরী (রহ.) এর একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করি। তিনি একবার হজ করতে গিয়েছেন। আরাফাতের ময়দানে মোরাকাবায় বসে তিনি শুনলেন, এ বছর সর্বপ্রথম হজ কবুল হয়েছে আহমেদ আশফাক নামে দামেস্কের জনৈক মুচির যিনি হজেই আসেন নি। শুনে সাধক কৌতুহলী হলেন। দামেস্কে গিয়ে বহু খোঁজাখুঁজি করে তাকে পেলেন।

তার কাছ থেকে শুনলেন ঘটনা। স্বল্প আয়ের মুচি ৪০ বছর ধরে একটু একটু করে অর্থ জমিয়েছেন হজে যাওয়ার জন্যে। এবার হজে যাওয়ার সব ঠিকঠাক। এমন সময় জানতে পরলেন, তার এক প্রতিবেশী কর্মহীনতার কারণে অন্নহীন দিন কাটাচ্ছেন।

ক্ষুধার যন্ত্রণায় থাকতে না পেরে সেই প্রতিবেশী তার পরিবারের জন্যে অবশেষে এক মরা ছাগলের মাংস নিয়ে আসলেন। তখন হজে না গিয়ে আহমেদ আশফাক তার ৪০ বছরের সঞ্চয় তুলে দিলেন প্রতিবেশীর হাতে। বাস্তবে হজে না গেলেও আল্লাহর ইচ্ছায় তার হজই কবুল হল সবচেয়ে আগে।

লেখক
মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল হালিম হেলালী
প্রখ্যাত মুফাসসির ও বিশিষ্ট ওয়ায়েজ এবং খতিব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com