আমরা অনেকেই হয়তো নামাজ পড়ি, কিন্তু স্রষ্টার সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার অনুভূতির স্তরে পৌঁছতে পারি না। বা রোজা রাখছি কিন্তু তবু যেন কিছু অপূর্ণতা রয়ে যাচ্ছে আমাদেরই ভুলের কারণে যার জন্যে আত্মিকভাবে সে তৃপ্তি অনুভব করতে পারছি না।
আসলে স্রষ্টার কাছে পৌঁছার পথে কিছু বাস্তব নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে পথের যাত্রা সহজ হবে এবং দ্রুত পৌঁছানো যাবে।
অনেক সময় ধর্মকে কঠিন করে ফেলা হয় বা অন্য কারো মুখে শুনে আমরা নির্দিষ্ট কোনো ধর্মাচার পালন করতে উদ্বুদ্ধ হই যা হয়তো নিজের কাছেও পরিষ্কার নয়। এর ফলে ধর্মের সে আলো আমাদের হৃদয় পৌঁছাতে পারে না।
এখন যেহেতু হাদীস শরীফ আমাদের হাতে হাতে, আমরা নিজেরাই দেখে নিতে পারি যে নবীজী আসলে কী করতে বলেছেন কীভাবে করতে বলেছেন।
ধর্ম প্রশান্তির পথ, আলোর পথ। আমরা যত আমাদের নবীজীর বাণী অনুসরণ করতে পারব তত ধর্মের গভীরে আলোর দেখা পাব। এ জন্যে আপনি ধর্মীয় যে আচারগুলো অনুসরণ করেন, যেমন নামাজ আদায়, রোজা রাখা, যাকাত দেয়া, দান করা, কোরবানি করা ইত্যাদি – এই বিষয়গুলো হাদীস শরীফে পড়ে আপনার জ্ঞানকে আরেকটু ঝালাই করে নিন। বা নতুন নতুন পয়েন্টস সংযুক্ত করুন।
প্রিয় নবীর হাত ধরে আপনার ধর্ম সাধনায় যোগ হবে নতুন দিগন্ত নতুন মাত্রা।
একটি বই যখন আপনি পড়ার জন্যে পড়বেন আর যখন বাস্তব জীবনে প্রয়োগের জন্যে পড়বেন, তখন বইটিকে আপনি ভিন্নভাবে উপলব্ধি করবেন। আপনার প্রয়োজনকে অনুভব করে হাদীস শরীফ পড়া শুরু করুন। দেখবেন বই আপনার সাথে কথা বলছে।
একজন মহাপুরুষ, একজন দার্শনিক, একজন সমাজ বিপ্লবী, একজন সফল মানুষ, এক অসাধারণ হৃদয়বান ব্যক্তি এবং পৃথিবীর বুকে শেষ নবী – হযরত মুহাম্মদ (স)। তার প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি তাকে তার পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিল।
তাই তিনি রেখে যেতে পেরেছেন এমন এক বাণী সংকলন যা ১৪০০ বছর ধরে যে-কোনো সংকটে যে-কোনো প্রয়োজনে মানুষকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে। এবং আগামী শত বছরেও দেখাবে।
আজকে পৃথিবীজুড়ে যে অস্থিরতা, ব্যক্তিজীবনে সামাজিক জীবনে পারিবারিক জীবনে যে অস্থিরতা– মানুষ মুক্তি খুঁজছে। কিন্তু কীভাবে খুঁজতে হয় মানুষ জানে না।
পরম করুণাময় তাই সময়ের প্রয়োজনে আমাদের কাছে শেষ নবীকে পাঠিয়েছেন।
নবীজী খুব সহজ ভাষায় সংক্ষিপ্তভাবে এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায় এমন পয়েন্টস আকারে আমাদেরকে তার বাণীগুলো দিয়ে গেছেন। বাংলা ভাষায় সেই বাণীগুলোকে সহজ করে তুলে ধরা হয়েছে হাদীস শরীফ বইয়ে।
এখানে প্রতিটি বাণী প্রতিটি পয়েন্ট যে-কোনো জায়গায় যে-কোনো সময়ে যে-কোনো ক্ষেত্রে শিখে আপনি সাথে সাথে প্রয়োগ করতে পারেন। এবং প্রয়োগ করতে যে খুব কষ্ট হবে তাও নয়। প্রয়োজন একটু চর্চা, একটু নিয়মিত চোখ বুলানো।
আসুন আমরা এই পবিত্র মাহে রমজানে এই নিয়ত করি যে আমরা যেন এই জ্ঞানকে আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি এবং এই হাদীসটি (১৬ নং) স্মরণে রাখি –
সাধারণ বিশ্বাসীর চেয়ে অটল বিশ্বাসীকে আল্লাহ বেশি পছন্দ করেন। প্রতিটি কল্যাণকর কাজে সাহস করে ঝাঁপিয়ে পড়ো। আল্লাহর কাছে তা চাও এবং পাওয়ার জন্যে বিরামহীনভাবে লেগে থাকো। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। কখনো হাল ছেড়ে দিও না। কোনো বিপদ-মুসিবত এলে কখনো বোলো না যে, ‘যদি এটা না করতাম তাহলে এ বিপদ হতো না’। কারণ এই ‘যদি’ শব্দটি বিভ্রান্তির দরজা খুলে দেয়। বরং বলো, ‘আল্লাহ যা নির্ধারিত করেছেন, তা-ই হয়েছে’। (আর ভবিষ্যতে কী করতে পারো, তার পরিকল্পনা করো।)
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম, ইবনে মাজাহ