শুধু জুয়া নয় কিশোর তরুণ-তরুণীর জন্যে আরেক দানব সেটা হচ্ছে গেম ‘ফ্রি-ফায়ার পাবজি’।
এ মাসেরই আরেকটি খবর ফ্রি-ফায়ার পাবজি গেম সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবির হোসেনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার।
তিনি জানান, মুজাহিদ, হামিম ও আবির তিনজন পরস্পর আত্মীয় হওয়ার কারণে তারা একসঙ্গে খেলাধুলা করত। মোবাইল ফোনে সাধারণ গেম খেলতে খেলতে এক পর্যায় ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে।
কয়েক সপ্তাহ আগে মুজাহিদের কাছ থেকে আবির হোসেন ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেমে অ্যাকাউন্টের আইডি ও পাসওয়ার্ড নিয়ে সেটি পরিবর্তন করে।
সে অ্যাকাউন্টে মুজাহিদের ৫০ হাজার টাকা রয়েছে দাবি করে আবির হোসেনের কাছে ফ্রি ফায়ার-পাবজি গেমে অ্যাকাউন্টের আইডি ও পাসওয়ার্ড অথবা টাকা ফেরত চায় মুজাহিদ। আবির হোসেন আইডি ও পাসওয়ার্ড না দেয়ায় বিরোধ শুরু হয়।
ঘটনার দিন হামিমকে নিয়ে মুজাহিদ আবির হোসেনকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। পরে হামিমের বেল্ট খুলে আবিরের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
এরপর পাট দিয়ে বেঁধে ফেলে রাখার পর, আবিরের কাছে থাকা তার মায়ের মোবাইল ফোন থেকে মুজাহিদ আবিরের বাবার কাছে হিন্দি ভাষায় এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
পরে আবিরের বাবা বিষয়টি আবিরের মাসহ স্বজনদের জানায়। স্বজনরা আবিরকে না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করার পাশাপাশি ৯৯৯-এ কল দেওয়া হয়। ফোন কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর মুজাহিদ ও হামিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হত্যার ঘটনা স্বীকার করলে আবিরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
মুজাহিদ ও হামিমের বয়স ১৪ ও ১৫ বছর। আসলে একই বয়সের আত্মীয় খেলার সাথী হয়ে সাথীকে হত্যা করা, আসলে ভার্চুয়াল ভাইরাস তাতে আসক্ত তরুণদের অসহিষ্ণুতা ও নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা কোন পর্যায়ে নিয়ে গেলে এটা সম্ভব, এটা আমরা সহজেই আঁচ করতে পারি।
আর ১৪/১৫ বছরের কিশোর, গেম খেলার একাউন্টে ৫০,০০০ টাকা জমা করে কীভাবে!
আসলে তাদের মা-বাবারা কী করেছেন? তাদের দোষ যতটা তাদের মা-বাবাদের দোষ কি কোনো অংশে কম? ১৪ বছরের কিশোর, ৫০,০০০ টাকা তার হাতে যায় কীভাবে?
অবশ্য আজকাল অনেকের কাছেই ৫০,০০০ বা এক লাখ টাকা কোনো টাকা নয়। তারা অনায়েসেই খরচ করতে পারেন। কারণ তাদের ঐ টাকা কষ্ট উপার্জিত টাকা নয়। শ্রমার্জিত টাকা হলে সন্তানের হাতে টাকা তুলে দেয়ার আগে তারা অবশ্যই চিন্তা করতেন (যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে)!
অবশ্য গেমে আসক্ত কিশোররা যে কী করতে পারে, কিশোরীরা যে কী করতে পারে, আর পারে না তা বলা কঠিন।
৯ই জুলাই দিল্লীর একটি ঘটনাও বলে দেয় যে আসলে শিশুরা কত মারাত্মকভাবে আসক্ত হয়ে গেছে অনলাইন গেমে।
দিল্লির প্রীতবিহার এলাকার ১২ বছরের কিশোর, ফ্রি-ফায়ার অনলাইন মোবাইল গেমের আর্সেনাল, তার অস্ত্রভাণ্ডার সর্বশেষ অস্ত্রশস্ত্রে প্রস্তুত রাখার জন্যে তাদেরকে অর্থ দিয়ে কিনতে হয়।
এবং খেলা অব্যাহত রাখার জন্যে এই কিশোর প্রথমে তার বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে এবং তারপরে তার মায়ের সোনার চেইন চুরি করে ২০ হাজার ইন্ডিয়ান রুপিতে বিক্রি করে।
তারপর সে ভয় পেয়ে যায় যে, সে যে মায়ের অলংকার চুরি করেছে সে ধরা পড়ে যেতে পারে! সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। পালিয়ে গিয়ে কোনো টিকেট না কেটেই দিল্লি স্টেশনে কালিন্দী এক্সপ্রেসে উঠে পড়ে।
যখন ট্রেন আলীগড়ে পৌঁছায় সে প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করতে থাকে।
দিল্লির একটি খ্যাতনামা পাবলিক স্কুলের ক্লাস সিক্সের ছাত্র মধ্যরাতে আলীগড় রেলওয়ে স্টেশনে ঘোরাঘুরি যখন করছিল, তখন একজন প্যাসেঞ্জার বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশকে জানায়।
এবং পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তার বাবার কাছে ফেরত পাঠায়।
কিশোরের বাবা প্রীতবিহারে পারিবারিক ব্যবসা চালান। তিনি লকডাউনের সময় অনলাইন ক্লাস করার জন্যে ছেলেকে মোবাইল ফোন কিনে দেন।
তারপর ছেলে অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে।
আসলে অনলাইনে ক্লাস করার জন্যে কিনে দেয়া মোবাইল ফোন নিয়ে কত মায়ের সন্তান কত মায়ের ছেলে কত মায়ের মেয়ে যে গেম এবং নানা ধরনের অ্যাপসে আসক্ত হয়ে পড়েছে, এই হিসেব কারো পক্ষে দেয়াই সম্ভব নয়।